এক মাস ধরে নিখোঁজ সাবেক গোলকিপার মহসিন
এক মাস ধরে নিখোঁজ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও গোলকিপার মোহাম্মদ মহসিন। গত ২৯ আগস্ট ঢাকার মালিবাগের বাসা থেকে কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে যান তিনি। এরপর আর ঘরে ফেরেননি মহসিন।
দেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা গোলকিপার বলা হয় মোহাম্মদ মহসিনকে। জাতীয় দলের ১ নম্বর গোলকিপার ছিলেন দীর্ঘ দিন। মোহামেডান, আবাহনী, মুক্তিযোদ্ধার অধিনায়কত্ব করেছেন। আশি ও নব্বইয়ের দশকের এই ফুটবল তারকা অনেক দিন ধরেই মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ।
ঢাকার মালিবাগে মা ও ভাইয়ের সঙ্গে থাকেন মহসিন। ১৯৯৫ সালে খেলা ছাড়ার পর কানাডায় প্রবাসজীবন বেছে নিয়েছিলেন। বিয়ে করেছিলেন, কিন্তু টেকেনি। কানাডায় ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল। বৈষয়িক না হওয়ায় সেসবও এখন আর নেই। ২০১৪ সালে প্রায় নিঃস্ব অবস্থায় দেশে ফিরে আর ফেরত যাননি কানাডায়। তীব্র হতাশা থেকেই ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলেন মানসিক ভারসাম্য।
বছর দেড়েক আগে মহসিনের শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার কথা ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন মহল তাঁর সাহায্যে এগিয়ে এসেছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে বারবার বাড়ি চলে আসতেন তিনি। সতীর্থ বন্ধুবান্ধবও তাঁর চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এখন তাঁরা প্রায় সবাই হাল ছেড়ে দিয়েছেন।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়া নতুন কিছু নয় মহসিনের জন্য। না বলে ঘর ছেড়েছেন আগেও। আবার ফিরেও এসেছেন। কিন্তু এবার এক মাস হয়ে গেছে তাঁর কোনো খোঁজ নেই। তাঁর ছোট ভাই পিন্টু ইসলাম এবং দুই বোন নূরুন্নাহার নার্গিস ও রুমা ফেরদৌসি প্রচণ্ড উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। কমলাপুর ও রমনা থানায় এ ব্যাপারে দুটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে।
মহসিনের ছোট বোন রুমা বলেছেন, ‘মহসিন ভাই মানসিক ভারসাম্যহীন। আগে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেও দু-এক দিনের মধ্যে ফিরে এসেছেন। কিন্তু এবার তো এক মাস হয়ে গেল। ভাই আমার কী করছেন, কোথায় আছেন, জানি না। দুটি থানায় জিডি করেছি। পুলিশ বলেছে, তারা খোঁজ করছে। জানি না কেমন আছেন আমার ভাই।’ পিন্টু ইসলামের কথা, ‘আমরা ভাইয়ের খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা সবার সহায়তা চাই। তাঁর কাছে মোবাইল, টাকাপয়সা কিছুই নেই।’
১৯৮২ সালে দিল্লি এশিয়ান গেমসে দলে দ্বিতীয় গোলরক্ষক হিসেবে থাকলেও তিন ম্যাচের দুটিতে তাঁর ওপরই ভরসা রেখেছিল বাংলাদেশ দল। চীনের বিপক্ষে পেনাল্টি ঠেকিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন মহসিন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। জাতীয় দলের গোলবারের নিচে টানা ১১ বছর ছিলেন প্রথম পছন্দ। বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব, এশিয়ান কাপ বাছাই, সাফ গেমস, এশিয়ান গেমস মিলিয়ে আশি ও নব্বইয়ের দশকে জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ৪০টির বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ১৯৯৪ সালে, কাতারের দোহায়, ভারতের বিপক্ষে।
মহসিন ১৯৮৫ সালে মোহামেডানের অধিনায়ক ছিলেন, তবে সাফল্য পাননি। ১৯৮৭ সালে যোগ দেন আবাহনীতে। ১৯৯২ সালে সিনিয়র ডিভিশন ফুটবল লিগজয়ী আবাহনীর অধিনায়কত্ব করেছেন। ১৯৯৪ সালের দলবদলে আবাহনী, মোহামেডান, ব্রাদার্সের পুল ভেঙে শক্তিশালী দলে পরিণত হয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র। মহসিন যোগ দেন মুক্তিযোদ্ধায়, অধিনায়কত্বও করেন। মুক্তিযোদ্ধাকে জেতান ফেডারেশন কাপ। মুক্তিযোদ্ধায় ওই এক মৌসুমই খেলেছেন তিনি। এরপরই চলে যান অন্তরালে। কানাডায় শুরু করেন নতুন জীবন। কিন্তু একপর্যায়ে সব হারিয়ে ফিরে আসেন দেশে।