২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

কলকাতায় এত কিছু, ঢাকায় কেন কিছু নয়?

ঢাকায় আসছেন আর্জেন্টানই গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

এমিলিয়ানো মার্তিনেজ আসবেন বলে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে কলকাতায়। অথচ কলকাতার আগেই যেখানে আসছেন, সেই ঢাকায় এ নিয়ে তেমন কোনো আলোচনাই নেই। কারণ একটাই—বাংলাদেশের সাধারণ আর্জেন্টিনা–ভক্তদের সঙ্গে মার্তিনেজের দেখা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। যা একটু বিস্ময়করই। কারণ, আর্জেন্টিনা ফুটবল দলকে নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের উন্মাদনার কথা জেনে মার্তিনেজই তো নিজের আগ্রহে তাঁর সফরসূচিতে কলকাতার সঙ্গে ঢাকাও যোগ করে নিয়েছেন। অথচ সেই উন্মাদনার সঙ্গেই তো তাঁর পরিচয় হচ্ছে না।

আগামীকাল ভোর ৫টা ১০ মিনিটে বিশ্বকাপে গোল্ডেন গ্লাভজয়ী আর্জেন্টাইন গোলরক্ষকের ঢাকায় নামার কথা। এরই মধ্যে রওনা দিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশে আসতে প্রায় ৩৮ ঘণ্টার যাত্রাপথ। সর্বশেষ বিমানে উঠবেন আমস্টারডাম থেকে, সেখানকার সময় রাত ১১টায়। বাংলাদেশে থাকবেন ১১ ঘণ্টার মতো। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে নেমে বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে ঢাকা থেকে উড়ে যাবেন কলকাতায়।

তা ঢাকায় এই সময়টায় কী করবেন এমিলিয়ানো মার্তিনেজ? যাঁর উদ্যোগে মার্তিনেজ ঢাকা ও কলকাতায় আসছেন, কলকাতার সেই ক্রীড়া উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্তকে ফোন করে জানা গেল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করা ছাড়া ঢাকায় মার্তিনেজের সফরসূচিতে বিশেষ কিছু নেই। মার্তিনেজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন দুপুর ২টায়। এর আগে যাবেন বাড্ডার প্রগতি সরণিতে ফান্ডেডনেক্সট–এর কার্যালয়ে।

ফান্ডেডনেক্সট ডিজিটাল বিজনেস গ্রুপ নেক্সট ভেঞ্চারের একটি প্রতিষ্ঠান। সারা বিশ্বে তাদের ব্যবসা আছে। সেই সূত্রেই এমিলিয়ানো মার্তিনেজের মতো বৈশ্বিক তারকাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ। ফান্ডেডনেক্সটের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মার্তিনেজ ঘণ্টাখানেক সময় কাটাবেন। এমিলিয়ানো মার্তিনেজের ঢাকায় আসা এবং থাকার সব বন্দোবস্ত করছে এই প্রতিষ্ঠান।

কলকাতায় এমিলিয়ানো মার্তিনেজকে নিয়ে যেখানে নানা কিছু করা হচ্ছে, সেখানে ঢাকায় কিছু করা হচ্ছে না কেন? শতদ্রু দত্ত জানালেন, শুরুতে অনেক কিছু করারই পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না বড় কোনো স্পনসর না পাওয়ায়।

আমস্টারডাম বিমানবন্দরে ঢাকায় রওনা হওয়ার অপেক্ষায় মার্তিনেজ
ছবি: শতদ্রু দত্তের ফেসবুক পোস্ট

মার্তিনেজ ঢাকায় আসতে চান জেনে অনেকেই টেলিফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। সবকিছু চূড়ান্ত করতে মাসখানেক আগে শতদ্রু দত্ত ঢাকায় এসে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সভাও করেছেন। কিন্তু সেসবের কোনোটাই ফলপ্রসূ হয়নি।

একসময় পরিস্থিতিটা এমন দাঁড়ায়, বাণিজ্যিক কোনো লাভের আশা বাদ দিয়ে এমিলিয়ানো মার্তিনেজের শুধু ঢাকা ছুঁইয়ে যাওয়াটা নিশ্চিত করাই লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় শতদ্রু দত্তের জন্য। মার্তিনেজ নিজেই বাংলাদেশে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করায় তা করাটা অবশ্য কর্তব্যও ছিল। সমাধান হয়ে এসেছে ফান্ডেডনেক্সট। এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সৈয়দ আবদুল্লাহ জায়েদ জানালেন, এমিলিয়ানো মার্তিনেজের সঙ্গে বিশ্বকাপের পর থেকেই তাদের যোগাযোগ হচ্ছিল। ঢাকা আসতে চাওয়ায় দুইয়ে দুইয়ে চার মিলে গেছে।

