‘পাগল’ রোনালদোর কারণেই সৌদি আরবে নেইমার
ক্লাব ফুটবলে কখনোই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে সতীর্থ হিসেবে পাননি নেইমার। মাঠে তাঁদের দেখা হয়েছে প্রতিপক্ষ হিসেবেই। রোনালদোর ‘চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী’ লিওনেল মেসির সঙ্গেই বন্ধুত্ব নেইমারের, সেটি মাঠের বাইরেও। সেই নেইমার বন্ধু মেসির মতো যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারে যোগ না দিয়ে হাঁটলেন রোনালদোর পথে, যোগ দিলেন সৌদি প্রো লিগে।
লা লিগায় থাকাকালে নেইমার ও রোনালদো খেলেছেন বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ নামের দুই ‘বৈরী’ ক্লাবে। বৈরিতার মাত্রা অতটা না হলেও সৌদি আরবে নেইমারের আল হিলাল ও রোনালদোর আল নাসরও বড় প্রতিদ্বন্দ্বীই। তবে আল হিলালে যোগ দেওয়ার পর সবার আগে সৌদি প্রো লিগের সবচেয়ে বড় তারকার প্রশংসাই করলেন নেইমার। ৯ কোটি ইউরোতে ‘হিলালি’ বনে যাওয়া নেইমার বললেন, ‘পাগল’ রোনালদোর কারণেই সৌদি আরবে গেছেন তিনি।
৩১ বছর বয়সী নেইমার ফরাসি ক্লাব পিএসজি ছেড়ে এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন ক্লাবটিতে গত পরশুই যোগ দিয়েছেন। ব্রাজিলের সান্তোস, স্পেনের বার্সেলোনা ও ফ্রান্সের পিএসজি—ক্লাব ফুটবলের বিখ্যাত তিন ক্লাবে খেলার পর এই বয়সেই কেন আল হিলালের মতো ‘অখ্যাত’ ক্লাবে গেলেন, সেই ব্যাখ্যা দিতে গিয়েই রোনালদোর প্রসঙ্গ টেনেছেন নেইমার।
আমি মনে করি, যা হচ্ছে সব ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর কারণেই হচ্ছে। সবাই তো শুরুতে তাঁকে ‘‘পাগল’’ বা এমন আরও অনেক কিছুই বলেছে। এখন দেখুন লিগটা শুধু বড়ই হচ্ছে।
সিআরসেভেন নামে পরিচিত রোনালদো কাতার বিশ্বকাপের পর যোগ দেন সৌদি ক্লাব আল নাসরে। ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়ের সেই সিদ্ধান্তটাকে ফুটবল ইতিহাসের ‘বাঁকবদল’ হিসেবেই দেখছেন নেইমার। এরপর যে ইউরোপ ছেড়ে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছেন আরও অনেক তারকা ফুটবলার।
আল হিলালে যোগ দিয়ে প্রথমবার সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে গিয়েই রোনালদোকে পাইওনিয়ার বা পথপ্রদর্শক হিসেবে বর্ণনা করলেন নেইমার, ‘আমি মনে করি, যা হচ্ছে সব ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর কারণেই হচ্ছে। সবাই তো শুরুতে তাঁকে ‘‘পাগল’’ বা এমন আরও অনেক কিছুই বলেছে। এখন দেখুন লিগটা শুধু বড়ই হচ্ছে।’
সৌদি প্রো লিগের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাত্রাটাও সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছে নেইমারকে, ‘এই গ্রীষ্মের দলবদলের পর লিগটা অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে যাচ্ছে। কারা কারা আসছে, সেই নামগুলো দেখুন না। আমি বিশ্বাস করি, প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আর এ কারণেই এই লিগে যোগ দিয়েছি। চ্যালেঞ্জ আমাকে এগিয়ে নেয়। আমি এখানে এসেছি লিগটাকে আরও ওপরে নিয়ে যেতে।’
আল হিলালের হয়ে সম্ভাব্য সবকিছু জেতাটাকেই পাখির চোখ করেছেন বলেও জানালেন নেইমার, ‘নতুন গল্প লেখার সুযোগ পেয়ে আমি বেশ রোমাঞ্চিত। সতীর্থদের সঙ্গী করে এই ক্লাবের সব লক্ষ্য পূরণে ঝাঁপিয়ে পড়ে ট্রফির পর ট্রফি জিততে চাই। আমি এ নিয়ে বেশ রোমাঞ্চিত।’
আল হিলালে বছরে ১০ কোটি ডলার বেতন পেতে যাওয়া নেইমার করিম বেনজেমা, রবার্তো ফিরমিনোর মতো তারকাদের উপস্থিতিকেও বড় করে দেখছেন, ‘অন্য দলের খুবই উঁচুমানের খেলোয়াড়দের বিপক্ষে খেলাটা বেশ রোমাঞ্চকর। বিপক্ষ দলে উঁচুমানের খেলোয়াড় থাকাটা আপনাকে আরও ভালো খেলতে প্রেরণা জোগায়। আপনি যখন রোনালদো, বেনজেমা, ফিরমিনোদের বিপক্ষে খেলবেন, তখন রোমাঞ্চের মাত্রাটা আরও বেড়ে যায়। তাই এই লিগে যোগ দিতে পেরে আমি খুশি। তাঁদের বিপক্ষে খেলাটা দারুণ ব্যাপার হবে।’
নেইমারের আশা, বিশ্বজুড়েই ফুটবল ভক্তরা সৌদি প্রো লিগের খেলা দেখবেন, ‘ব্রাজিলের প্রচুর মানুষ এই লিগের খেলা দেখবে বলেই আমার বিশ্বাস। আমি আশা করছি, সব ব্রাজিলিয়ান ও অন্য সবাই এই লিগটার খোঁজখবর রাখবেন ও আল হিলালকে সমর্থন দেবেন।’
সৌদি লিগটাকে সবার আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দু বানাতে নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার কথাও বললেন নেইমার, ‘সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই তাঁদের উপভোগের জন্য আমি আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করে যাব। আমাদের লক্ষ্য সব শিরোপা জয়।’
বিশ্বসেরা সব তারকাকে সৌদি আরবে নিয়ে যেতে ৬০ কোটি ইউরো বিনিয়োগ করেছে সৌদি প্রো লিগ। রোনালদো, নেইমার, বেনজেমা, ফিরমিনো ছাড়াও সাদিও মানে, জর্ডান হেন্ডারসন, রিয়াদ মাহরেজ, কালিদু কুলিবালির মতো তারকারা নাম লিখিয়েছেন সেখানে।
সৌদি প্রো লিগের নতুন মৌসুম শুরু হয়ে গেছে গত সপ্তাহেই। নেইমারের আল হিলাল আগামী শনিবার খেলবে আল-ফেইহার বিপক্ষে। নেইমারের সৌদি অভিষেক সেই ম্যাচে হবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।