চুমুতে সম্মতি ছিল না হেরমোসোর, স্পেনের হয়ে বিশ্বজয়ীদের না খেলার সিদ্ধান্ত
দেশের ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি লুইস রুবিয়ালেসের দ্বারা অপমানিত হয়েছেন বলে মনে করেন স্পেনের হয়ে নারী বিশ্বকাপজয়ী তারকা হেনি হেরমোসো। নারী বিশ্বকাপে স্পেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বিজয়মঞ্চে হেরমোসোর ঠোঁটে চুমু দিয়েছিলেন স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের (আরএফইএফ) সভাপতি লুইস রুবিয়ালেস।
এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই তুমুল বিতর্ক চলছে। রুবিয়ালেস জানিয়েছেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া বিবৃতিতে হেরমোসো বলেছেন, চুমুতে তাঁর সম্মতি ছিল না। পরিস্থিতি এতে আরও জটিল হয়েছে।
স্পেনের হয়ে নারী বিশ্বকাপজয়ী ২৩ জন খেলোয়াড়সহ মোট ৮১ জন খেলোয়াড় ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। ‘নেতৃত্ব’ পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত, অর্থাৎ রুবিয়ালেস পদত্যাগ না করা পর্যন্ত এসব খেলোয়াড় স্পেনের হয়ে না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ৪৬ বছর বয়সী রুবিয়ালেসকে বরখাস্ত করতে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে স্পেন সরকার। ফিফাও শৃঙ্খলা ভাঙার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনে (আরএফইএফ) গতকাল বিশেষ সভায় রুবিয়ালেসের পদত্যাগের আশা করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু কিন্তু সভায় রুবিয়ালেস বলেছেন, ‘আমি পদত্যাগ করব না। কিছুতেই না।’ রুবিয়ালেসের দাবি, তাঁকে দোষী বানানো হচ্ছে। এটা তাঁর প্রাপ্য নয়।
নারী বিশ্বকাপের বিজয়মঞ্চে চুমুর সেই ঘটনা নিয়ে রুবিয়ালেস দাবি করেন, ‘হেনিই আমাকে এতটা উচ্ছ্বসিত করেছিল। বলেছিলাম, পেনাল্টিটা ভুলে যাও (মেরি আর্পস যেটা সেভ করেছিল) এবং ছোট্ট একটা “পেক” (দ্রুত চুমু, যেটা গালের পাশে দেয়) হবে? সে বলেছিল ঠিক আছে। চুমুটা ছিল স্বতঃস্ফূর্ত, পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে সম্মতিসূচক। এটাই মূল ব্যাপার। সম্মতিসূচক চুমু কি আমাকে এই ঝামেলা থেকে উদ্ধার করতে যথেষ্ট নয়?’
কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে দেওয়া বিবৃতিতে হেরমোসোর দাবি অন্য রকম, ‘আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, লুইস রুবিয়ালেস তাঁর বক্তব্যে যা যা দাবি করেছেন, বিশেষ করে সম্মতিসূচক চুমুর ব্যাপারটি—তাঁর সঙ্গে এমন কোনো কথাবার্তাই হয়নি। এগুলো মিথ্যা এবং নিজের সুবিধার জন্য কাউকে নিয়ন্ত্রণ করার যে সংস্কৃতি তিনি গড়ে তুলেছেন, সেটারই অংশ। আমি এটি জানানোর প্রয়োজন অনুভব করেছি, কারণ আমি বিশ্বাস করি, খেলাধুলা কিংবা যেকোনো কাজের জায়গায় অসম্মতির পরও কেউ যেন এমন আচরণের শিকার না হয়। নিজেকে অসহায় লেগেছে, আবেগে পরিচালিত একজন যৌনতাবাদী মানুষের স্থান-কাল-পাত্র ভুলে যাওয়া আচরণ, যেখানে আমার কোনো সম্মতি ছিল না। সহজ ভাষায়, আমাকে সম্মান দেওয়া হয়নি।’
স্পেনে নারী ফুটবলারদের সংগঠন ‘ফুটপ্রো’র বিবৃতিতে হেরমোসো এবং আরও ৮০ জন ফুটবলার জানিয়েছেন, ‘বর্তমান নেতৃত্ব টিকে থাকলে’ স্পেনের হয়ে তাঁরা খেলবেন না। এর মধ্যে স্পেনের হয়ে নারী বিশ্বকাপজয়ী ২৩ জন খেলোয়াড়ও আছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নারী বিশ্বকাপে পদক দেওয়ার সময় যা কিছু ঘটেছে, তার ভিত্তিতে আমরা বলতে চাই, এই বিবৃতিতে যেসব খেলোয়াড় সই করেছেন, তাঁরা বর্তমান নেতৃত্বের অধীন স্পেনের হয়ে খেলবেন না।’ স্পেনের পরবর্তী ম্যাচ ২২ সেপ্টেম্বর মেয়েদের নেশনস লিগে সুইডেনের বিপক্ষে। স্পেনের ছেলেদের জাতীয় দলে গত বছর অভিষিক্ত বোর্হা ইগলেসিয়াস গতকাল জানিয়েছেন, রুবিয়ালেস সভাপতি থাকা অবস্থায় তিনি স্পেন জাতীয় দলের হয়ে খেলবেন না।
স্পেনের স্পোর্টস কাউন্সিলের সেক্রেটারি ভিক্টর ফ্রাঙ্কোস গতকাল জানিয়েছেন, শিগগিরই রুবিয়ালেসকে আদালতে দাঁড় করানো হবে। সেখানে তাঁর আচরণের ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। আদালত যদি মনে করেন রুবিয়ালেস খেলাধুলার পেশাদার আচরণবিধি ভেঙেছেন, তাহলে তাঁকে বরখাস্ত করা হতে পারে।