মেসির অবসর নেওয়ার সেই বেদনা এখন মধুর উপলব্ধি
আর্জেন্টিনার কাতার বিশ্বকাপ জয়ের ছয় মাস পূর্ণ হয়েছে গতকাল। এ নিয়ে অ্যাডিডাসের মিনি ডকুমেন্টারিতে কথা বলেছেন লিওনেল মেসি। আর্জেন্টাইন তারকা জানিয়েছেন, পেছন ফিরে তাকালে অতীতের ব্যর্থতাগুলোর জন্য এখন আর তাঁর মন খারাপ হয় না। বিশ্বকাপ জেতায় মেসির সব অতীত ব্যর্থতার অনুভূতিগুলোও পাল্টে গেছে। সেসব দিনের কথা ভেবে এখন বরং আনন্দই লাগে তাঁর।
২০১৬ কোপা আমেরিকা ফাইনালে চিলির কাছে হারের পর আর্জেন্টিনা জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন মেসি। তার আগে আর্জেন্টিনাকে ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি। পরের বছর হেরেছিলেন কোপা আমেরিকা ফাইনালেও, সেই চিলির কাছেই।
২০০৫ সালে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে অভিষেক মেসির। অমিত প্রতিভা নিয়ে আসায় তাঁর হাত ধরে বিশ্বকাপ জিতবে আর্জেন্টিনা, এমন আশা করেছিলেন সমর্থকেরা। ২০০৬ কিংবা ২০১০ বিশ্বকাপে তা হয়নি। ২০১৪ বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠেও হলো না! এরপর টানা দুই কোপা আমেরিকার ফাইনালে হারের হতাশায় জাতীয় দল ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন মেসি। ২০১৮ বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব দিয়ে ফিরেও আসেন। এরপরই জাতীয় দলের হয়ে যেন তাঁর ক্যারিয়ারের ‘দ্বিতীয় অধ্যায়’ শুরু হলো!
কিন্তু শুরুটা হয়েছিল হতাশায়। ২০১৮ বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় ফ্রান্সের কাছে হেরে বিদায় নেয় আর্জেন্টিনা। তবে দেশের হয়ে বড় কিছু জেতার ইচ্ছায় হাল ছাড়েননি মেসি। এরই সুবাদে ২০২১ সালে জেতেন কোপা আমেরিকা, জাতীয় দলের হয়ে তাঁর প্রথম ট্রফি। পরের বছর আর্জেন্টিনার হয়ে জেতেন মহাকাঙ্ক্ষিত বিশ্বকাপ ট্রফিও।
ক্লাব ফুটবলে প্রায় সবকিছুই জিতে নেওয়া সাতবারের এই ব্যালন ডি’অরজয়ী ফুটবলারের ক্যারিয়ারে অপূর্ণতা বলে কিছু নেই। সে জন্যই বিইন স্পোর্টসকে মেসি বলেছেন, ‘ফুটবলে আমি সবকিছুই জিতেছি। কোনো কিছু বাকি নেই।’ কিন্তু সবকিছু জিতে নেওয়ার পর মেসি যখন পেছন ফিরে তাকান, তখন কেমন লাগে? সেই যে হতাশামাখা দিনগুলো, যখন জাতীয় দলকে কিছু জেতানোর চেষ্টা করেও পারছিলেন না—সেসব দিনের কথা এখন ভেবে তাঁর কেমন লাগে?
অ্যাডিডাসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেসি এ নিয়ে প্রথমেই বলেছেন, ‘জাতীয় দলের হয়ে খেলা আমার কাছে সব সময়ই খুব গর্বের ব্যাপার। তবে বাজে সময়ও এসেছে। এমনকি আমি এটাও বলেছিলাম, জাতীয় দলে আর খেলব না। তখন মনের মধ্যে অনেক সন্দেহ দানা বেঁধেছিল।’
এরপর বিষয়টি মেসি ব্যাখ্যা করলেন এভাবে, ‘এখন এটা ভেবে আনন্দ লাগে যে একসময় যা বলেছিলাম, (অবসর ঘোষণা) তার জন্য আমি অনুতপ্ত হয়েছি এবং জাতীয় দলে ফিরে এ সবকিছু জিতেছি। বারবার ব্যর্থ হওয়ার পর অনেকবার শুনেছি, “কখনো হাল ছেড়ো না।” আমার মনে হয়, যে চ্যালেঞ্জ আমি নিয়েছিলাম, তার চেয়ে এটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
মেসির জাতীয় দলের সতীর্থ পাওলো দিবালা, অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার, এমিলিয়নো মার্তিনেজ ও রদ্রিগো দি পলও এই মিনি ডকুমেন্টারিতে কথা বলেছেন। দিবালা, ম্যাক অ্যালিস্টার ও মার্তিনেজ জাতীয় দলে মেসির উপস্থিতি কতটা ইতিবাচক প্রভাব রাখে, সেসব নিয়ে কথা বলেছেন। মিডফিল্ডার দি পল মেসিকে নিয়ে একটু দার্শনিকসুলভ মন্তব্য করেছেন। তাঁর মতে, ‘কখনো হাল ছেড়ো না’—এই কথায় উঠতি প্রজন্মকে উদ্দীপ্ত করতে মেসি সেরা উদাহরণ, ‘তরুণদের জন্য এটাই সেরা উদাহরণ। নিজের স্বপ্ন পূরণে কখনো হাল ছেড়ো না। কারণ, সর্বকালের সেরাকেও (মেসি) ভুগতে হয়েছে, কিন্তু সে হাল ছাড়েনি। তার সঙ্গে এসব সাফল্য ভাগ করে নেওয়াটা আনন্দের এবং আমরা সারা জীবন তা মনে রাখব।’
বিশ্বকাপ জয়ের পর আর্জেন্টাইনদের উৎসব এবং তাদের এই সাফল্য এনে দেওয়া নিজের কাছে কত আনন্দের—এসব নিয়েও কথা বলেছেন মেসি। মিনি ডকুমেন্টারিতে এগুলো ছিল তাঁর শেষ কথা, ‘লোকজন যেভাবে রাস্তায় নেমে উদ্যাপন করেছে এবং সবাই সুখী ছিল...আমি আসলে তাদের এভাবে আনন্দিত করার সুযোগ কখনো হাতছাড়া করতে চাইনি। কিংবা যেন মনে না হয়, চেষ্টাটুকুও করিনি। ক্লাব ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমি সবকিছু জিতেছি। জাতীয় দলের হয়ে পারছিলাম না। জানতাম, আর্জেন্টিনায় ফুটবলকে যে চোখে দেখা হয়, তাতে জাতীয় দলের হয়ে জেতাটা হবে বিশেষ কিছু। ক্যারিয়ারের এই শেষবেলায় এসে এখন সবকিছু জিতে শেষ করার ব্যাপারটা খুব উপভোগ করছি।’
বাংলাদেশ সময় আজ সন্ধ্যায় সাড়ে ৬টায় জাকার্তায় প্রীতি ম্যাচে ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। এই ম্যাচে খেলবেন না মেসি। আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস এর আগে জানিয়েছিল, ছুটি কাটানোর উদ্দেশে ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি খেলবেন না মেসি।