২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

পেলের ১০ স্মরণীয় ‘১০ নম্বর’ জার্সি

১০ সংখ্যাটি মাহিমান্বিত হয়েছিল পেলের পিঠেইফাইল ছবি: এএফপি
পেলের আবির্ভাবের আগে ‘১০’ নম্বর জার্সি ছিল নিতান্তই একটা সংখ্যা। কিন্তু পেলের আবির্ভাবের পর এই ‘১০’ সংখ্যাটি অন্য রকম এক মহিমা পেয়েছে। ফুটবলে ১০ নম্বর জার্সি পরে খেলেছেন অনেক কিংবদন্তিই। ডিয়েগো ম্যারাডোনা এই ১০ নম্বর জার্সিকে নিয়ে গেছে অন্য উচ্চতায়। পেলে, ম্যারাডোনা ছাড়াও লিওনেল মেসি, মিশেল প্লাতিনি, ইয়োহান ক্রুইফ, ফেরেঙ্ক পুসকাস, রবার্তো ব্যাজ্জো, জিনেদিন জিদান, রোনালদিনিওরা পরেছেন ১০ নম্বর জার্সি। তবে ইতিহাসে পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যায়, ১৯৫৮ বিশ্বকাপে পেলে নামের ১৭ বছর বয়সী এক ছেলেই ১০ নম্বর জার্সিকে প্রথমবারের মতো সবার নজরে নিয়ে আসেন। এর পর থেকেই ১০ নম্বর জার্সি আর পেলে সমার্থক। ব্রাজিলীয় কিংবদন্তির বিখ্যাত ১০টি ‘১০ নম্বর’ জার্সি নিয়েই এই লেখা...

প্রথমবারের মতো ‘১০’ পরে খেলা, ১৯৫৭

তখনো তিনি মূল দলে সুযোগ পাননি। সান্তোসের জার্সিতে তাঁর অভিষেক হয় ব্রাজিলের আরেক ক্লাব করিন্থিয়ানসের বিপক্ষে, ১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বরে। দ্বিতীয়ার্ধে তিনি মাঠে নামেন। সে সময় সান্তোসের ১০ নম্বর জার্সি পরতেন ভাসকোনসেলোস। সাও পাওলোর বিপক্ষে এক ম্যাচে তাঁর পা ভেঙে যায়। ১৯৫৭ সালের শুরুতে পেলে সুইডেনের একটি ক্লাবের বিপক্ষে সান্তোসের ১০ নম্বর জার্সি পরে মাঠে নামেন।

১০ নম্বর জার্সি পরে প্রথম বিশ্বজয়, ১৯৫৮

১৯৫৮ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের খেলোয়াড়দের জার্সি নম্বর দিতে দেরি হয়েছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যখন জার্সি নম্বর দেওয়া হয়, তখন দলের ১০ নম্বর জার্সিটি নিয়ে লটারি হয়েছিল। কারণ, এর প্রত্যাশী ছিলেন বেশ কয়েকজন। কিন্তু ভাগ্য শেষ পর্যন্ত ব্রাজিলের ১০ নম্বর জার্সির মালিক হিসেবে খুঁজে নিয়েছিল পেলেকেই। ১৭ বছর বয়সে ব্রাজিল জাতীয় দলের ১০ নম্বর জার্সি পরে মাঠে নামেন পেলে। ৬ গোল করেন, বিশ্বকাপ জেতেন প্রথমবারের মতো। ১০ নম্বর জার্সিও তাঁর নামের অংশই হয়ে যায় চিরদিনের জন্য।

সান্তোসের হয়ে প্রথম বিশ্বজয়, ১৯৬২

১৯৬২ সালে ইন্টার কন্টিনেন্টাল কাপের প্রথম ম্যাচেই জেতে সান্তোস। মারাকানায় সান্তোস সেই ম্যাচ জেতে বেনফিকার বিপক্ষে ৩–২ গোলে। বেনফিকার বিপক্ষে ফিরতি ম্যাচ খেলতে এরপর লিসবন যায় দল। কিন্তু তাদের সুন্দরমতো স্বাগত জানানো হয়নি। বেনফিকা সমর্থকেরা উগ্র আচরণ করেন সান্তোস দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে। যদিও লিসবনের ম্যাচটি সান্তোস জেতে ৫–২ গোলে। পেলে বেশ কয়েকবারই এই ম্যাচটিকে তাঁর ফুটবল ক্যারিয়ারের সবচেয়ে মধুর অনুভূতি হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

যে জার্সিতে রানির সঙ্গে দেখা, ১৯৬৮

১৯৬৮ সালে ব্রিটেনের প্রয়াত রানি এলিজাবেথ ব্রাজিল সফরে গিয়েছিলেন। তাঁর সম্মানে সাও পাওলো একাদশ ও রিও ডি জেনিরো একাদশের মধ্যে একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করা হয়েছিল। পেলের সাও পাওলো দল ম্যাচটি জিতেছিল ৩–১ গোলে। পেলে করেছিলেন একটি গোল। ম্যাচের পর ব্রিটেনের রানির কাছ থেকে পুরস্কার নিয়েছিলেন পেলে। তাঁর পরনে ছিল ১০ নম্বর জার্সিই।

