নেইমার সৌদি আরবে যা করতে পারবেন, যা পারবেন না
দুই বছরের চুক্তিতে সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলালে যোগ দিয়েছেন নেইমার। ইএসপিএন জানিয়েছে আল হিলালে বছরে ১০ কোটি ইউরোর আশপাশে বেতন পাবেন নেইমার। তবে বেতনের অঙ্কটা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি কোনো পক্ষই।
আল হিলালে সই করে ব্রাজিলিয়ান তারকা বলেছেন, ক্রীড়াঙ্গনে নতুন ইতিহাস লিখতেই সৌদি আরবের ফুটবলে নাম লিখিয়েছেন। সে ভালো কথা। তবে সৌদি আরবের জীবনব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে শুরুর দিকে একটু কষ্টই হতে পারে নেইমারের। ব্রাজিলের সংস্কৃতি অনেক খোলামেলা আর নেইমার নিজেও তেমন জীবনধারায় বিশ্বাসী। ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম গ্লোবো জানিয়েছে, নেইমার সৌদি আরবে গিয়ে কী করতে পারবেন আর কী করতে পারবেন না।
প্রথমেই নৈশ পার্টির প্রসঙ্গটা তোলা যাক। নেইমারের পার্টিপ্রীতি কারও অজানা নয়। বার্সেলোনা কিংবা পিএসজিতে থাকতে এমন পার্টি আয়োজন করে নন্দিত হওয়ার পাশাপাশি নিন্দিতও হয়েছেন নেইমার। সৌদি আরবে এমন পার্টির আয়োজন করা তাঁর জন্য কঠিন হবে। কারণ, দেশটিতে মদ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
সৌদি আরবের আইন অনুযায়ী, সেখানে মদ উৎপাদন, বিতরণ ও পান করা নিষিদ্ধ। গ্লোবো জানিয়েছে, অমুসলিমদের জন্যও সেখানে মদ্যপান নিষিদ্ধ এবং অ্যালকোহল–জাতীয় পানীয় নিজের কাছে রাখা ও ব্যবহার করাও অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় সৌদি আরবে। আর এ নিয়ম দেশটিতে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের জন্যও খাটে।
সৌদি আরব লোহিত সাগর ও পারস্য উপসাগর তীরবর্তী দেশ। দৃষ্টিনন্দন সৈকত আছে সেখানে। আর নেইমারের ভক্তমাত্রই জানেন, সৈকত তাঁর ভীষণ প্রিয়। ছুটি পেলেই ব্রাজিলে ফিরে সমুদ্রসৈকতে প্রেমিকা ব্রুনা বিয়ানকার্দিকে নিয়ে সময় কাটিয়েছেন। কিছুদিন আগে সৈকতে অন্তঃসত্ত্বা ব্রুনার বেবি বাম্পের ছবিও প্রকাশ করেছিল এ জুটি।
গ্লোবো নেইমারকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, সৌদি আরবে এমন কিছু করতে হলে সবার আগে নেইমারকে সৈকতে ব্যক্তিগত জায়গা নিয়ে রাখতে হবে। অর্থাৎ, ব্যক্তিগত সৈকত লাগবে নেইমারের। সৌদি আরবে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত সৈকতে এমন কিছু করা নিষিদ্ধ। তবে টাকার বিনিময়ে সৈকতে ব্যক্তিগত জায়গা নিয়ে ইচ্ছেমতো ব্যবহার করা যায়। সেখানে নারী-পুরুষ ভেদাভেদ দেখা হয় না, নারীরা চাইলে বিকিনি পরতে পারেন এবং নিরাপত্তারক্ষীরা সেখানে নারী-পুরুষ একসঙ্গে মেলামেশা করলে বিবাহিত কি না, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন না।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সৌদি আরব নারীদের কিছুটা স্বাধীনতা দিলেও সেখানে তাঁদের জীবন এখনো সহজ হয়ে ওঠেনি। সৌদি আরবে নারীরা এখন গাড়ি চালাতে পারেন এবং ফুটবল ম্যাচ স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখার অনুমতিও মিলেছে। সৌদি আরবে এমনিতে নারীদের কালো কাপড়ের পোশাক ‘আবায়া’ পরতে হয়, যা পুরো শরীর ঢেকে রাখে। এর পাশাপাশি হিজাবও পরতে হয়। সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি সরকার নিয়ম করেছে, বিদেশি নারীদের এ নিয়ম মানা বাধ্যতামূলক নয়। তবে বাস্তবে নিয়মটি এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি।
নেইমার খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী। ২০১৬ রিও অলিম্পিকে ব্রাজিলের হয়ে সোনা জয়ের পথে নেইমারের টি-শার্টে ‘১০০% যিশুর’ লেখা দেখা গিয়েছিল। সৌদি আরবে মুসলিমদের আধিক্য বেশি এবং ইসলাম ধর্মও সেখানে কঠোরভাবে পালন করা হয়। তাই প্রশ্ন উঠেছে, সেখানে গিয়ে নিজের ধর্মবিশ্বাস কতটা ভালোভাবে পালন করতে পারবেন নেইমার?
ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অব রিও ডি জেনিরোর ভূরাজনীতির অধ্যাপক ফার্নান্দো ব্রানকোলি জানিয়েছেন, সৌদি আরবে খ্রিস্টধর্ম পালনে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। এর আগে আল নাসরের পর্তুগিজ তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো গোল করে বুকে ক্রস এঁকেছেন। তখন এ নিয়ে কোনো বিতর্ক হয়নি। তবে ব্রানকোলির মতে, সাধারণ কেউ এমন কিছু করলে বিষয়টি মোটেও স্বাভাবিক চোখে দেখা হতো না, এমনকি শাস্তিও হতে পারে। নেইমার যেহেতু সাধারণ কেউ নন, তাই অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
ইউরোপে খেলা আরও অনেক ফুটবলারই সৌদি আরবে নাম লিখিয়েছেন। করিম বেনজেমা, সাদিও মানে, এনগোলো কান্তে, রবার্তো ফিরমিনো, জর্ডান হেন্ডারসনরা এখন সৌদি প্রো লিগে।
ইউরোপ থেকে আরও অনেক খেলোয়াড়কেই আনার চেষ্টা করছে সৌদি আরব। স্বাভাবিকভাবেই প্রো লিগ বিশ্বখ্যাত তারকাদের ভিড়ে জমজমাট হয়ে উঠলে সৌদি প্রশাসনকে কিছু নিয়ম হয়তো শিথিল করতেই হবে। খেলোয়াড়দের জীবন আরও সহজ করতে, লিগে তারকাদের ভিড় বাড়াতে এতটুকু করতেই পারে সৌদি আরব।