ম্যারাডোনার দেয়ালচিত্র ধ্বংস নিয়ে নেপলসবাসীর বাধার মুখে আবাসন কর্তৃপক্ষ
নেপলস, ডিয়েগো ম্যারাডোনার স্মৃতিবিজড়িত শহর। ১৯৮০–এর দশকের শেষ দিকে পিছিয়ে থাকা ইতালিয়ান এই শহরকে ফুটবল–দুনিয়ার আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছিলেন অনেকের মতে সর্বকালের সেরা এই ফুটবলার। ম্যারাডোনার ছোঁয়ায় নাপোলিও ইতালির অন্যতম সেরা ক্লাব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। ম্যারাডোনার হাত ধরে দুটি লিগ শিরোপা এবং একটি উয়েফা কাপের ট্রফি জিতেছিল নাপোলি।
বিনিময়ে অবশ্য নেপলসবাসীও মন উজাড় করে ভালোবাসা দিয়েছে ম্যারাডোনাকে। এখনো নেপলস শহরে ম্যারাডোনার জন্ম ও মৃত্যু দিবসকে ঘিরে দেখা যায় আগের মতোই উন্মাদনা। সেই ম্যারাডোনার কারণেই এবার একটি আবাসন পুনর্নির্মাণ প্রকল্পকে ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। বিতর্কটি যদিও ব্যক্তি ম্যারাডোনাকে নিয়ে নয়, তাঁর বিশালাকার একটি দেয়ালচিত্র নিয়ে।
১০ কোটি ৬০ লাখ ইউরোর এই আবাসন পুনর্বাসন প্রকল্পটির অর্থায়ন করছে ন্যাশনাল রিকভারি অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স প্ল্যান। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে, সান জিওভান্নি তেদুচি এলাকায় দুটি আবাসিক ভবন ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা। আগামী ফেব্রুয়ারিতে নতুন এই প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা। নতুন করে ভবন বানানোর এই উদ্যোগ বিতর্কের মুখে পড়েছে মূলত একটি ভবনে থাকা ম্যারাডোনার দেয়ালচিত্রের কারণে। সর্বকালের অন্যতম সেরা এই তারকাকে সম্মান জানাতে দেয়ালচিত্রটি তৈরি করা হয়েছিল।
২০১৭ সালে দেয়ালচিত্রটি তৈরি করেছিলেন স্ট্রিট আর্টিস্ট জোরিত। এই দেয়ালচিত্রে ম্যারাডোনাকে ‘মানব-ঈশ্বর’ হিসেবে তুলে ধরেছেন জোরিত। মূলত ম্যারাডোনার হাত ধরে ১৯৮৭ সালে নাপোলির ইতালিয়ান লিগের শিরোপা জেতার ৩০ বছর পূর্তিতে বানানো হয়েছিল দেয়ালচিত্রটি।
তবে এখন ভবনটি ভেঙে ফেলা হলে তার সঙ্গে গুঁড়িয়ে যাবে নান্দনিক এই দেয়ালচিত্রও। ১৯৮০–এর দশকে বড় এক ভূমিকম্পের পর এই ভবনগুলো তৈরি করা হয়েছিল। বলা হচ্ছে, ৩৬০টি পরিবারের জীবনমানের উন্নতির জন্যই এখন ভবন পুনর্নির্মাণ প্রকল্পটির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তবে সেখানকার অনেক অধিবাসীই চান না ম্যারাডোনার স্মৃতিবিজড়িত দেয়ালচিত্রটি ভবন পুনর্নির্মাণের জন্য ধ্বংস করে ফেলা হোক। তাঁদের চাওয়া, দেয়ালচিত্রটি অক্ষত রেখেই যেন ভবন নির্মাণের কাজটি করা হয়। এমনকি দেয়ালচিত্রটির নির্মাতা শিল্পী জোরিতেরও প্রত্যাশা, চিত্রকর্মটি সুরক্ষিত রাখা হবে। উল্লেখ্য, এই দেয়ালচিত্রের কারণে এলাকাটিও এখন পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র।
এদিকে কদিন আগে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ইতালিতে সৃষ্ট অন্য এক বিতর্ক থেকে মুক্তি পেয়েছেন ম্যারাডোনা। কর ফাঁকির এক মামলায় ৩০ বছর ধরে এই আইনি লড়াই লড়ছিলেন ম্যারাডোনা। ইতালির রাজস্ব কর্তৃপক্ষের অভিযোগ ছিল, লিখটেনস্টাইনের প্রক্সি কোম্পানি ব্যবহার করে ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত তখনকার ক্লাব নাপোলি থেকে পাওয়া ইমেজ–স্বত্বের কর ফাঁকি দিয়েছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত এ অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।