মোরছালিনের গোলে আফগানিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ড্র
খেলার শুরুতেই উত্তেজনা!
মাঠের একটা ফাউলকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হলো দুই দলের দুই ডাগআউট। বাক্য বিনিময় হলো। উত্তেজিত হয়ে লাল কার্ড দেখলেন আফগানিস্তানের কুয়েতি কোচ আবদুল্লাহ আল মুতাইরি ও বাংলাদেশের সহকারী কোচ হাসান আল মামুন। সেই উত্তেজনাটা এরপর মাঠেও থাকল গোটা সময়ই। বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় বৃষ্টিভেজা মাঠে দ্বিতীয় প্রীতি ম্যাচ উত্তেজনা ও রোমাঞ্চ ছড়িয়ে অমীমাংসিতই রইল। পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশ শেখ মোরছালিনের গোলে আফগানিস্তানের ড্র করেছে ১-১-এ।
আফগানিস্তান দলে আজ বেশ কয়েকটি বদল আসবে-এটা আগে থেকেই জানা ছিল। খেলোয়াড় তালিকা হাতে পাওয়ার পর দেখা গেল তিনটি বদল নিয়ে মাঠে নেমেছে তারা। অধিনায়ক ফারশাদ নূর প্রথম ম্যাচে খেলেননি, আজ তিনি নেমেছিলেন, সঙ্গে ছিলেন জাবের শারজা ও ফয়সায় শায়েতেশ। তিনজনের অন্তর্ভুক্তিতে প্রথম ম্যাচের চেয়ে আজ আফগানিস্তান ছিল বেশ শক্তিশালীই। বাংলাদেশ অবশ্য অপরিবর্তিত একাদশ নিয়েই আফগানিস্তানের সঙ্গে টক্কর দিয়েছে, উপহার দিয়েছে ভালো খেলা।
ম্যাচের ৫৩ মিনিটে অমিদ পোপালজাইয়ের কর্নার থেকে জাবের শারজার হেড থেকে করা গোলটি ছাড়া আফগানিস্তানকে সেভাবে আক্রমণেই উঠতে দেয়নি বাংলাদেশ। তারিক কাজী, ইসা ফয়সাল, তপু বর্মণ আর বিশ্বনাথ ঘোষের রক্ষণভাগ ছিল পুরো ম্যাচেই আঁটসাট। মধ্যমাঠে আজ সিনিয়র সোহেল রানা আর অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া ছিলেন অনেক বেশি সপ্রতিভ। রাকিব হোসেন আজও আতঙ্ক ছড়িয়েছেন আফগানিস্তানের রক্ষণে। মোরছালিন তো আজ নিজের তৃতীয় আন্তর্জাতিক গোলটি পেয়েছেন।
ম্যাচের ৬২ মিনিটে রাকিবের কাছ থেকে বল নিয়ে বিশ্বনাথ ঘোষ আফগানিস্তানের রক্ষণকে ফাঁকি দিয়ে বাঁ দিকে যে ক্রসটি ঠেলেছিলেন, সেটি থেকেই গোল করেন মোরছালিন। ১-১ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচটি আজ বাংলাদেশ জিততেও পারত। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই রাকিব নিজের গতি দিয়ে বল নিয়ে ঢুকে দারুণ একটা ক্রস করেছিলেন আফগান গোলমুখে। কিন্তু মোরছালিন মাথা ছোঁয়াতে পারেননি। এর আগে ৩৯ মিনিটে রাকিবের আচমকা এক শট আফগান গোলরক্ষক ফয়সাল আহমেদ হামিদি কোনোমতে রক্ষা করেন।
খেলার শুরুতে আফগানিস্তানের কুয়েতি কোচ মুতাইরি আর বাংলাদেশের সহকারী কোচ হাসান আল মামুনের লালকার্ড দেখার ঘটনাটা ম্যাচের ১৭ মিনিটে। বাংলাদেশের রক্ষণ থেকে আফগানিস্তানের অধিনায়ক ফারশাদ নূরের কাছ থেকে বল কেড়ে সামনের দিকে ঠেলেছিলেন বিশ্বনাথ ঘোষ। রাকিবের কাছে বল গেল আফগানিস্তানের এক রক্ষণভাগের খেলোয়াড় উল্টো ফাউল করে বসেন রাকিবকে। উত্তেজনা ছড়ায় এই ঘটনাই। ডাগ আউটেও সেই উত্তেজনা ছড়ায়। বাংলাদেশের সহকারী কোচ হাসান আল মামুন আর আফগানিস্তানের কুয়েতি কোচের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যও বিনিময় হয়। এর জেরে লাল কার্ড দেখেন দুজনই। তবে আফগানিস্তানের কুয়েতি কোচ বাংলাদেশের ডাগ আউটের দিকে বারবার তেড়ে আসতে থাকেন। