গার্দিওলার সিটিই কি সবচেয়ে বাজে ‘চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে মৌসুম শেষ করবে

গার্দিওলার এই ছবিটিই যেন ম্যান সিটির হতাশাজনক সময়ের প্রতিচ্ছবিরয়টার্স

প্রিমিয়ার লিগে সর্বশেষ ৮ ম্যাচে ৬ হার—ম্যানচেস্টার সিটির নামের পাশে এই পরিসংখ্যান অবিশ্বাস্যই। অথচ এই একই দল গত তিন মৌসুমের কোনোটিতেই লিগে সব মিলিয়ে ৫ ম্যাচের বেশি হারেনি। সর্বশেষ ২০২০-২১ মৌসুমে লিগ জেতার পথে সব মিলিয়ে ৬ ম্যাচ হেরেছিল তারা। অপ্রতিরোধ্য এই দলটিই এবার ১৭ ম্যাচের মধ্যে হেরে বসেছে ৬ ম্যাচ। এমনকি সর্বশেষ ৮ ম্যাচ লিগ ম্যাচে তারা জিতেছে একটিতে। আর সব মিলিয়ে এই ১৭ ম্যাচে সিটির পয়েন্ট ২৭।

এই মুহূর্তে শীর্ষে থাকা লিভারপুলের চেয়ে ৯ পয়েন্টে পিছিয়ে আছে তারা, তা–ও আবার দুই ম্যাচ বেশি খেলে। এমন পরিস্থিতিতে সিটির অন্ধ ভক্তরাও দলটির শিরোপা ধরে রাখার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী কি না, সেই প্রশ্নও আছে।

আরও পড়ুন

যে কারণে সিটির শিরোপা ধরে রাখার সম্ভাবনার চেয়ে কতটা বাজেভাবে দলটি শিরোপা হাতছাড়া করতে পারে, সেই হিসাব-নিকাশই এখন বেশি হচ্ছে। পাশাপাশি অতীতে কোন শিরোপাধারী দল কতটা বাজেভাবে ট্রফি হাতছাড়া করেছে, তার সঙ্গেও চলছে সিটির তুলনা।

এই তালিকায় এখন পর্যন্ত যাদের নাম আছে তারা হলো ২০১৩-১৪ মৌসুমের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমের ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স, ২০১৫-১৬ সালের চেলসি এবং ২০১৬-১৭ মৌসুমের লেস্টার সিটি। চ্যাম্পিয়ন হিসেবে মৌসুম শুরু করে বড় ব্যবধানে বাজেভাবে শিরোপা বঞ্চিত হয়েছে এ দলগুলো। চ্যাম্পিয়নদের বাজে সেই ইতিহাসের তুলনায় সিটি এখন কোথায় আছে জানা যাক।

হলান্ডের হতাশা
এএফপি

চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শুরু করে পয়েন্ট তালিকায় বাজে অবস্থান
লেস্টার সিটি (২০১৬-১৭): ১২তম

২০১৫-১৬ মৌসুমে লেস্টারের প্রিমিয়ার লিগ জেতা ছিল অলৌকিক এক ঘটনা। মৌসুম শুরুর আগে কেউ প্রত্যাশাই করেনি লেস্টার লিগ জিততে পারে। কিন্তু সেবার সব বাজির দরকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে লিগ জিতে নেয় লেস্টার। কিন্তু লেস্টারের সেই সাফল্য ছিল ‘ওয়ান সিজন ওয়ান্ডার’ই। যার প্রমাণ পাওয়া যায় ঠিক পরের মৌসুমে। লিগ জিতিয়ে অমরত্ব পাওয়া কোচ ক্লদিও রানিয়েরি ছাঁটাই হন ফেব্রুয়ারিতেই। আর ‘দ্য ফক্সেস’ খ্যাত ক্লাবটি মৌসুম শেষ করে ১২ নম্বরে থেকে।

আরও পড়ুন

শেষ দিকে টানা কিছু ম্যাচ জিততে না পারলে অবনমন অঞ্চলেও চলে যেতে পারত দলটি। এরপরও অবশ্য শিরোপা জেতা দল হিসেবে পরের মৌসুমে সর্বনিম্ন অবস্থানে থেকে লিগ শেষ করে দলটি। সেবার অবশ্য সব মিলিয়ে ১৮ ম্যাচ হেরেছিল লেস্টার, আর জিতেছিল ১২ ম্যাচে। সিটির জন্য অবশ্য এর চেয়ে খারাপ করা কঠিন। তা ছাড়া মৌসুমের শুরুটাও সিটির একেবারে খারাপ ছিল না। প্রথম ৯ ম্যাচে ৮টিই জিতে নিয়েছিল তারা, যা হয়তো শেষ পর্যন্ত লেস্টারের ওপরেই রাখবে সিটিকে।

বের্নার্দো সিলভাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন গার্দিওলা
রয়টার্স

