মেসিদের ম্যাচ দেখতে অফিসে মিথ্যা বলায় চাকরি গেল তরুণীর
প্রিয় দলের খেলা দেখতে ঝুঁকি নেন অনেকে। কর্মক্ষেত্রে মিথ্যা বলেন কিংবা অন্য জায়গায় অন্য যেকোনো অজুহাত দেখিয়ে বেরিয়ে পড়েন। ২১ বছর বয়সী হুইলেন বারবিয়েরিকেও সে দলে ফেলা যায়। কিন্তু যা করেছেন সেটি আর্জেন্টিনা দলের প্রতি ভালোবাসা থেকেই।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দ উদ্যাপন বারবিয়েরি মিস করতে চাননি। তাই নিজ অফিসে অসুস্থতার ভুয়া কাগজ দেখিয়ে কাল ছুটে গিয়েছিলেন মনুমেন্তাল স্টেডিয়ামে। পানামার বিপক্ষে আর্জেন্টিনার ২-০ গোলের জয় ভালোই উপভোগ করেছেন বারবিয়েরি। কিন্তু তারপর খেসারতও দিতে হয়েছে। চাকরিটা চলে গেছে।
আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ‘ক্লারিন’ জানিয়েছে, সান্তা ফে শহরের পৌরসভার অন্তর্গত ইভা পেরন হেলথ সেন্টারে কাজ করতেন হুইলেন বারবিয়েরি। অসুস্থতার ভুয়া কাগজ দেখিয়ে ছুটি নিয়ে ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। ভুলটা করে ফেলেন সংবাদমাধ্যমে আবেগের আতিশয্যে সত্য কথাটা বলে। আর্জেন্টিনার আরেক সংবাদমাধ্যম ‘টিওয়াইসি স্পোর্টস’–এর সঙ্গে কথা বলার সময় অসুস্থতার মিথ্যা অজুহাত দেখানোর কথা জানিয়ে দেন বারবিয়েরি। ব্যস, তারপরই চাকরি খতম।
পানামার বিপক্ষে ম্যাচের দিন বারবিয়েরি অফিসে যাননি। কিন্তু বেলা সাড়ে তিনটা নাগাদ তাঁকে মনুমেন্তাল স্টেডিয়ামে টিওয়াইসি স্পোর্টস মুঠোফোনের অনুষ্ঠানে দেখা যায়। সংবাদমাধ্যমটি এ অনুষ্ঠানে নানা ভক্তের সঙ্গে কথা বলে থাকে। এদিন জানতে চাওয়া হয়েছিল, (ম্যাচ দেখতে) কী ফেলে এসেছেন? হুইলেন বারবিয়েরি কোনো রাখঢাক না রেখেই স্প্যানিশ ভাষায় বলেন, ‘লাবুরো।’ বাংলায় এর অর্থ হলো ‘কাজ’।
সঞ্চালক বেশ অবাক হলেও বারবিয়েরি তখন থামার মতো অবস্থায় ছিলেন না। পরিণাম না ভেবে বলে যান, ‘রোলিকে শুভেচ্ছা। তিনি আমার বস। হয়তো এখন আমাকে টিভিতে দেখছেন। একটি মেডিকেল সার্টিফিকেট তিনি পেয়েছেন। কিন্তু আমি ভালো আছি। ডায়রিয়া হয়েছিল কিন্তু নিশ্চিত থাকুন এটা ঠিক হয়ে যাবে।’ বারবিয়েরির বস রোলির পুরো নাম রোলি সান্তাক্রোচ্চে। তাঁর আরেকটি পরিচয়, তিনি সান্তা ফে শহরের মেয়র।
সেই সংক্ষিপ্ত সময়ের সাক্ষাৎকারে বারবিয়েরির মধ্যে কোনো বিকার ছিল না। মুখে হাসি নিয়েই বলেছেন, ‘জাদুবলে আমি বন্ধুদের নিয়ে মনুমেন্তালে উপস্থিত হতে পেরেছি। রোলি, শপথ করে বলছি, দ্বিগুণ কাজ করে দেব। শুধু আমাকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া উপভোগ করতে দাও।’
সঞ্চালক জানতে চান, যদি চাকরি চলে যায় তাহলে! আর্জেন্টিনা দলের প্রেমে বুঁদ বারবিয়েরি কথাটা পাত্তা দেননি। পাল্টা বলেছেন, ‘সেটা কাল দেখা যাবে। আজ তো আমরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন!’ ক্লারিন জানিয়েছে, সেই নারীর দুর্ভাগ্য পরের দিনই চাকরি থেকে ছাঁটাই হওয়ার চিঠি পেয়েছেন।
আর্জেন্টিনার রেডিও অনুষ্ঠান ‘তোদোস এন লা ওচো’য় হাজির হয়ে সেই নারীকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা নিয়ে কথা বলেছেন সান্তা ফে শহরের মেয়র রোলি সান্তাক্রোচ্চে, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে সে এখন আর পৌরসভার অধীনে কাজ করে না। কী ঘটেছে তা জানার পর দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সে আমাদের সঙ্গে আর কাজ করবে না, এটা কষ্টের। সে আমার ব্যক্তিগত সচিবের বোন। করোনা মহামারির সময় গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে। আমার অধীনেই পৌরসভায় ঢুকেছিল।’ চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন সান্তা ফে মেয়র, ‘তাদের প্রজন্মকে বোঝা খুব কঠিন। আমারও খারাপ লাগছে। কিন্তু সে এমন ভুল করেছে যে জন্য খেসারত দিতেই হবে।’
মেয়েটি পরে ইনস্টাগ্রামে ক্ষমা চেয়েছেন মেয়রের কাছে, ‘ফুনেসের (সান্তা ফে) মেয়রের কাছে ক্ষমা চাইছি। ক্যামেরার সামনে মজা করেছিলাম। বুঝতে পারিনি ঘটনা এত দূর গড়াবে।’ তবে সংবাদমাধ্যম ‘লা ক্যাপিটাল’ মেয়েটির ইনস্টাগ্রাম স্টোরির সূত্র মারফত জানায়, আর্জেন্টিনা-পানামা ম্যাচ দেখতে যাওয়ার অনুমতি নিয়েছিলেন বারবিয়েরি। এক সহকর্মীর সঙ্গে কাজের দিন নাকি পাল্টে নেন, ‘আমি বিতর্ক তৈরি করতে চাই না। আমি জানি, এই বাজারে চাকরি পাওয়া কত কঠিন!’
আর্জেন্টিনা-পানামা ম্যাচে মনুমেন্তাল স্টেডিয়ামে প্রায় ৮৪ হাজার দর্শক হয়েছিল। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এটাই প্রথম ম্যাচ ছিল আর্জেন্টিনার। উৎসবের আবহে অনুষ্ঠিত এ ম্যাচে লুকিয়ে মেসিদের ড্রেসিংরুমে ঢুকে পড়েছিলেন এক ভক্ত। পরে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। আসলে, দলটা আর্জেন্টিনা বলেই হয়তো ভক্তদের এমন উন্মাদনা।