একটা বৃত্ত ভেঙেছে বাংলাদেশ ফুটবল দল। ১৪ বছর পর উঠেছে সাফ ফুটবলের সেমিফাইনালে। আগামীকাল ফাইনালে ওঠার সুযোগ জামাল ভূঁইয়াদের সামনে। প্রতিপক্ষ কুয়েত হওয়ায় বাংলাদেশের পক্ষে অবশ্য ফাইনালে ওঠা কঠিন। তবে ফুটবলে অঘটন তো কতই হয়। বাংলাদেশও চাইছে তেমন কিছু করতে।
বাংলাদেশ দলের সেন্টারব্যাক তপু বর্মণ প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বেঙ্গালুরু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ৮ দলের মধ্যে কুয়েতই সবচেয়ে শক্তিশালী।
সেমিফাইনালে বাংলাদেশের বিপক্ষে কুয়েত যে অনেকটাই এগিয়ে থাকবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে বাংলাদেশ দল ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সুচ্যগ্র মেদিনী’ মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়েই কাল মাঠে নামবে। আর মাঠে নামার আগেই কুয়েতের সম্মান আদায় করে নিয়েছে বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচে বাংলাদেশ যে ফুটবল খেলেছে, তাতে কুয়েত শিবির হালকাভাবে নিচ্ছে না জামাল ভূঁইয়াদের।
সেটা প্রকাশও করেছেন কুয়েতের পর্তুগিজ কোচ রুই ফার্নান্দো দা সিলভা বেন্তো। বেঙ্গালুরুতে সেমিফাইনাল পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে আজ তিনি বলেছেন, ‘আমরা সব প্রতিপক্ষকে আমি সম্মান করি। বাংলাদেশকেও করছি। আমরা বাংলাদেশ দলকে দেখেছি। ফুটবলে কিছুই সহজ নয়। প্রতিপক্ষকে সম্মান দেখাতে হবে আমাদের। বাংলাদেশ সঙ্গে কঠিন ম্যাচ হবে আমি নিশ্চিত। আমার আশা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ হবে।’
কুয়েতের কোচ বারবারই বলেছেন, তাঁর দল একটা উন্নয়নপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলে মাঠে তাঁদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। সেটা করতে পারলে কোচের বিশ্বাস সেরা ফল আসবে। ‘আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। ফুটবল উন্নয়ন দীর্ঘ একটা প্রক্রিয়া। আমাদের দরকার হলো, খেলোয়াড়দের তৈরি করা। কীভাবে আমরা ম্যাচটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, ভাবতে হবে সেটা নিয়েও। আমরা সব সময় উন্নতির চেষ্টা করি। আমি মনে করি খুব ভালো ম্যাচ খেলতে আমাদের আরও অনেক কাজ করার আছে।’ বলেছেন রুই ফার্নান্দো।
চলতি সাফে ‘এ’ গ্রুপে ভারতকে টপকে গ্রুপ সেরা হয়ে সেমিতে এসেছে কুয়েত। বাংলাদেশ ‘বি’ গ্রুপের দ্বিতীয় সেরা দল হয়ে এসেছে শেষ চারে। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে কুয়েত ১৪১ আর বাংলাদেশ ১৯২তম। কুয়েত গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচে ৯ গোল করেছে। দলটির আক্রমণভাগ খুবই শক্তিশালী। তাই এটা মনে করা হচ্ছে যে কাল কুয়েতের আক্রমণ বনাম বাংলাদেশের রক্ষণ লড়াই হতে পারে।
এ নিয়ে কুয়েতের কোচ বলেছেন, ‘আমরা প্রতি ম্যাচের আগেই প্রতিপক্ষ দল নিয়ে বিশ্লেষণ করি। আমরা জানি তারা (বাংলাদেশ) শক্তিশালী দল। আমরা সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করছি। নকআউটে আপনি অতিরিক্ত সময় পাবেন, টাইব্রেকার পাবেন। ফুটবলারদের আমার বলার একটাই, মাঠে গিয়ে উপভোগ কর এবং নিজের সেরাটা দাও। সেমিফাইনালে পেরিয়ে আমাদের লক্ষ্য আসলে ফাইনাল।’
গত নভেম্বরে এই দল নিয়ে কাজ শুরু করেন কুয়েতের কোচ। গত কয়েক মাসে নিজের অভিজ্ঞতা কেমন হলো জানিয়েছেন সেটাও, ‘আমি কাজ শুরুর পর ফল খুব ভালো হয়নি। আমাদের আরও কঠিন পরিশ্রম করতে হবে। নিজেদের মধ্যে ফুটবল নিয়ে কথা বলতে হবে। আমরা যেভাবে এগোচ্ছি, সেটার ধারাবাহিকতা ধরে রাখা নিশ্চিত করতে হবে।’
বাংলাদেশের কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরা ও অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার কণ্ঠে ঘুরেফিরে এসেছে ফাইনাল শব্দটা। দুজনই বলেছেন, বাংলাদেশ দল মাঠে নামবে ফাইনালের লক্ষ্য নিয়েই।
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনালে ওঠার প্রথম লক্ষ্য পূরণ হয়েছে জানিয়ে কাবরেরার কথা, ‘আগামীকাল আমরা শুধুই ম্যাচ উপভোগ করতে নামব না, আমাদের লক্ষ্য এখন ফাইনাল নিশ্চিত করা।’ ফাইনাল নিশ্চিত করতে চাই গোল। ভালো খবর, বাংলাদেশ গত দুই ম্যাচ জিতেছে এবং দলে প্রথাগত স্ট্রাইকার ছাড়াই ছয় গোল করেছে। কিন্তু উল্টো পিটে দুটি ম্যাচেই আগে গোল খেয়েছে বাংলাদেশ।
সেমিফাইনালে যেন সেটা না হয়, সেদিকে সজাগ থাকার কথা বলেছেন কোচ।
বাংলাদেশ দলের সব মনোযোগ এখন সেমিফাইনালের দিকে। সেটা জানিয়ে কাবরেরা যোগ করেন, ‘আমরা কুয়েতের মুখোমুখি হতে তৈরি। এবং উজ্জীবিত আছি। দীর্ঘ সময় পর আমরা সাফের সেমিফাইনাল খেলতে যাচ্ছি। সর্বোচ্চ চেষ্টাই আমরা করব এবং লড়াই করব।’
কোচের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াও, ‘আমরা তৈরি। শারীরিকভাবে হয়তো আমরা ক্লান্ত, তবে মানসিকভাবে তৈরি আছি। আমরা আত্মবিশ্বাসী। তবে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হওয়া চলবে না। কুয়েতের সঙ্গে আমরা কীভাবে খেলব, সেটা নিয়ে আজই টিম মিটিংয়ে কথা হবে। অবশ্যই ফাইনাল থেকে এক পা দূরে দাঁড়িয়ে আমরা। সবাই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। আমরা দায়িত্ব নিয়ে খেলতে চাই। আর ভালো কিছু করতে চাই।’