বিশ্বকাপে বিশ্বকে দেখিয়ে দিল এশিয়ার দলগুলো
লাতিন আমেরিকান ফুটবল কনফেডারেশন (কনমেবল) থেকে এবার কাতার বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার সুযোগ পেয়েছে ৪টি দেশ। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি) থেকে বাছাইপর্ব খেলে একই বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলেছে ৫টি দেশ। কাতার আয়োজক হিসেবে সরাসরি খেলার সুযোগ পাওয়ায় তারা এই হিসাবের বাইরে।
বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের খেলা শেষে এ দুই মহাদেশের দলগুলোর অবস্থান দেখে কি বোঝা গেল? ফুটবলের পরাক্রমশালী লাতিন আমেরিকা থেকে শেষ ষোলোয় উঠতে পেরেছে ২টি দেশ। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। আর এশিয়া থেকে শেষ ষোলোর টিকিট কেটেছে ৩টি দেশ। দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া। এরপরও কি বলবেন, ফুটবলে এশিয়া উঠে আসছে না!
এশিয়ার ফুটবলাররা যে উঠে আসছেন, তা ইউরোপের লিগগুলোতে তাকালেই বোঝা যায়। এই মহাদেশ থেকে প্রচুর খেলোয়াড় মাঠ মাতাচ্ছেন ইউরোপের লিগে। আর বিশ্বকাপে এবার এশিয়ার দলগুলো তো রীতিমতো ভূমিকম্প তুলেছে।
একবার মনে করে দেখুন, গ্রুপ পর্বে জার্মানি ও স্পেনের মতো দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে হারিয়েছে জাপান। দুই সাবেক ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল ও ডেনমার্ক হেরেছে দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার কাছে। ওয়েলসকে হারিয়েছে ইরান। সৌদি আরবের কাছে হেরেছে আর্জেন্টিনা। আর সর্বশেষ (২০১৯) এশিয়ান কাপে মহাদেশটির এসব দলকে পেছনে ফেলে কিনা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কাতার!
মজার বিষয়, সেই কাতারই এই বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ, সেই কাতারই ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে সবার আগে। ফুটবল সত্যিই মজার খেলা।
কাতার ছাড়া এবার এএফসি থেকে বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া প্রতিটি দলই অন্তত একটি করে ম্যাচ জিতেছে। তাতে এশিয়ান ফুটবল–সমর্থকদের এই বিশ্বকাপে নিজেদের মহাদেশের দলগুলো নিয়ে গর্বিত হওয়ার কথা।
বিশ্বকাপে ৩২ দলের গ্রুপ পর্বে এবারই যে সেরা সাফল্য দেখিয়েছে এশিয়ার দলগুলো। এই মহাদেশ থেকে অংশ নেওয়া ৬টি (কাতারসহ) দল যে ৭ ম্যাচ জিতেছে গড়ে প্রতিটি দল ৩.৬৭ পয়েন্ট করে পেয়েছে (ম্যাচ জিতলে ৩ পয়েন্ট)। এর আগে ২০০২ ও ২০১০ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে এশিয়ার দলগুলো গড়ে সর্বোচ্চ ৩.৫ পয়েন্ট করে অর্জন করতে পেরেছিল।
এবার আরও একটি অনন্য অর্জন দেখল এশিয়া। বিশ্বকাপের ৯২ বছরের ইতিহাসে এই মহাদেশের ফুটবল কনফেডারেশন এএফসির অধীন থেকে এবারই প্রথমবারের মতো ৩টি দল নকআউট পর্বে উঠল।
বিশ্বকাপে এর আগে এই মহাদেশ থেকে দুবার ২টি করে দল শেষ ষোলোর দেখা পেয়েছে। ২০০২ জাপান-কোরিয়া বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় উঠেছিল দুই স্বাগতিক দেশ জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। ৮ বছর পর ২০১০ বিশ্বকাপেও জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া উঠেছিল শেষ ষোলোয়।
এই মহাদেশ থেকে বিশ্বকাপে প্রথম শেষ ষোলোর দেখা পেয়েছে সৌদি আরব। ১৯৯৪ বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় উঠেছিল সৌদি। এশিয়া থেকে এ পর্যন্ত দুটি দল বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে—১৯৬৬ বিশ্বকাপে উত্তর কোরিয়া এবং ২০০২ বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়া। ২০০২ সালে বিশ্বকাপের সহ–আয়োজক দেশটি সেমিফাইনালেও উঠেছিল।