ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ২ : ১ বার্সেলোনা
বার্সেলোনাকে তাহলে এখন শুধু ঘরোয়া লিগের বড় দল বলাই যায়!
জাভি হার্নান্দেজের অধীনে ধীরে ধীরে পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পেলেও সেটা যে স্পেনেই সীমাবদ্ধ। স্প্যানিশ সুপার কাপ জয়ের পর লা লিগার শীর্ষে উঠে আসা দলটি আবারও ব্যর্থ ইউরোপীয় মঞ্চে।
ওল্ড ট্রাফোর্ডে এবার নাটকীয়তায় ঠাসা ম্যাচে দুই ব্রাজিলিয়ানের ঝলকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে ২–১ ব্যবধানে হেরে গেছে বার্সেলোনা। নিজেদের ডেরা ন্যু ক্যাম্পে রোমাঞ্চকর প্রথম লেগ ২–২ সমতায় শেষ হয়েছিল। দুই লেগ মিলিয়ে ৪–৩ অগ্রগামিতায় উয়েফা ইউরোপা লিগের শেষ ষোলোয় পৌঁছে গেছে ইউনাইটেড।
গত মৌসুমের মতো এবারও চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে পড়ে ইউরোপা লিগে ঠাঁই হয়েছিল বার্সার। তবে ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের দ্বিতীয় মর্যাদাপূর্ণ আসরেও সুবিধা করতে পারল না কাতালানরা।
অথচ বিতর্কিত পেনাল্টিতে জাভির দলই প্রথমার্ধে এগিয়ে গিয়েছিল। তবে ‘থিয়েটার অব ড্রিমসে’ আরেক দফা স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন ব্রাজিলের মিডফিল্ডার ফ্রেদ ও উইঙ্গার আন্তোনি।
ইউনাইটেডের কোচ হিসেবে প্রথম দুই ম্যাচেই হারার পর যে এরিক টেন হাগকে সমালোচনার তিরে বিদ্ধ করা হয়েছিল, সেই টেন হাগের কাছে একে একে হার মানল ইয়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুল, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে শীর্ষে থাকা আর্সেনাল, আন্তোনিও কন্তের টটেনহাম হটস্পার, পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি আর জাভির বার্সেলোনা।
ন্যু ক্যাম্পে প্রথম লেগে রোমাঞ্চের সব রসদ যেন জমা ছিল দ্বিতীয়ার্ধে। ওই ম্যাচের চারটি গোলই হয়েছিল বিরতির পর। তবে ওল্ড ট্রাফোর্ডে দেখা গেছে ভিন্ন ছবি।
শুরুতেই ব্রুনো ফার্নান্দেজের শট মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেনের রুখে দেওয়া, বিতর্কিত পেনাল্টির পর রেফারির সঙ্গে ইউনাইটেড খেলোয়াড়দের তর্কে জড়ানো, সতীর্থ দাভিদ দি হেয়াকে পেনাল্টি ঠেকিয়ে দিতে ফার্নান্দেজের আকুতি, রবার্ট লেভানডফস্কির শট দি হেয়া ঠেকিয়ে দেওয়ার পরও বল জালে আশ্রয় নেওয়া, পায়ে আঘাত পেয়ে রোনাল্ড আরাউহোর খুঁড়িয়ে চলা, লিসান্দ্রো মার্তিনেজের সঙ্গে লেভার ধাক্কা কিংবা জন্মদিনে কাসেমিরোর দুর্দান্ত এক ব্লকে বার্সার দ্বিতীয় গোল না পাওয়া—প্রথমার্ধে বাদ যায়নি কিছুই।
নিজেদের বক্সে আলেহান্দ্রো বালদেকে ফার্নান্দেজ বাহু দিয়ে হালকা স্পর্শ করতেই পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি ক্লেমঁ তুরপিন। এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে ইউনাইটেড খেলোয়াড়েরা তর্কে জড়ালেও নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।
পেনাল্টি নিতে আসবেন লেভানডফস্কি, সেটা জানাই ছিল ফার্নান্দেজের। লেভার শট ঠেকিয়ে দিতে সতীর্থ গোলরক্ষককে দি হেয়ার কাছে অনুনয়–বিনয় করতে দেখা যায় রেড ডেভিল অধিনায়ককে। দি হেয়া লেভার শটে ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে হাত লাগালেও বল ঠিকই জাল কাঁপায়। ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকার স্বস্তি নিয়েই বিরতিতে যায় জাভির দল।
তবে বিরতির পর ঘুরে দাঁড়ানোর অদম্য গল্প লিখতেই বোধ হয় ছক কষেছিলেন টেন হাগ। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই স্ট্রাইকার ভাউট ভেঘার্স্ট তুলে নিয়ে নামান আন্তোনিকে। তাতেই খেলার ধরন বদলে যায় ইউনাইটেডের। ৪৭ মিনিটে স্বাগতিকদের সমতায় ফেরান ফ্রেদ। তাঁকে বলে জোগান দেন সেই ফার্নান্দেজ। এতে যেন ‘পাপমোচন’ করেন তিনি।
৫৯ মিনিটে ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংকে ফাউল করাকে কেন্দ্র করে যুদ্ধংদেহী হয়ে ওঠে দুই দল। ইউনাইটেডের ফার্নান্দেজ আর বার্সার সের্হি রবার্তোকে হলুদ কার্ড দেখিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন রেফারি তুরপিন। ৬৩ মিনিটে জুলস কুন্দের দুর্দান্ত হেড কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান দি হেয়া। তবে ম্যাচের সেরা মুহূর্ত আসার তখনো বাকি।
৭৩ মিনিটে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। গোলটা আন্তোনির নামে লেখা হয়ে থাকলেও এটাকে ‘দলীয় ঐক্যের নিদর্শন’ বলা যেতেই পারে। অসাধারণ ব্যাকহিলে বল নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন লুক শ। তাঁর থেকে বল পান ফার্নান্দেজ। এরপর রাফিনিয়াকে কাটিয়ে তরুণ তুর্কি আলেহান্দ্রো গারনাচোর উদ্দেশে বাড়ান। গারনাচো দেন ফ্রেদ। তিনি দেন ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা আরেক ব্রাজিলিয়ান আন্তোনিকে। তারপর বাঁ পায়ের নিচু কোনাকোনি শটে নিখুঁত ফিনিশিং।
পিছিয়ে পড়ে গোলের জন্য হন্যে হয়ে ওঠে বার্সা। যোগ করা সময়ে সমতা প্রায় এনেছিলেন ডি ইয়ং। তবে গোললাইনের কাছ থেকে বল ক্লিয়ার করেন রাফায়েল ভারান, যেটিকে ম্যাচ জেতানো মুহূর্ত বলেছেন টিভি ধারাভাষ্যকার।
বার্সার এই হারে দায় আছে জাভিরও। নিষেধাজ্ঞার কারণে এ ম্যাচে ছিলেন না গাভি। চোটে পড়ে ছিটকে গেছেন পেদ্রি ও উসমান দেম্বেলে। তাঁদের জায়গায় শুরু থেকে আনসু ফাতি–ফেরান তোরেসদের না খেলিয়ে নামিয়েছেন রাফিনিয়া–সের্হি রবার্তোকে।
রাফিনিয়াকে তাঁর পছন্দের জায়গাতেই খেলিয়েছেন জাভি। তবে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার রবার্তোকে বাঁ উইংয়ে খেলিয়ে যে ভুল করেছেন, সেটার খেসারত দিতেই হয়েছে তাঁকে।