২০২২–২৩ মৌসুমটা স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর কেটেছে ম্যানচেস্টার সিটির। প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপের পর অধরা চ্যাম্পিয়নস লিগ ধরা দিয়েছে সিটির হাতে। পেপ গার্দিওলার দল গড়েছে ট্রেবল জয়ের কীর্তি।
দলটির সাফল্যে ভরপুর মৌসুমে প্রত্যেকেই কমবেশি আলো ছড়িয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে তাই পেশাদার ফুটবলারদের সংগঠনের (পিএফএ) বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের সংক্ষিপ্ত তালিকায় সিটিরই বেশি খেলোয়াড় জায়গা করে নিয়েছেন।
পিএফএ হলো ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের লিগে খেলা পেশাদার ফুটবলারদের কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটি ১৯৭৩–৭৪ মৌসুম থেকে বর্ষসেরার পুরস্কার দিয়ে আসছে। ফুটবলারদের ভোটেই সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত করা হয়। এর আগে ছয়জনকে মনোনীত করা হয়।
এ বছর ছয়জনের সংক্ষিপ্ত তালিকায় মনোনীত হওয়া তিনজনই সিটির। তাঁরা হলেন—দলটির স্ট্রাইকার আর্লিং হলান্ড, মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনা ও ডিফেন্ডার জন স্টোনস। তালিকায় থাকা বাকি তিনজন আর্সেনাল অধিনায়ক মার্টিন ওডেগার্ড, তাঁর সতীর্থ বুকায়ো সাকা ও সদ্য টটেনহাম ছেড়ে জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখে যোগ দেওয়া হ্যারি কেইন।
আগামী ২৯ আগস্ট বিজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। এটা হবে পিএফএ অ্যাওয়ার্ডসের ৫০তম আয়োজন।
ডি ব্রুইনা এর আগেও দুবার (২০১৯–২০ ও ২০২০–২১) পিএফএ বর্ষসেরা হয়েছিলেন। গত বছর এই পুরস্কার জিতেছিলেন মোহাম্মদ সালাহ। লিভারপুলের মিসরীয় ফরোয়ার্ড এবার সংক্ষিপ্ত তালিকাতেই নেই। গত মৌসুমটা প্রত্যাশামাফিক কাটেনি সালাহর। ১৯ গোল ও ১২ অ্যাসিস্ট করলেও সেটা লিভারপুলের জন্য যথেষ্ট ছিল না। ইয়ুর্গেন ক্লপের দল লিগ শেষ করে পয়েন্ট তালিকার পাঁচে থেকে। ফলে ছয় মৌসুম পর চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করে নিতে ব্যর্থ হয়।
বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পাশাপাশি বর্ষসেরা তরুণ খেলোয়াড়ের তালিকাতেও আছেন হলান্ড। এখানে তাঁর সঙ্গী আর্সেনালের সাকা। বাকি চারজন সাকার সতীর্থ গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি, ব্রাইটনের ইভান ফার্গুসন, অ্যাস্টন ভিলার জ্যাকব রামসে ও ব্রিটিশ ফুটবল ইতিহাসে দলবদলের রেকর্ড গড়ে চেলসিতে যোগ দেওয়া মোইসেস কাইসেদো।
বরুসিয়া ডর্টমুন্ড থেকে ম্যানচেস্টার সিটিতে আসা হলান্ড ইংলিশ ফুটবলে নিজের প্রথম মৌসুমে রেকর্ড বই ওলট–পালট করে দেন। সিটিকে ট্রেবল জেতানোর পথে করেন ৫২ গোল। লিগে ৩৬ গোল করে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড গড়েন।
পিএফএ বর্ষসেরার সংক্ষিপ্ত তালিকায় যাঁরা
⫸ আর্লিং হলান্ড (ম্যানচেস্টার সিটি)
⫸ কেভিন ডি ব্রুইনা (ম্যানচেস্টার সিটি)
⫸ জন স্টোনস (ম্যানচেস্টার সিটি)
⫸ বুকায়ো সাকা (আর্সেনাল)
⫸ মার্টিন ওডেগার্ড (আর্সেনাল)
⫸ হ্যারি কেইন (টটেনহাম, বর্তমানে বায়ার্ন)
তাঁর দুই সতীর্থ ডি ব্রুইনা ও স্টোনসও ছিলেন অবিশ্বাস্য ছন্দে। ডি ব্রুইনা প্রিমিয়ার লিগে করেন সর্বোচ্চ ১৬ অ্যাসিস্ট। আর স্টোনস পজিশন বদলানোর পর (সেন্টার ব্যাক থেকে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার) নিজেকে যেন নতুন করে আবিষ্কার করেন। রক্ষণ সামলানোর পাশাপাশি আক্রমণভাগে বলের জোগান দিয়ে দলের ট্রেবল জয়ে দারুণ অবদান রাখেন।
লিগে গত মৌসুমে শীর্ষ গোলদাতার তালিকায় হলান্ডের পরই ছিলেন কেইন। টটেনহামের জার্সিতে নিজের সর্বশেষ মৌসুমে করেছেন ৩০ গোল। দলকে সব দিয়েও ট্রফির আক্ষেপ ঘোচাতে না পারায় এ মৌসুমে কেইন যোগ দিয়েছেন বায়ার্নে।
তালিকার অন্য দুজন আর্সেনালের ওডেগার্ড ও সাকা। দেড় যুগের বেশি সময় পর আর্সেনালের সামনে লিগ জয়ের যে সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করেছিল, সেটার মূল কারিগর তাঁরা দুজন। দলকে নেতৃত্ব দেওয়া ওডেগার্ড লিগে ১৫ গোলের সঙ্গে ৭ গোলে সহায়তা করেন। সাকা তো তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা মৌসুম কাটিয়েছেন। গানারদের হয়ে গোল করেছেন ১৪টি, অ্যাসিস্ট ১১টি।
পিএফএ বর্ষসেরা তরুণ খেলোয়াড়ের তালিকায় যাঁরা
⫸ আর্লিং হলান্ড (ম্যানচেস্টার সিটি)
⫸ বুকায়ো সাকা (আর্সেনাল)
⫸ গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি (আর্সেনাল)
⫸ মোইসেস কাইসেদো (ব্রাইটন, বর্তমানে চেলসি)
⫸ ইভান ফার্গুসন (ব্রাইটন)
⫸ জ্যাকব রামসে (অ্যাস্টন ভিলা)
সব মিলিয়ে ২৪৮ দিন লিগের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে ছিল আর্সেনাল। সেই দলই কি না মৌসুমের শেষ ভাগে এসে গুবলেট পাকিয়ে ফেলে। গত এপ্রিল থেকে অবিশ্বাস্য ছন্দপতনে শীর্ষ স্থান হারায়। এ সময়ে টানা ৮ ম্যাচ জিতে লিগ শিরোপা ধরে রাখা নিশ্চিত করে হলান্ড, ডি ব্রুইনা, স্টোনসদের সিটি।