নতুন চ্যাম্পিয়নের সঙ্গে পয়েন্টের পার্থক্য
লেস্টার সিটি (২০১৬-১৭): ৪৯ পয়েন্ট

এখানেও বিব্রতকর রেকর্ডটা লেস্টারের। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নস হিসেবে মৌসুম শুরুর পর লেস্টার ২০১৬-১৭ মৌসুমে শেষ পর্যন্ত পায় ৪৪ পয়েন্ট। অন্যদিকে সেবার চ্যাম্পিয়নস হওয়া চেলসির পয়েন্ট ছিল ৯৩। অর্থাৎ বর্তমান ও সাবেক চ্যাম্পিয়নের পয়েন্টের পার্থক্য ছিল ৪৯। পয়েন্টের এত বড় ব্যবধান নিয়ে আর কোনো চ্যাম্পিয়ন দল এভাবে মুখ থুবড়ে পড়েনি। এদিকে চলতি মৌসুমে ১৭ ম্যাচ শেষে সিটির পয়েন্ট ২৭। শীর্ষে থাকা লিভারপুলের চেয়ে ৯ পয়েন্টে পিছিয়ে তারা। তবে চ্যাম্পিয়ন যেই হোক, এই রেকর্ডের দিক থেকে সিটি আপাতত নিরাপদেই আছে।

আরও পড়ুন

 আগের মৌসুমের সঙ্গে পয়েন্টে সবচেয়ে বড় পার্থক্য
চেলসি (২০১৫-১৬): -৩৭ পয়েন্ট (৮৭ থেকে ৫০) লেস্টার (২০১৬-১৭): —৩৭ (৮১ থেকে ৪৪)

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরের মৌসুমে পয়েন্ট হারানোর দিক থেকেও সবার ওপরে আছে লেস্টারের নাম। এই তালিকায় লেস্টার অবশ্য নিঃসঙ্গ নয়। তাদের সঙ্গে আছে চেলসিও। ২০১৫-১৬ মৌসুমে আগের মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন চেলসি ৩৭ পয়েন্ট হারিয়েছিল। ৮৭ পয়েন্ট থেকে নেমে এসেছিল ৫০–এ।

আর দুই মৌসুম পর একই পরিণতি হয়েছিল লেস্টারের। ৮১ থেকে নেমে এসেছিল ৪৪–এ। আর পার্থক্য ছিল চেলসির মতোই ৩৭ পয়েন্টের। হতাশাজনক এই রেকর্ড থেকে বাঁচতে গত মৌসুমে ৯১ পয়েন্ট পাওয়া সিটিকে ন্যূনতম ৫৫ পয়েন্টে মৌসুম শেষ করতে হবে। অর্থাৎ পরের ২১ ম্যাচে সিটিকে পেতে হবে ২৮ পয়েন্ট। সিটির বর্তমান পারফরম্যান্সকে বিবেচনায় নিলে কাজটা কঠিনই মনে হচ্ছে।

গোল কমে যাওয়া
চেলসি (২০১০-১১): -৩৪ (১০৩ থেকে ৬৯)

২০০৯-১০ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে ১০৩ গোল করেছিল চেলসি। সেই একই দল পরের মৌসুমে করেছিল ৬৯ গোল। অর্থাৎ দুই মৌসুমের গোলের পার্থক্য ছিল ৩৪। এদিকে গত মৌসুমে সিটি গোল করেছিল ৯৬টি। আর চলতি মৌসুমে ১৭ ম্যাচে এখন পর্যন্ত করেছে ৩১ গোল। এখন চেলসির চেয়ে ভালো অবস্থানে থাকতে হলে সিটিকে পরের ২১ ম্যাচে করতে হবে ৩২ গোল।

আরও পড়ুন

১৭ ম্যাচ পর অবস্থা

১৭ ম্যাচে ৬ হারের পর সিটি বর্তমানে পয়েন্ট টেবিলের ৬ নম্বরে আছে। গত মৌসুমে লিগে প্রথম ১৭ ম্যাচ শেষে ৩৪ পয়েন্ট নিয়ে সিটি ছিল ৪ নম্বরে। সেবার শীর্ষে থাকা আর্সেনালের সঙ্গে সিটির পয়েন্টের ব্যবধান ছিল ৪। পরে অবশ্য এ ব্যবধান ঘুচিয়ে শিরোপা জিতেছিল পেপ গার্দিওলার দল। চ্যাম্পিয়ন অবস্থায় সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতিতে পড়েছিল লেস্টার ও চেলসি। ২০১৬-১৭ মৌসুমে ১৭ ম্যাচ পর সে সময়ের চ্যাম্পিয়ন লেস্টারের অবস্থান ছিল ১৫তম, পয়েন্ট ১৭।

১৭ ম্যাচে ৬ হারের পর সিটি বর্তমানে পয়েন্ট টেবিলের ৬ নম্বরে আছে। গত মৌসুমে লিগে প্রথম ১৭ ম্যাচ শেষে ৩৪ পয়েন্ট নিয়ে সিটি ছিল ৪ নম্বরে।

এক মৌসুম আগে চ্যাম্পিয়ন চেলসিও ১৭ ম্যাচ শেষে ছিল ১৫ নম্বরে, পয়েন্ট ১৮। ১৭ ম্যাচ শেষে টেবিল টপারদের সঙ্গে পয়েন্টের পার্থক্যেও লেস্টারের রেকর্ড সবচেয়ে খারাপ। সেবার টেবিল টপারদের চেয়ে ২৬ পয়েন্টে পিছিয়ে ছিল লেস্টার। আর সিটি এবার লিভারপুলের চেয়ে পিছিয়ে আছে ৯ পয়েন্টে। যদিও ২ ম্যাচ বেশি খেলেছে গার্দিওলার দল।