হাজার গোল করলেন যেদিন, ১৯৬৯

ম্যাচটি ছিল ভাস্কো–দা–গামার বিপক্ষে, মারাকানা স্টেডিয়ামে। টুর্নামেন্টটির নাম ছিল রবার্তো গোমেজ পেদ্রোসা টুর্নামেন্ট। পেলের বয়স তখন ২৯। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে থেকেই সবার চোখ ছিল পেলের ওপর। তিনি যে নিজের ক্যারিয়ারের হাজারতম গোলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ভাস্কোর বিপক্ষে সে ম্যাচে পেনাল্টি থেকে ইতিহাস গড়েছিলেন পেলে। গোলটির পর সান্তোসের সতীর্থরা পেলেকে কাঁধে তুলে মাঠ প্রদক্ষিণ করেছিলেন।

তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়, ১৯৭০

১৯৭০ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপে ব্রাজিল দলটিকে বলা হয় স্বপ্নের দল। পেলে ১০ নম্বর জার্সি গায়ে তখন ফর্মের তুঙ্গে। বিশ্বকাপে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে ৪টি গোল করেন পেলে, ছিল ৬টি গোলে সহায়তা। ইতালিকে ফাইনালে ৪–১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ব্রাজিল তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয় করে চিরদিনের জন্য পেয়ে যায় ‘জুলেরিমে ট্রফি’র মালিকানা।

সান্তোসকে বিদায়, ১৯৭৪

১৯৭৪ সালের অক্টোবর মাসে কান্নাভেজা চোখে পেলে বিদায় জানিয়েছিলেন তাঁর আঁতুড়ঘর সান্তোসকে। ১৮ বছর ধরে সান্তোসে খেলেছেন, গড়েছিলেন অজস্র কীর্তি। পন্তে প্রেতার বিপক্ষে ম্যাচের প্রথমার্ধের ২০ মিনিটের সময় তিনি সান্তোসের সঙ্গে তাঁর বাঁধন ছিন্ন করেন। বিদায়ের লগ্নেও সান্তোসের ১০ নম্বর জার্সিটিই ছিল তাঁর গায়ে।

নিউইয়র্ক কসমসেও সেই ১০ নম্বর নিয়েই, ১৯৭৫

১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই নিউইয়র্ক কসমস পেলেকে দলভুক্ত করতে চাচ্ছিল। সে সময় পেলেকে বছরে ১.৪ মিলিয়ান ডলার প্রস্তাব করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের দলটি অবশেষে পেলেকে সই করায় ১৯৭৫ সালে। ম্যানহাটানে তিনি প্রথমবারের মতো কসমসের জার্সিতে খেলতে নামেন ডালাস টর্নেডোর বিপক্ষে। ম্যাচটি ২–২ গোলে ড্র হয়েছিল। পেলে একটি গোল করেছিলেন, তাঁর পাস থেকেই হয়েছিল আরেকটি গোল।

শেষ অফিশিয়াল ম্যাচ, ১৯৭৭

যুক্তরাষ্ট্রেই শেষ অফিশিয়াল ম্যাচটি খেলেছিলেন পেলে। সেটি ছিল এনএএসএল (ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব সকার লিগ) ফাইনাল। সিয়াটল সাউন্ডার্সের সঙ্গে সেই ম্যাচে কসমস জিতেছিল ২–১ গোলে। পেলের সতীর্থ ছিলেন সে ম্যাচে কার্লোস আলবার্তো ও কিংবদন্তি ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। ১৯৮৫ সালে নিউইয়র্ক কসমস যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে। এর আগে অবশ্য তারা লিগ জিতেছিল পাঁচটি।

পেলের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ম্যাচ, ১৯৯০

১৯৯০ সালে পেলের বয়স ৫০ পূর্ণ হয়। ক্ষণটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ব্রাজিলিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন একটি ম্যাচ আয়োজন করে। সেটি ছিল ব্রাজিল ও অবশিষ্ট বিশ্ব একাদশের মধ্যে। ১০ নম্বর জার্সি নিয়ে পেলে ম্যাচটি খেলেছিলেন ৪৩ মিনিট। ম্যাচটি অবশ্য ২–১ গোলে জিতেছিল বিশ্ব একাদশ। পেলের বদলি হিসেবে খেলতে নামা নেতো ব্রাজিলের পক্ষে একমাত্র গোলটি করেছিলেন। বিশ্ব একাদশের পক্ষে গোল দুটি করেছিলেন কার্লো আনচেলত্তি ও মার্কো ফন বাস্তেন।