মেসিকে ক্ষমা চাইতে বলায় চাকরি গেল আর্জেন্টিনার ক্রীড়া কর্মকর্তার
লিওনেল মেসিকে ক্ষমা চাইতে বলায় চাকরি খোয়ালেন আর্জেন্টিনার আন্ডার সেক্রেটারি অব স্পোর্টস জুলিও গারো। গত রোববার আর্জেন্টিনা কোপা আমেরিকা জেতার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলটির মিডফিল্ডার এনজো ফার্নান্দেজের পোস্ট করা লাইভ ভিডিওতে তিনি এবং তাঁর সতীর্থদের বর্ণবাদী গান গাইতে দেখা যায়।
সেই গানে ফ্রান্স দলকে নিয়ে অত্যন্ত অপমানজনক ও বর্ণবাদী ভাষা ছিল। সেখানে আর্জেন্টিনা অধিনায়ক লিওনেল মেসি না থাকলেও এ ঘটনায় মেসি ও আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) সভাপতি ক্লদিও তাপিয়াকেও ক্ষমা চাইতে বলেছিলেন গারো। এরপরই তাঁকে বরখাস্ত করেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হ্যাভিয়ার মিলেই।
গারো বলেছিলেন, ‘জাতীয় দলের অধিনায়কের এ জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত। এএফএ সভাপতিরও ক্ষমা চাওয়া উচিত। আমার মনে হয় এটা ঠিক না। এটা আমাদের গৌরবান্বিত দেশকে বাজে পরিস্থিতিতে ফেলেছে।’ গারোর এই মন্তব্য ভালোভাবে নেননি আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মিলেই।
এরপর আর্জেন্টিনা সরকারের অফিশিয়াল এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে গারোকে বরখাস্ত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। সেখানে লেখা হয়, ‘প্রেসিডেন্ট অফিস জানাচ্ছে যে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, টানা দুবার কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা জাতীয় দল কিংবা কোনো নাগরিক কী ভাববে, কী করবে, সেটা কোনো সরকার বলতে পারে না। এ কারণে জুলিও গারো আর্জেন্টিনার আন্ডার সেক্রেটারি অব স্পোর্টসের দায়িত্বে আর থাকছেন না।’
বরখাস্ত হওয়ার পর এক্সে করা পোস্টে গারো দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার কথা যদি কাউকে আঘাত করে, তাহলে দুঃখিত। এটা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। তবে আমি সব সময়ই যেকোনো ধরনের বর্ণবাদের বিরুদ্ধে থাকব।’
মায়ামিতে কোপার ফাইনালে কলম্বিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার এই টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতে আর্জেন্টিনা। এরপর টিম বাসে খেলোয়াড়দের উদ্যাপন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে লাইভ করছিলেন ফার্নান্দেজ, যেখানে ওই বর্ণবাদী গানটি শোনা যায়। অবশ্য বর্ণবাদী গানটি শুরু করার পরপরই লাইভ বন্ধ করে দেন ফার্নান্দেজ। ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল প্রতিপক্ষ ফ্রান্সকে নিয়ে গানটি বানিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা। আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের উদ্যাপনের সময় মেসি টিম বাসে ছিলেন না।
এ ঘটনায় অবশ্য ফার্নান্দেজ ক্ষমা চেয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা পোস্টে ফার্নান্দেজ লিখেছেন, ‘জাতীয় দলের উদ্যাপনে আমার ইনস্টাগ্রাম চ্যানেলে একটি ভিডিও পোস্ট করার জন্য আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাই। এ গানে অত্যন্ত অপমানজনক ভাষা আছে এবং এসব শব্দ ব্যবহারের কোনো অজুহাতই নেই। সব ধরনের বৈষম্যের বিপক্ষে আমি। আমাদের কোপা আমেরিকা উদ্যাপনের উন্মাদনায় পড়ে গিয়েছিলাম বলে ক্ষমা চাই।’
ক্ষমা চেয়েও অবশ্য পার পাচ্ছেন না ফার্নান্দেজ। ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা গতকাল জানিয়েছে, এ ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ফিফার পক্ষ থেকে এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি সম্বন্ধে অবগত আছে ফিফা এবং এ ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। খেলোয়াড়, সমর্থক কিংবা অফিশিয়ালদের যেকোনো প্রকার বৈষম্যমূলক আচরণের কঠোর নিন্দা জানাচ্ছে ফিফা।’ তা ছাড়া এ ঘটনায় ফার্নান্দেজের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলামূলক প্রক্রিয়া শুরু করেছে তাঁর ক্লাব চেলসি।