চ্যাম্পিয়নস লিগের সেই ফাইনালে দর্শক হেনস্তার দায় উয়েফারই
প্যারিসে ২০২২ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে হেনস্তার শিকার হয়েছিলেন দর্শক। ফাইনালের আগে-পরে প্যারিসের পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন রিয়াল ও লিভারপুলের সমর্থকেরা। সেদিন ২৮ মে রাতে নির্ধারিত সময়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের খেলা শুরু হয়নি। প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছিল, সমর্থকদের ঢুকতে দেরি হচ্ছে বলে খেলা পেছানো হয়েছে।
ফরাসি সংবাদমাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছিল, লিভারপুলের টিকিটবিহীন কিছু সমর্থক মাঠে ঢোকাতেই এ সমস্যার উৎপত্তি। সাংবাদিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, কর্তৃপক্ষের গাফিলতি সমর্থকদের ভোগার কারণ। টিকিট থাকা সত্ত্বেও লিভারপুলের ২ হাজার ৭০০ সমর্থক সেদিন মাঠে ঢুকতে পারেননি। প্যারিসের অনেক স্থানীয় মানুষ অনেক সমর্থকের টিকিট ছিনতাই করেছেন। ঝামেলার একপর্যায়ে নিরীহ সমর্থকদের ওপর পেপার স্প্রে নিক্ষেপ করেছিল প্যারিসের পুলিশ।
উয়েফার ঠিক করা একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন সে ঘটনার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ন্যক্কারজনক সে ঘটনার ‘প্রাথমিক দায়দায়িত্ব’ উয়েফারই এবং তাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল ‘প্রায় বিপর্যয়ের দিকে চলে যাচ্ছিল’।
ফাইনাল নির্ধারিত সময়ের ৩৬ মিনিট দেরিতে শুরু হয়। উয়েফা ও ফরাসি কর্তৃপক্ষ সেই দাঙ্গার জন্য প্রাথমিকভাবে টিকিটবিহীন সমর্থকদের দায়ী করেছিল। প্রতিবেদনে এই দাবির পক্ষে ‘কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘প্যানেল মনে করে, ইভেন্টটি আয়োজনের স্বত্বাধিকারী হিসেবে প্রাথমিক দায়দায়িত্ব উয়েফারই আর এই ব্যর্থতায় বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল।’ তবে অন্যান্য পক্ষেরও ‘আংশিকভাবে অবদান’ দেখছে সেই স্বাধীন তদন্ত কমিশন প্যানেল। বিশেষ করে ফরাসি পুলিশ ও ফরাসি ফুটবল ফেডারেশনও (এফএফএফ) দায় এড়াতে পারে না বলে প্রতিবেদনে রায় দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৮৯ হিলসবরো ট্র্যাজেডির কথা মাথায় রেখে লিভারপুলের সমর্থকদের সঙ্গে সহিংস আচরণ করেছে পুলিশ। জনসাধারণের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার জন্য ক্লাবটির সমর্থকেরা হুমকি—এ ভুল ধারণা নিয়ে লিভারপুলের সমর্থকদের সঙ্গে অমন উগ্র আচরণ করেছে পুলিশ। সেই ফাইনালে লিভারপুলকে ১-০ গোলে হারিয়ে ১৪তমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিতেছিল রিয়াল মাদ্রিদ।
তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন উয়েফার জেনারেল সেক্রেটারি থিওডোর থিওডোরিদিস, ‘যেটি ক্লাব মৌসুম উদ্যাপনের সেরা সময় হওয়ার কথা, সেটি না হয়ে সেদিন যাঁরা ভুগেছেন, তাঁদের কাছে আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি। বিশেষ করে লিভারপুলের সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চাই।’ গত বছর ৩০ মে এই স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়। প্রায় ৫ লাখ ইউরো খরচ করে সোমবার এই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।