বোর্নমাউথের জালে ৯ গোল দিয়ে রেকর্ড জয় লিভারপুলের
অ্যানফিল্ডে লিভারপুল যখন বোর্নমাউথের বিপক্ষে ৫-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যাচ্ছে, ইতিহাদে ম্যানচেস্টার সিটি তখন ক্রিস্টাল প্যালেসের সঙ্গে পিছিয়ে ২-০ গোলে। লিভারপুলের জয় নিয়ে এরপর আর কোনো সন্দেহ ছিল না, শুধু দেখার অপেক্ষা ছিল সিটি কী করে।
পেপ গার্দিওলার দল ঘুরে দাঁড়ায় দারুণভাবেই। আর্লিং হলান্ডের হ্যাটট্রিকে দ্বিতীয়ার্ধে একে একে চারটা গোল করে শেষ পর্যন্ত সিটি ম্যাচটা জিতেছে ৪-২ গোলে।
থেমে থাকেনি লিভারপুলও। বিরতির পর আরও ৪টা গোল করে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল ছুঁয়েছে প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়ের রেকর্ডও। এর আগে প্রিমিয়ার লিগে ৯-০ ব্যবধানে জেতার কীর্তি ছিল তিনবার। যার মধ্যে দুইবার জিতেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (১৯৯৫ সালে ইপসউইচ টাউনের বিপক্ষে, ২০২১ সালে সাউদাম্পটনের বিপক্ষে) ও একবার লেস্টার সিটি (২০১৯ সালে সাউদাম্পটনের বিপক্ষে)। আজ সেই রেকর্ডে ভাগ বসাল লিভারপুলও।
একই সময়ে লেস্টার সিটির বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতেছে চেলসি, টমাস টুখেলের দলের হয়ে দুটি গোলই রাহিম স্টার্লিংয়ের।
দুটি ম্যাচই শুরু হয়েছে একই সময়ে। তবে শুরু থেকেই প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স আপদের খেলায় কত বৈপরীত্য! প্যালেসের কাছে ৪ মিনিটের মধ্যেই আত্মঘাতী গোল খেয়ে শুরু সিটির। অন্যদিকে বোর্নমাউথের জালে ৩ মিনিটেই প্রথম গোলটা করা লিভারপুল দ্বিতীয় গোলটাও পেয়ে যায় ম্যাচের ৭ম মিনিটে। গোলদাতা লুইস দিয়াজের পর হার্ভি এলিয়ট। আগের তিন ম্যাচের প্রথম দুটিতে ড্র করার পর তৃতীয়টিতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে হারা লিভারপুল যেন এদিন এক ম্যাচেই সমর্থকদের সব পুষিয়ে দিতে নেমেছিল। বিরতির আগে তাই বোর্নমাউথের জালে আরও একবার করে বল পাঠালেন ট্রেন্ট আলেকজান্ডার-আরনল্ড, রবার্তো ফিরমিনো ও ভার্জিল ফন ডাইক। প্রিমিয়ার লিগে এই প্রথম কোনো ম্যাচের প্রথমার্ধেই ৫ গোল করল লিভারপুল।
ইতিহাদে সিটি ততক্ষণে খেয়েছে ম্যাচের দ্বিতীয় গোলটাও। ২১ মিনিটে কর্নার পেয়েছিল প্যালেস। এবারেচি ইজের ক্রস থেকে উড়ে আসা বলে হেড করে ব্যবধান বাড়ান প্যালেসের সেন্টার ব্যাক জোয়াখিম অ্যান্ডারসন। অবশ্য যে কর্নার থেকে গোলটা হয়েছে, সেটাই বিতর্কিত মনে হয়েছে। সিটির ডিফেন্ডার কানসেলোকে কনুই মেরে ফেলে দেওয়ার ফলেই কর্নারটা পেয়েছিল প্যালেস। ওখানে আসলে সিটির ফ্রি-কিক পাওয়ার কথা ছিল, প্যালেসের কর্নার নয়। ২০১০ সালের পর নিজের মাঠে প্রিমিয়ার লিগের কোনো ম্যাচে কখনো এত কম সময়ে দুই গোল খায়নি সিটি। অথচ তখন পর্যন্ত ম্যাচে সিটির বলের দখল ৮০ ভাগ, পরে ২-০ গোলে পিছিয়ে থেকে পেপ গার্দিওলার দল যখন বিরতিতে যায় তখন পর্যন্তও বলের দখল ছিল ৭৫ ভাগ!
সেই সিটিই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে বিরতির পর চারবার বল পাঠায় প্যালেসের জালে। ৫৩ মিনিটে বের্নার্দো সিলভা ব্যবধান কমানোর পর ৬২, ৭০ ও ৮১ মিনিটে পরপর তিন গোল করে প্রিমিয়ার লিগে নিজের প্রথম হ্যাটট্রিক পেয়ে যান আর্লিং হলান্ড।
বোর্নমাউথের সঙ্গে লিভারপুলের দাপুটে জয় অবশ্য অনুমিতই ছিল। এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে উঠে আসা দলটা প্রথম তিন ম্যাচে খেয়েছে ৯ গোল (ভিলা ২-০, সিটি ৪-০, আর্সেনাল ৩-০), করতে পারেনি একটিও। তবে আজ লিভারপুল একেবারে ছেলেখেলা করেছে ওদের নিয়ে। এই মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে এত একতরফা ম্যাচ আর দেখা যায়নি।
বিরতির পর নেমেই বোর্নমাউথ একটা আত্মঘাতী গোলও খেয়ে বসে। ওই গোলটা নিশ্চিত হতে অবশ্য ভিএআরের সাহায্য নিতে হয়েছে। ফিরমিনো ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় ও দলের সপ্তম গোলটা করেন ম্যাচের ৬৩ মিনিটে। কিন্তু এদিন লিভারপুল যেন থামতেই চাইছিল না। বদলি নামা ফ্যাবিও কারভালহো ৮-০ করেন ৮১ মিনিটে, ৮৫ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোলটা করে ৯-০ করেন লুইস দিয়াজ।