রোমারিওর সঙ্গে তিক্ততা, রোনালদোর কান্না এবং ভাইয়ের মৃত্যু নিয়ে যা বললেন বেবেতো
ব্রাজিলের ১৯৯৪ বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়কদের একজন বেবেতো। আরেক কিংবদন্তি রোমারিওর সঙ্গে ব্রাজিলের জার্সিতে অসাধারণ এক জুটি গড়ে তুলেছিলেন এই ফরোয়ার্ড। এরপর ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপেও ব্রাজিলের হয়ে খেলেছিলেন বেবেতো। সেবার অবশ্য ফ্রান্সের কাছে হেরে শিরোপা হাতছাড়া করতে হয় ব্রাজিলকে। লম্বা ক্যারিয়ারে অনেক নাটকীয় ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন বেবেতো। বিশ্বকাপে গোলের পর সন্তানের উদ্দেশে ‘বেবি রকিং’ উদ্যাপনের কারণেও আলোচনায় ছিলেন ব্রাজিলের সাবেক এই ফরোয়ার্ড।
গতকাল ছিল সেই বেবেতোর ৬০তম জন্মদিন। এ উপলক্ষে নিজের ক্যারিয়ার ও জীবন নিয়ে ব্রাজিলিয়ান সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবো’কে বিশদ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বেবেতো। সেখানে তিনি রোমারিওর সঙ্গে সম্পর্ক, ১৯৯৮ বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে রোনালদোর কান্না এবং বিমান দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া ভাইকে নিয়ে কথা বলেছেন।
রোমারিওর সঙ্গে সম্পর্কের উত্থান-পতন নিয়ে বেবেতো বলেছেন, ‘এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক। আমাদের দারুণ একটি গল্প আছে। কেউ সেটি মুছতে পারবে না। রোমারিওর প্রতি আমার সব সময় সম্মান আছে। সে এমন একজন, যার জন্য আমার অনেক টান। আপনারা বলেছিলেন, আমাদের মধ্যে সমস্যা আছে। আমরা খেলার সময় কখনো ঝগড়া করিনি। কখনো তর্ক করিনি। শুধু তাকিয়েই আমরা একে অপরকে বুঝতে পারতাম।’
রোমারিওর এমন আত্মিক সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা নিয়ে বেবেতো আরও বলেছেন, ‘এখন আমাদের সম্পর্কে কিছুটা টানাপোড়েন চলছে। তাকে নিয়ে আমি হতাশ। সেটা রাজনৈতিক কারণে। সে আমাকে পোডেমোসে (রাজনৈতিক দল) নিয়ে গিয়েছিল। এরপর সে নিজেই দল ছেড়ে দিল, এমনকি আমাকে বলেওনি। আমি তার জন্য পার্টিতে যোগ দিয়েছিলাম। আমি থেকে যাই এবং স্টেট ডেপুটি নির্বাচিত হই। সে গভর্নর পদপ্রার্থী হয়ে এল। বুঝলাম, জীবন এভাবেই চলে যায়। আমাদের মধ্যে কথা হয়। সে অন্য দলে যোগ দিলেও আমাকে বলেনি।’
১৯৯৪ বিশ্বকাপ জেতার পর ১৯৯৮ বিশ্বকাপেও ফাইনালে উঠেছিল ব্রাজিল। শিরোপা লড়াইয়ে মাঠে নামার আগে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ব্রাজিলের সেই দলটির সেরা তারকা রোনালদো। এ কারণে ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালে তাঁর খেলা নিয়েও তৈরি হয়েছিল শঙ্কা। আরেক স্ট্রাইকার এডমুন্ডোকে শুরুতে একাদশে রেখেওছিলেন ব্রাজিল কোচ মারিও জাগালো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রোনালদোই খেলেছেন, কিন্তু সেদিন নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন রোনালদো।
সেই ঘটনা নিয়ে বেবেতো বলেছেন, ‘জিকো এবং জাগালো এসে আমাকে বলে, “আমরা তোমার পাশে এডমুন্ডোকে খেলানোর কথা ভাবছি।” আমি বলি, “এটা করতে পারো, আমি এরই মধ্যে এডমুন্ডোর সঙ্গে খেলেছি। ভাস্কোতে আমরা খুব ভালো করেছি।” আমি এরপর এডমুন্ডোকে বলি, “তুমি খেলতে যাচ্ছ। আমরা জিতব। আমরা এই শিরোপা রোনালদোকে উৎসর্গ করব।” সে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “আমরা জিতব বেতো।” তার এমন আকাঙ্ক্ষা ছিল। রোনালদো তখন সেখানে ছিল না। সে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়েছিল। একদম পাগলপ্রায় অবস্থা! সেই ঘটনা কখনো ভোলার মতো না। সবাই যখন পোশাক বদলাচ্ছিল, তখন রোনালদো আসে।’
পরের ঘটনার বর্ণনা এভাবে দিয়েছেন বেবেতো, ‘রোনালদো কাঁদতে কাঁদতে এসে জাগালোর সঙ্গে কথা বলল। সে বলল, “জাগালো আমাকে খেলতে দাও। আমি গোটা বিশ্বকাপ খেলেছি। তুমি কি আমাকে ফাইনালে বাইরে রাখবে? এটা কোরো না।” সেবারই প্রথম আমি দুঙ্গাকে মাথা নিচু করে বসে থাকতে দেখেছি। যখন স্টাফ, সিবিএফ প্রেসিডেন্ট ও চিকিৎসকেরা একত্র হলো, আমরা জানলাম, পরীক্ষায় সব ঠিকঠাক এসেছে। তখন আমার পাশে দাঁড়ানো এডমুন্ডো বলল, “আমার জন্য এটাই বাকি ছিল, বেতো।” আমি তাকে বললাম, “শান্ত হও। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে রোনালদো ভালো আছে।”
সাক্ষাৎকারে নিজের ভাইয়ের বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু নিয়েও কথা বলেছেন বেবেতো, ‘আমি তখন প্রাকা সেকাতে ছিলাম। সেখানে অনূর্ধ্ব-২০ দল প্রস্তুতি নিচ্ছিল। প্রতিদিন ভোর চারটায় ঘুম থেকে উঠে বাস ভর্তি করে পাঁচটায় অনুশীলনে যেতে হতো। আমার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করা কঠিন ছিল। আমার ভাইকে আমার সঙ্গে খেলোয়াড়েরা যেখানে থাকে, সেখানে থাকতে দিতে বললাম ফ্ল্যামেঙ্গোকে। এটা আমার জন্য ভালো হবে, আমি আমার ভাইয়ের কাছাকাছি থাকতে পারব। এরপর আমরা একটা ফ্যাশন মলের সামনে থাকতে শুরু করলাম, যেখানে ফ্ল্যামেঙ্গোর খেলোয়াড়েরা থাকত। সেই ঘর খুব ছোট ছিল। কিন্তু ভাইয়ের সঙ্গে থাকা আমার জন্য আনন্দের ছিল। এরপর ১৯৮৪ সালে দুর্ঘটনাটি আমার ভাইকে (নিলটন) কেড়ে নিল। একই দুর্ঘটনায় ফ্ল্যামেঙ্গোর তখনকার ফুটবলার ফিগুয়েইরেডোও মারা যান। এ ঘটনা বলা সব সময় কঠিন। আমার ভাই আমার জন্য সবকিছু ছিল।’