নাপোলির স্টেডিয়াম থেকে যে কারণে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে ম্যারাডোনার ভাস্কর্য
ডিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যুর এক বছর পর ২০২১ সালে ২৫ নভেম্বর নাপোলির স্টেডিয়ামের বাইরে তাঁর একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছিল। নিজেদের স্টেডিয়ামের নামও তত দিনে পাল্টে ডিয়েগো ম্যারাডোনা স্টেডিয়াম রেখেছে নাপোলি।
ইতালির সংবাদ সংস্থা এএনএসএ জানিয়েছে, ভাস্কর্যটি এর নির্মাতাকে ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নাপোলিতে ম্যারাডোনার আরও কয়েকটি ভাস্কর্য আছে। আর্জেন্টাইন কিংবদন্তিকে নেপলসবাসীর হৃদয় উজাড় করা ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবেই মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল।
নাপোলির সিটি কাউন্সিলের বরাত দিয়ে এএনএসএ জানিয়েছে, ব্রোঞ্জের তৈরি ভাস্কর্যটির মূল্য বিচার করে এটি জনসমক্ষে না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্মাতা ডমেনিকো সেপেকে ভাস্কর্যটি ফিরিয়ে দেওয়া হবে। ভাস্কর্যটি বানাতে শুধু কাঁচামাল বাবদই প্রায় ৩০ হাজার ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৪ লাখ টাকা) খরচ হয়েছে বলে জানানো হয়। এর বাইরে অন্যান্য খরচ তো আছেই।
২০২১ সালে নাপোলি শহরের মেয়র গায়েতানো মানফ্রেদি ও ক্লাবটির চেয়ারম্যান অঁরেলিও দি লরেন্তিসের উপস্থিতিতে ডিয়েগো ম্যারাডোনা স্টেডিয়ামের সামনে ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছিল। এখন তা নির্মাতাকে ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় নাপোলির পাশের শহর কাসালনুয়োভোর কাউন্সিল বলেছে, নেপলসবাসী ভাস্কর্যটি না চাইলে তারা কিনতে আগ্রহী।
আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ওলে জানিয়েছে, ভাস্কর্যটি ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ইতালির সংবাদমাধ্যম মাত্তিনো থেকে জেনেছেন ডমেনিকো সেপে। তিনি ভাস্কর্যটি ফেরত নিতে অনিচ্ছুক। যখন এটি সেখানে স্থাপন করা হয়েছিল, শহরের মেয়র ছাড়াও ম্যারাডোনার সঙ্গে নাপোলিতে খেলা লিগজয়ী কয়েকজন সাবেক খেলোয়াড়ও উপস্থিত ছিলেন।
১৯৮৪ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত নাপোলিতে খেলে ক্লাবটিকে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে যান ম্যারাডোনা। এই ক্লাবের হয়ে তিনি দুটি লিগ শিরোপা এবং একটি উয়েফা কাপও জেতেন।
ম্যারাডোনা নাপোলিতে খেলার সময় ক্লাবটির সভাপতি কোরাদো ফেরলাইনোও ভাস্কর্যটি স্থাপনের সময় সেখানে ছিলেন। আর ছিলেন নাপোলির শত শত সমর্থক। ম্যারাডোনাকে স্মরণ করে কেঁদেছেনও অনেকে। তবে ওলে জানিয়েছে, ভাস্কর্যটি এরই মধ্যে নাপোলির স্টেডিয়ামের সামনে থেকে সরিয়ে ডমেনিকো সেপের স্টুডিওতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেপে ভাস্কর্যটি ফিরিয়ে দিতে চান, কিন্তু অনুমতি পাননি।
ওলের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভাস্কর্যটি যখন স্থাপন করা হয়েছিল, তখন কেউ এর দাম নিয়ে কথা বলেননি। এটি তৈরিতে সত্যিই ৩০ হাজার ইউরো খরচ হয়েছে কি না, তা জানতে দুই বছর লেগে গেল নেপলস শহরের কর্তৃপক্ষের। ডমেনিকো সেপে নিজেই এই অঙ্কটা বলেছিলেন।
পরে নেপলসের মিউনিসিপ্যালিটি থেকে এ নিয়ে তদন্ত করে জানান, প্রকৃত খরচ এর চেয়েও বেশি। তাই ফেরত দেওয়াই সমীচীন। ভাস্কর্যটি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব তুলেছিলেন নেপলসের মেয়র গায়েতানো মানফ্রেদি।
গত সপ্তাহে এই প্রস্তাবনায় স্পোর্টস কাউন্সিলর এমানুয়েলা ফেরান্তে সই করলেও বিষয়টি সবাইকে জানানো হয় কয়েক দিন আগে। নেপলসের সিভিল কোড অনুযায়ী, কোনো কিছু দান করা হলে সেটির মূল্য অবশ্যই যিনি দান করলেন, তাঁর আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। সিটি কাউন্সিল তদন্ত করে জানতে পেরেছে, ডমেনিকো সেপের আর্থিক অবস্থা তেমন একটা ভালো নয়।
আর্জেন্টাইন এই সংবাদমাধ্যম অন্য একটি তথ্যও জানিয়েছে, নেপলসের কর্তৃপক্ষ মনে করছে ভাস্কর্যটি নাপোলির স্টেডিয়ামের সামনে স্থাপন করায় এর শিল্পী দ্রুতই বিখ্যাত হয়ে গেছেন এবং সেটি শুধুই ম্যারাডোনার জন্য। তাই এটি নির্মাতাকে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত বলেই মনে করেছে কর্তৃপক্ষ। ডমেনিকো সেপে স্বাভাবিকভাবেই এই সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারেননি। তিনি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন বলে জানিয়েছে ওলে।
এর আগে পরিবারের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে নাপোলির জার্সিতে ম্যারাডোনার ছবি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন আদালত। এদিকে ম্যারাডোনার হাত ধরে সর্বশেষ লিগ শিরোপা জেতা নাপোলি এবার শিরোপা জয়ের দ্বারপ্রান্তে আছে। ২৩ ম্যাচ শেষে নাপোলির পয়েন্ট ৬২। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইন্টার মিলানের চেয়ে ১৫ পয়েন্টে এগিয়ে আছে তারা।