কাতার বিশ্বকাপের মেসিই তো মায়ামির মেসি
যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারে (এমএলএস) কেমন দেখছেন লিওনেল মেসিকে? ছত্রিশের মেসিকে দেখে কি মনে হচ্ছে তাঁর শরীরে নতুন করে তারুণ্য ভর করেছে? গোল করছেন, করাচ্ছেন, দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মাঠ, কখনো কখনো মেজাজও হারাচ্ছেন, চড়াও হচ্ছেন প্রতিপক্ষের ওপর, আবার হাসছেনও। যে হাসির অনুবাদে উঠে আসে ফুরফুরে এক মন। নির্ভার, কিন্তু নেতৃত্বগুণে ভরপুর—এমন মেসিকে শেষ দেখেছেন কবে মনে করতে পারেন?
খুব বেশি পেছনে যেতে হবে না। ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপেই।
গত ডিসেম্বরে কাতারে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের ‘নিউক্লিয়াস’ ছিলেন মেসি। বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার তো আর এমনি এমনি জেতেননি। চোখধাঁধানো পারফরম্যান্সের পাশাপাশি মাঠে মেসির আচরণেও নেতৃত্বের বহিঃপ্রকাশ ছিল।
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটা মনে করতে পারেন। গোল করার পাশাপাশি মাঠে যেকোনো উত্তেজনাকর মুহূর্তে আর্জেন্টিনা দলের হয়ে প্রায় একাই সবকিছুর মুখোমুখি হয়েছিলেন মেসি। এ ছাড়া সৌদি আরবের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই হারের পর আর্জেন্টিনা দলের ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনেও তাঁর নেতৃত্বগুণের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আর মাঠের বাইরে তো আর্জেন্টিনা দলের চালিকা শক্তিই ছিলেন মেসি। তাঁর সতীর্থরাই এসব কথা বলেছেন। আর এখন বলছেন মেসির ক্লাব ইন্টার মায়ামির কোচ জেরার্দো মার্তিনো। আর্জেন্টাইন এই কোচের মতে, কাতার বিশ্বকাপে নেতৃত্বগুণে ভরপুর যে মেসিকে দেখা গিয়েছিল, ইন্টার মায়ামিতেও সেই মেসিকে দেখা যাচ্ছে।
লিগস কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে আগামীকাল বাংলাদেশ সময় সকালে শার্লট এফসির মুখোমুখি হবে ইন্টার মায়ামি। গতকাল তার সংবাদ সম্মেলনে মেসিকে নিয়ে কথা বলেন মার্তিনো। মায়ামির হয়ে এ পর্যন্ত ৪ ম্যাচে ৭ গোল করেছেন আর্জেন্টাইন তারকা। তাঁকে মায়ামিতে যেভাবে দেখছেন মার্তিনো, সেটা জানাতে গিয়ে সাবেক বার্সা কোচ বলেন, ‘আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে আমরা তাকে যেভাবে দেখেছি, সে এখানে তার চেয়ে কোনো অংশে কম বা বেশি করছে না। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মাঠের ভেতরে কিংবা বাইরে লিওর নেতৃত্বগুণ অনেকেরই চোখে পড়েছে। বিশ্বকাপে সে যা করেছে, তাতেই বোঝা যায় কোন ধরনের নেতৃত্বগুণ আছে তার মধ্যে।’
মায়ামির হয়ে মেসির গোলে দুটি ফ্রি কিকও আছে। এতে ঘুরেছে ম্যাচের মোড়ও। মার্তিনো তা ডাগআউট থেকে দেখেছেন এবং মেসিকে তিনি আগে থেকেই জানেন। আর্জেন্টিনা ও বার্সেলোনার কোচ থাকতে মেসিকে দেখেছিলেন খুব কাছ থেকে।
নেতৃত্বের বিকাশ ঘটায় মেসি কীভাবে পাল্টে গেছেন, সেটাও বোঝালেন মার্তিনো, ‘ক্যারিয়ারের শুরুর বছরগুলোয় তাকে শুধু ফুটবল নিয়েই মেতে থাকতে দেখা গেছে। বর্তমান পরিস্থিতি তার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এখন শুধু মাঠে নয়, অনুশীলনেও তার একটা প্রভাব থাকে। তরুণদের সঙ্গে কথা বলে, নিজের পরিকল্পনার কথা জানায়।’ মার্তিনো এরপর আরেকটু ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘এখানে এসে সে বলেছিল, আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এসেছি, জিততে চাই। ডালাসের বিপক্ষে চতুর্থ গোলটিই তার প্রমাণ। সে উদ্যাপন করেছে ঠিকই, কিন্তু এটাও বলেছে, চলো বলটা নিয়ে দ্রুত খেলা শুরু করি, তাহলে পঞ্চম গোলটাও হয়তো পাওয়া যেতে পারে। তার মানসিকতাটা এতেই বোঝা যায় এবং সেটা অন্যদের ওপরও প্রভাব ফেলেছে।’
মেসির মানের প্রতিভাকে স্বাভাবিক বলে মনে করেন না মার্তিনো, ‘সব দলেরই নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকে। হ্যাঁ, ভালো তো খেলতেই হয়। তবে এমন অনেক মুহূর্ত আছে, যখন আলাদা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ খেলোয়াড় প্রয়োজন হয়। আমরা তা দেখিয়েছি। কারণ, আমাদের আছে লিও। আর বক্সের আশপাশে ফ্রি কিক পেলে সেখান থেকে গোলের ৯০ শতাংশ সম্ভাবনা—এটা আমাদের জন্য মোটেও স্বাভাবিক কিছু নয়।’ ডালাসের বিপক্ষে চতুর্থ গোলটি ফ্রি কিক থেকে করেছিলেন মেসি। সেই গোলে সমতা আসায় ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ায়। টাইব্রেকার জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠেন মেসিরা।