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সামাল দেন আফগান কর্মকর্তারা। আফগানিস্তানের কুয়েতি কোচ এতটাই উত্তেজিত ছিলেন যে তিনি তাঁর দলকে মাঠ থেকে উঠে আসার নির্দেশ দেন। যদিও পরে আফগান কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপেই পরিস্থিতির আর অবনতি হয়নি। খেলা শুরু হয় স্বাভাবিক ভাবেই।
কোচের ঘটনাটাই খুব সম্ভবত আফগানিস্তান দলকে কিছুটা মুষড়ে দিয়েছিল। এরপর বাংলাদেশ ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। চালাতে থাকে আফগান সীমানায় একের পর এক আক্রমণ। বাংলাদেশের সীমানার বিপজ্জনক জায়গা থেকে আফগানিস্তানের একটি ফ্রি-কিক আর ৩৯ মিনিটে রাকিবের সেই তীব্র শটটি ছাড়া প্রথমার্ধে বিশেষ কিছু ঘটেনি। দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ নতুন উদ্যমে আক্রমণে নামলেও ৫৩ মিনিটে আচমকাই গোল হজম করে বসে জামাল ভূঁইয়ার দল। অমিদ পোপালজাইয়ের কর্নার থেকে মাথা ছুঁইয়ে গোল করে বসেন জাবের শারজা।
তবে ভালো দিক হলো, গোল খেয়ে বাংলাদেশ হতোদ্যম হয়নি। উল্টো আফগানিস্তানের রক্ষণে চাপ তৈরি করা শুরু করে। প্রচুর আক্রমণ করলেও একটা সুন্দর পাস, কিংবা মোরছালিন, রকিব, জামাল ভূঁইয়াদের নিজস্ব কারিশমার অভাবে কাজের কাজটা হচ্ছিল না। তবে গোল শোধ করে দিতে বেশি সময় নেয়নি বাংলাদেশ। ম্যাচের ৬২ মিনিটে কিছুটা পেছনে নেমে বল ধরে রাকিব ডানপ্রান্তে থ্রু বাড়ান। সেখান থেকে বল ধরে বিশ্বনাথ ঘোষ ক্রস ফেলেন পেছন থেকে দৌড়ে আসা মোরছালিনকে। আজ তিনি আর কোনো ভুল করেননি। বল ঠেলে দেন জালে। ৬৭ মিনিটে জামাল আফগানিস্তানের বক্সে জটলার মধ্যে শট নিলে আফগান ডিফেন্ডার ফারজাদ আতাইয়ের হাতে বল লাগে। কিন্তু সেটি এড়িয়ে যায় রেফারির চোখ। ম্যাচের এই সময়টা ছিল পুরোপুরি বাংলাদেশের। আফগানিস্তানের রক্ষণে চলতে থাকে একের পর এক আক্রমণ।
ম্যাচের ৭৮ থেকে ৮৫ মিনিটের মধ্যে পাঁচটি কর্নার আদায় করে নেয় বাংলাদেশ। এ সময় গোলের সুযোগ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু আসল কাজটা করতে পারেননি কেউই। ম্যাচের একেবারে শেষ দিকে একটি কর্নার থেকে তপু বর্মণের দারুণ হেড আফগান গোলরক্ষক হামিদি কোনোমতে রক্ষা করেন। ম্যাচের বাকি সময় আক্রমণে উঠেছে দুই দলই। তবে আক্রমণ বেশি করেছে বাংলাদেশই। আফগানিস্তানও এ সময় দুটি কর্নার আদায় করে নিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের রক্ষণে ফাটল ধরাতে পারেনি।
অক্টোবরে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের প্রাথমিক রাউন্ডে মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচের আগে প্রস্তুতিটা ভালোই হলো বাংলাদেশের। তবে আফগানদের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচেই আক্ষেপ থেকে গেল। ৪৪ বছর পরেও আফগানদের বিপক্ষে জয়টা যে এলো না!