এমন অর্জনের পর ছোটবেলায় হারানো মাকে মনে পড়ছে শামসুন্নাহারের
টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতার সঙ্গে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার—এর চেয়ে বেশি আর কী চাইতে পারতেন শামসুন্নাহার! বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–২০ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সেটা চানওনি। তাই পুরস্কার দুটি জিতে কলসিন্দুরের মেয়ে খুব খুশি।
সাফ অনূর্ধ্ব–২০ টুর্নামেন্ট শুরুর আগে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন। ফাইনালে একটিসহ মোট পাঁচ গোল করে পূরণ করেছেন সেই স্বপ্ন। সঙ্গে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার যোগ হওয়ায় কমলাপুর স্টেডিয়ামে আজকের রাতটা শামসুন্নাহারময় হয়েই থাকল।
কিন্তু তাঁর ফুটবল–জীবনের এটিই সেরা অর্জন নয়। নেপালকে উড়িয়ে আজ কমলাপুর স্টেডিয়ামে সাফ অনূর্ধ্ব–২০ নারী ফুটবলে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর শামসুন্নাহার ফিরে তাকালেন গত ১৯ সেপ্টেম্বরের দিকে।
সেদিন কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ প্রথমবার সাফ নারী ফুটবলে বড়দের বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে। সেই ফাইনালেও ছিলেন শামসুন্নাহার। গোলও করেছেন একটি। আর সেই ফাইনালই তাঁকে বেশি উদ্বেলিত করেছে বলে জানালেন আজকের ফাইনাল শেষে।
কমলাপুর স্টেডিয়ামে শিরোপা উৎসবের মধ্যেই বললেন, ‘নেপালে জেতা শিরোপাই আমার কাছে এক নম্বর। কারণ, সেটা ছিল জাতীয় দল। বাংলাদেশ কখনো বড়দের সাফ জেতেনি, আমরাই জিতলাম। তাই সেটাকেই আমি এগিয়ে রাখছি। এবার আমরা অনূর্ধ্ব–২০ সাফ টুর্নামেন্ট জিতলাম। এটাকে আমি আমার ফুটবল–জীবনে দ্বিতীয় সেরা অর্জন হিসেবে দেখছি।’
তবে ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে দলীয় অর্জনই তাঁর কাছে আগে। সেটাই বলেন বাংলাদেশ দলের এই ফরোয়ার্ড, ‘দলের জন্যই খেলেছি আমি। আমি চেয়েছি চ্যাম্পিয়ন হতে। সেই লক্ষ্য পূরণ হওয়াই আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
বাংলাদেশ দলের এই সাফল্যে খুশি সবাই। সেটা বোঝা গেছে বাংলাদেশ দলের আনন্দ দেখে। এক ফাঁকে শামসন্নাহার বলেন, ‘ড্রেসিং রুমে কোচরা আমাদের বলতেন, চোখ বন্ধ করে বাবা–মায়ের কথা ভাবো, ১৬ কোটি মানুষের কথা ভাবো। সবার কথা ভেবে সেরাটা খেলো। জোরে জোরে নিশ্বাস নাও। আমরা ফাইনালের শুরু থেকেই ঠিক করেছি, জেতার জন্যই খেলব। আমরা ভালো খেলার চেষ্টা করেছি। তাতে সফলও হয়েছি।’
শাসুন্নাহারের তৃপ্তির জায়গা আরেকটি। তাঁর অধিনায়কত্বে এর আগে সাফ নারী ফুটবলের দুবার শিরোপা জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ২০১৯ সালে ভুটানে অনূর্ধ্ব–১৫ সাফ ও জামশেদপুরে গত বছর অনূর্ধ্ব–১৮ সাফ। সেই কষ্টটা আজ কিছুটা কমেছে তাঁর। সেটাই বলে গেলেন শামসুন্নাহার, ‘আগের দুবার আমার অধিনায়কত্বে আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি বলে ম্যাচ শেষে কেঁদেছিলাম। ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। জীবনে তা ভুলতে পারব না। বয়সভিত্তিক ফুটবলে এটাই আমার শেষ অধিনায়কত্ব। তাই জেতার একটা চাপ ছিল। অনেকে বলত, তুমি ট্রফি জিততে পারবে না। এবার সেই আক্ষেপ আমার দূর হয়েছে।’
এ কারণেই শামসুন্নাহার আজ আর কাঁদেননি। এই আনন্দময় রাতে তিনি শুধুই হাসতে চেয়েছেন। ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছেন। আজ বড় হয়ে সাফল্যের রাতে মায়ের কথাই তাঁর আগে মনে পড়ার কথা। শামসুন্নাহার বললেন, ‘মাকে তো প্রতিদিনই স্মরণ করি। তাঁর জন্যই আমি এত দূর এসেছি। আজ একটু বেশিই মনে পড়ছে মাকে।’