প্রথম থেকেই মনে হয়নি ব্রাজিল খেলতে নেমেছে
ব্রাজিল এভাবে বিদায় নেবে ভাবিনি। প্রস্তুত ছিলাম না ওদের এই বিপর্যয় দেখতে। ব্রাজিলের কান্নাভেজা বিদায়ের কারণ অনেক। যার মধ্যে ওপরের দিকে থাকবে তাদের মানসিকতা। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে প্রথম থেকেই মনে হয়নি ব্রাজিল খেলতে নেমেছে।
তাদের মানসিকতাই আমার কাছে ভালো মনে হয়নি। একটা সময় মনে হয়েছে, এ বুঝি ব্রাজিলের ছায়া। যে ছন্দটা ব্রাজিলের কাছ থেকে আমরা আশা করি, বিশ্বকাপের শেষ আটের ম্যাচে এদিন সেটা ছিল না।
৯০ মিনিটে ব্রাজিল পোস্টে শট নিল ৭টি। প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়ার কোনো শট নেই। অথচ ম্যাচের চূড়ান্ত ফল ভিন্ন। এটাই আসলে ফুটবল।
১০৬ মিনিটে যখন গোল পেল ব্রাজিল, এরপর ১১৭ মিনিটে গোল খাওয়া উচিত হয়নি। বাঁ থেকে বলটা যখন ব্রাজিলের বক্সে যায়, ক্রোয়েশিয়ার তিন খেলোয়াড় গোলকিপারের কাছাকাছি চলে গেছে ততক্ষণে। যে ছেলেটা গোল করল সে ছিল অরক্ষিত। ব্রাজিলের দুর্বল রক্ষণেরই খেসারত এই গোল।
সে সময় থিয়াগো সিলভার পায়ে তো বল লাগার কথা নয়, কিন্তু লেগে যায়। আসলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। ক্রোয়েশিয়া নিজেদের সামর্থ্য সম্পর্কে সজাগ থেকে সেভাবেই রক্ষণ কাজটা করেছে।
তবে ব্রাজিল শুরু থেকে আরও আক্রমণাত্মক হতে পারত, সেখানে কোথাও যেন মনে হয়েছে, তারা গুটিয়ে আছে। ধীর গতিতে খেলেছে অনেকটা সময়। মনেই হয়নি ব্রাজিলের ফুটবলারদের পায়ে বল পড়েছে। প্রতিপক্ষকে চেপে ধরার যে মানসিকতা, সেটা দেখা যায়নি এদিন। ব্রাজিল এমনিতে বল দখলের চ্যালেঞ্জগুলোয় সাধারণত জয়ী হয়। এদিন সেটাও হয়নি বেশির ভাগ সময়। মানে হারের জন্য যা যা হওয়া দরকার, তা-ই হয়েছে।
আমি বলব, ব্রাজিল শুরু থেকে আরও আক্রমণাত্মক হতে পারত। হলো না কেন, বুঝলাম না। সেই মনোভাবই ছিল না তাদের শরীরের ভাষায়।
নেইমার গোলটা করল দারুণ। কিন্তু সেই গোল শেষ ৪-৫ মিনিট ধরে রাখা গেল না, এটাই অবাক করা। ক্রোয়েশিয়ার প্রশংসা করতে হবে, গোলটা খাওয়ার পর তাদের মানসিকতাই বদলে গেল। গোল শোধে ওপরে এল। ক্রোয়েটরা জানত, তাদের নিজেদের সামর্থ্য সম্পর্কে। সেভাবেই খেলেছে।
ভিনিসিয়ুস জুনিয়র প্রথম ১০-১৫ মিনিটে তিনবার বল ধরে নিজে নিজেই খেলতে গেল। কোনো পাস দিল না। ফলে তিনবারই ধরা খেল। নেইমারও অনেকটা তাই। তারা একক নৈপুণ্য দেখাতে গেল। সেটা তারা দেখাবে তো ডিয়ের কাছে গিয়ে।
অন্যদিকে দেখুন, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে মেসি কীভাবে তার দলকে পার করেছে। পেনাল্টিতে সে গোল করার আগে গোল করিয়েছে তিনজনকে ঘাড়ের ওপর নিয়ে যেভাবে চূড়ান্ত পাস বাড়াল, এটাই মেসি। আর একজন মেসিই বড় পার্থক্য গড়ে দুই দলে। ব্রাজিল দলে একজন মেসির অভাব অনুভব করেছি। এই কাজটাই ব্রাজিলের কেউ করতে পারেনি। আসলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মধ্যে ওই একজনই, মেসি। শেষ আটের ম্যাচে আরেকবার মেসি দেখিয়ে দিল, সে কী করতে পারে।
ব্রাজিলের উচিত ছিল স্পেনকে দেখে শিক্ষা নেওয়া। স্পেনকে কীভাবে আটকে দিয়েছে মরক্কো, সেটা দেখে ‘প্ল্যান-বি’তে যেতে পারত ব্রাজিল, কিন্তু যায়নি। অন্যদিকে মরক্কো যা করেছে, ক্রোয়েশিয়াও তা-ই করেছে এবং তাতে লুকা মদরিচরা সফল।
সমস্যা হলো, ব্রাজিল দুই পাশ ধরে খেলতে চেয়েছে। এভাবে খেললে প্রতিপক্ষ রক্ষণে আপনি আতঙ্ক ছড়াবেন কীভাবে? তারপরও ব্রাজিলের এতগুলো স্কিলড খেলোয়াড়, অথচ তারা পারল না। রিচার্লিসন ১: ১ লড়াইয়ে একবারও জিততে পারেনি।
ভিনিসিয়ুসসহ অন্যরাও তা-ই। ব্রাজিলিয়ানরা বল প্লেয়ার আমরা জানি। মাঠে তারা নিজেরাই এককভাবে কিছু করতে চায়। যে কারণে আগে তো লাতিন আমেরিকায় ভালো গোলকিপার উঠে আসত না। কারণ, সবাই ফরোয়ার্ডে খেলতে চাইত, ওপরে যে কারিকুরি দেখানো যায়। সেই ব্রাজিল ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে অতিরিক্ত চাপ নিয়ে ফেলেছে। চাপ তো থাকবেই। চাপ সামলাতে না পারলে বিশ্বকাপ জিতবে কীভাবে?
এদিন শুরু থেকে ব্রাজিলের ফুটবলারদের মধ্যে ফুর্তিটাই ছিল না, বরং ক্রোয়াটদের অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী লেগেছে। তবে এটাও ঠিক, নেইমারের ওই গোল ধরে রাখতে পারলে আমরা হয়তো অন্য সুরে কথা বলতাম। তখন ব্রাজিলের এত ফাঁকফোকর আলোচনায় আসত না।