রিয়াল মাদ্রিদ ১-০ ইউনিয়ন বার্লিন
পাঁচ বছর আগেও খেলেছে জার্মান ফুটবলে দ্বিতীয় বিভাগে। এরপর ইউনিয়ন বার্লিনের উঠে আসাটা বিষ্ময়কর। বুন্দেসলিগা টু থেকে বুন্দেসলিগায়, এরপর ইউরোপে কনফারেন্স লিগের পর ইউরোপা লিগ হয়ে আজ চ্যাম্পিয়নস লিগে! আরও অবাক করা বিষয়, এসবই হয়েছে টানা মৌসুমে!
ইউনিয়ন সমর্থকদের জন্য আজকের ম্যাচটি নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক। চ্যাম্পিয়নস লিগে অভিষেক ম্যাচ! সেটাও আবার ইউরোপের এই অভিজাত টুর্নামেন্টে সেরা দল রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে, তাঁদেরই ঘরের মাঠে। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর গগনবিদারী আওয়াজ-ই তো এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা! সেজন্য বার্লিন থেকে এসেছিল ঝাঁকে ঝাঁকে। মাদ্রিদের চত্ত্বর পুয়ের্তো দে সোলেই জড়ো হয়েছিল প্রায় ৫ হাজার ইউনিয়ন সমর্থক। বার্ন্যাবুর গ্যালারিতে আরও প্রায় ৪ হাজার।
ইউনিয়ন সমর্থকদের ইশতেহারে আছে, ম্যাচ শেষ করার আগে কেউ চলে যেতে পারবে না। বার্নাব্যুতে ম্যাচ যত গড়িয়েছে ইউনিয়ন সমর্থকদের বুকের ছাতিও নিশ্চয়ই আরও চওড়া হচ্ছিল। বেরসিক জুড বেলিংহাম! যোগ করা সময়ে গোল করে হৃদয় ভেঙেছেন ইউনিয়ন বার্লিন সমর্থকদের। আর রিয়ালকে পয়েন্ট খোঁয়ানো থেকে এনে দিয়েছেন পূর্ণ ৩ পয়েন্ট। ১-০ গোলের জয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে নতুন মৌসুমে শুভসূচনা করল রিয়াল মাদ্রিদ। আসলে বেলিংহামে রক্ষা পেল! ৬ ম্যাচে এ নিয়ে ৬ গোল করলেন গত মাসে রিয়ালে অভিষিক্ত এই ইংল্যান্ড মিডফিল্ডার।
রিয়াল গোল খুঁজে হয়রান হলে বেলিংহাম ত্রাণকর্তা হয়ে দাঁড়ানোর একটা অভ্যাস গড়ে তুলছেন যেন! সেল্তা ভিগোর বিপক্ষে গোল করেছেন ৮১ মিনিটে, হেতাফের বিপক্ষে ৯৫ মিনিটে এবং আজ করলেন ১ মিনিট আগে। ম্যাচের তিখন ৯৪ মিনিট। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বদলি হয়ে নামা ফেদে ভালভের্দের শট বক্সে জটলার মধ্যে ডিফেন্ডারদের গায়ে লেগেছিল, আর বল ঠেকাতে ডাইভ দিয়েছিলেন ইউনিয়ন বার্লিন গোলকিপার ফ্রেদেরিক রোনো। এই সুযোগে ফাঁকা পোস্টে গোল করেন বেলিংহাম। এর আগে রিয়ালের হয়ে লা লিগা অভিষেকে গোল পেয়েছিলেন, এবার চ্যাম্পিয়নস লিগও বাদ গেল না! রিয়ালের হয়ে এর আগে ইংলিশ খেলোয়াড়দের মধ্যে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগে অভিষেকে গোল পেয়েছেন শুধু লরি কানিংহাম।
দূর্ভাগ্যও দেখেছে কার্লো আনচেলত্তির দল। বিরতির পর ২বার ইউনিয়নের পোস্ট কাঁপিয়েছে রিয়াল। ৫১ মিনিটে ডান প্রান্ত দিয়ে বক্সে ঢুকে ভলি করেছিলেন রদ্রিগো। ইউনিয়ন গোলকিপার রনো রুখে দেওয়ার পর ফিরতি বলে লুকাস ভাসকেজ আবারও পাস দেন ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গারকে। এবার সাইড-ভলি মেরেছেন পোস্টে! প্রথমার্ধে ঢিমেতালে খেলার পর রদ্রিগোর টানা দুটি শটে বার্নাব্যুর ভরা গ্যালারি নিশ্চয়ই জুড বেলিংহাম-লুকা মদরিচদের জেগে ওঠার স্বপ্ন দেখেছে। জাগেনি যে তা নয়, যা খেলার খেলেছে দ্বিতীয়ার্ধেই। ৬৩ মিনিটে রদ্রিগোর ক্রস থেকে হোসেলুর হেড ইউনিয়নের বাঁ পোস্টে লেগে লক্ষ্যভ্রষ্ঠ হয়।
গোল করতে যা যা করা সম্ভব , বিরতির পর বেশির ভাগ সময় সেই চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি রিয়ালের খেলোয়াড়েরা। মদরিচ, অঁরেলিয়ে চুয়ামেনি ও এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গার মাঝ মাঠ টপকে ইউনিয়ন রিয়ালের বক্সে ঢুকতে পেরেছে কালেভদ্রে। ইউনিয়ন নিজেদের বক্সে বেশির ভাগ সময় ৭-৮ জন নিয়ে আল্ট্রা-ডিফেন্সিভ খেলেছে। আর ডিফেন্ডারদের এই জটলার ভেতরে গিয়ে বার বার খেই হারিয়েছেন রদ্রিগো-হোসেলুরা। বেলিংহাম ভলি করেছেন বক্সের ভেতর থেকে, গোলকিপার রোনোয় ইউনিয়নের রক্ষা, দুরপাল্লার শট নিয়েছেন, তাতেও কাজ হয়নি। রদ্রিগো ও হোসেলু বক্সে জটলার ভেতর থেকে বেশ কয়েকবার গোলের চেষ্টা করেন শট নিয়ে কিংবা হেডে, ভাগ্য-ই যেন সহায় হচ্ছিল না!
রিয়ালকে প্রথমার্ধে ভুগিয়েছে আক্রমণভাগ। ২০০৯ সালের পর করিম বেনজেমাকে ছাড়া চ্যাম্পিয়নস লিগে এই প্রথম নতুন মৌসুম শুরু করতে হচ্ছে। চোটের কারণে ভিনিসিয়ুসও নেই। প্রথমার্ধে আক্রমণে গতির অভাবে ভুগেছে রিয়াল। হোসেলু, বেলিংহাম ও রদ্রিগো ধীরেসুস্থে ইউনিয়নের বক্সে ঢোকার চেষ্টা করেছেন। ৩ মিনিটে হেডে গোলের দারুণ সুযোগ নষ্ট করেন হোসেলু। এর এক মিনিট আগে দারুণ ক্রস থেকে গোলের সুযোগ হারান ইউনিয়নের কেভিন বেহরেনস।
পুরো ম্যাচে ৭৫ শতাংশ সময় বল দখলে মাত্র ৭টি শট পোস্টে রাখতে পেরেছে রিয়াল। ইউনিয়ন বার্লিন একটি শটও পোস্টে রাখতে পারেনি।