কিন্তু এত বড় একজন তারকা তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশে আসছে, এ নিয়ে কোনো প্রচার নেই কেন? আবদুল্লাহ জায়েদ জানালেন, তাদের ব্যবসা পুরো বিশ্বজুড়ে বলে বাংলাদেশে মার্তিনেজের সফর নিয়ে বেশি প্রচার চাননি তারা। তারপরও সাধারণ মানুষ যেন মার্তিনেজকে দেখার সুযোগ পান—এমন একটা অনুষ্ঠান করার কথা ভাবা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তা যে হচ্ছে না, এর কারণ হিসেবে তিনি বললেন, ‘এমিলিয়ানো মার্তিনেজের এই সফরটা মূলত কলকাতাকে কেন্দ্র করে। ঢাকায় খুব কম সময় থাকবেন, তার ওপর আবার এমন লম্বা জার্নি করে আসছেন। পাবলিক প্রোগ্রামের ঝক্কিতে তাই আর যেতে চাইনি।’

কলকাতায় কিন্তু অনেক কিছুই হচ্ছে। ৪ জুলাই দুপুর সাড়ে ১২টায় শতদ্রু দত্ত ইনিশিয়েটিভের উদ্যোগে ‘তাহাদের কথা’ নামে একটা অনুষ্ঠান হবে। যেখানে নিজের জীবন ও ফুটবল সাফল্যের নেপথ্য কাহিনি নিয়ে কথা বলবেন মার্তিনেজ। এই অনুষ্ঠানের জন্য সর্বনিম্ন ৪৯৯ রুপি থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ ২৫ হাজার রুপি দামে সাত ক্যাটাগরির টিকিট বিক্রি হয়েছে। সোয়া লাখ রুপিতে প্লাটিনাম টিকিট কিনেছেন যাঁরা, তাঁরা মার্তিনেজের সই করা জার্সির সঙ্গে তাঁর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন। সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজও।

আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ে অন্যতম বড় ভূমিকা ছিল এমিলিয়ানো মার্তিনেজ
ছবি: রয়টার্স

এই অনুষ্ঠান শেষে মোহনবাগান ক্লাবে যাবেন মার্তিনেজ। সেখানে গ্যারি সোবার্স, পেলে ও ম্যারাডোনার নামে গেটের উদ্বোধন করবেন। পুলিশ কমিশনার একাদশ ও মোহনবাগানের প্রাক্তন খেলোয়াড়দের মধ্যে এক প্রদর্শনী ম্যাচেও থাকবেন দর্শক হিসেবে। মোহনবাগান ক্লাবে মার্তিনেজকে দেখতে ফ্রি টিকিটের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। শনি ও রোববার দুপুর ২টা থেকে ৬টা পর্যন্ত এই টিকিট দেওয়ার কথা ছিল। শনিবার দুই ঘণ্টার মধ্যেই সেই টিকিট শেষ হয়ে গেছে।

কলকাতায় এত কিছু হচ্ছে, ঢাকায় কেন কিছু নয়? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে শতদ্রু দত্ত একটু মন খারাপ করলেন বলেই মনে হলো। বললেন, ‘আমিও তো করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হলো না। বাংলাদেশের প্রতি এমির ভালোবাসার কারণেই শুধু ঢাকার অংশটা হচ্ছে। আমারও বাংলাদেশের প্রতি একটু সফট কর্নার আছে, এটাও একটা কারণ।’

বিশ্বকাপের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার জেতেন এমিলিয়ানো মার্তিনেজ
ছবি এএফপি

কিন্তু যে কারণে এমিলিয়ানো মার্তিনেজ ঢাকায় আসতে চেয়েছেন, সেটাই তো হচ্ছে না। সাধারণ মানুষ তো তাঁকে দেখতেই পারছেন না, আর্জেন্টিনার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের আবেগের সঙ্গেও তো তাঁর পরিচয় হচ্ছে না। শতদ্রু দত্ত তা মেনে নিয়ে বললেন, ‘বাংলাদেশের সব মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এমির দেখা হচ্ছে। উনি খুব ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ। এটা করতে পেরেই আমি খুশি।’