চুক্তি নিয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা এমবাপ্পের, পরবর্তী গন্তব্য কোথায়
২৯, ২৮, ২৭, ১৮, ৩৩—এ সংখ্যাগুলো মূলত ২০২২–২৩, ২০২১–২২, ২০২০–২১, ২০১৯–২০ এবং ২০১৮–১৯ মৌসুমে ফরাসি লিগ ‘আ’তে কিলিয়ান এমবাপ্পের গোলের সংখ্যা। এমন গোলমেশিনকে কেই–বা বেচে দিতে চায়! গত দুই মৌসুমে তাই অনেকটা যুদ্ধ করেই এমবাপ্পেকে ধরে রেখেছিল পিএসজি। কিন্তু যে যেতে চায়, তাঁকে আর কতভাবে বেঁধে রাখা যায়! এমবাপ্পের ব্যাপারে ভেঙে গেছে পিএসজির ধৈর্যের বাঁধও।
আগামী মৌসুম (২০২৩–২৪) শেষেই পিএসজির সঙ্গে এমবাপ্পের চুক্তি শেষ হয়ে যাবে। ফরাসি তারকার সঙ্গে পিএসজির চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, এমবাপ্পে চাইলে চুক্তিটা আরও এক বছরের জন্য বাড়াতে পারবেন। তবে সেটি করতে হবে এ বছরের জুলাইয়ের মধ্যেই। কিন্তু এমবাপ্পে আর চুক্তি বাড়াতে চান না। ফরাসি স্ট্রাইকারের চাওয়া মেয়াদ শেষ করে মুক্ত খেলোয়াড় (ফ্রি এজেন্ট) হিসেবে ক্লাব ছেড়ে যেতে। কিন্তু এমবাপ্পেকে ফ্রি এজেন্ট হিসেবে ছাড়তে নারাজ পিএসজি। তাই এমবাপ্পে চুক্তি নবায়ন না করলে চলতি দলবদলেই তাঁকে ছেড়ে দিতে চায় প্যারিসের ক্লাবটি।
এমন পরিস্থিতিতে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন এমবাপ্পে। বার্তা সংস্থা এএফপিকে এমবাপ্পে বলেছেন, ‘চুক্তি না বাড়ানোর কথা ক্লাবকে ২০২২ সালের ১৫ জুলাই জানানো হয়েছে। এখন চিঠি দেওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে, আগে যা বলা হয়েছিল সেটাকে নিশ্চিত করা।’ একই সঙ্গে এই চিঠি সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এমবাপ্পে।
এমবাপ্পের দলবদলের প্রসঙ্গ সামনে এলে সবার আগে মনে পড়বে রিয়াল মাদ্রিদের নাম। গত দুই গ্রীষ্মের দলবদলে এমবাপ্পেকে পেতে রীতিমতো মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছিল রিয়াল। কিন্তু দুবারই শেষ মুহূর্তে গিয়ে হতাশ হতে হয় রিয়াল শিবিরকে। বিশেষ করে গতবার এমবাপ্পের রিয়ালে যাওয়া রীতিমতো সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিল। কিন্তু পিএসজির নাছোড় অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে হয় রিয়ালকে। বিরক্ত হয়েই এমবাপ্পেকে নিজেদের চাওয়ার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেয় রিয়াল।
রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজও এমবাপ্পেকে কেনার দৌড় থেকে সরে আসার কথা জানিয়েছেন। এরপরও অনেকের ধারণা ছিল, এমবাপ্পেকে কেনার সুযোগ পেলে রিয়াল ঠিকই আবার মাঠে নামবে। এখন সেই সময় চলে এসেছে। পিএসজিও চায় এমবাপ্পেকে ছেড়ে দিতে। এমন পরিস্থিতিতে তিক্ত অভিজ্ঞতা ভুলে এমবাপ্পেকে কিনতে রিয়াল ফের মাঠে নামবে কি না, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।
করিম বেনজেমা চলে যাওয়ায় রিয়ালের ফরোয়ার্ড লাইনে শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে হ্যারি কেইনকে নিয়ে রিয়ালের আগ্রহের কথাও শোনা যাচ্ছে। তবে এমবাপ্পের দলবদল সব সমীকরণ বদলে দিতে পারে। ফরাসি তারকা নিজেও রিয়ালে খেলতে চান। শেষ পর্যন্ত রিয়াল–এমবাপ্পের মধুর মিলন হয় কি না, তা জানতে আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।
গত মৌসুমে একপর্যায়ে এমবাপ্পে–পিএসজি দ্বন্দ্ব তীব্র রূপ নেয়। কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়েরের সঙ্গে মতের মিল হচ্ছিল না তাঁর। অক্টোবরে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কা জানায়, পিএসজিতে বিরক্ত এমবাপ্পে ক্লাব ছাড়তে চান। সে সময় এমবাপ্পেকে পিএসজির শর্তসাপেক্ষে ছেড়ে দেওয়ার কথাও জানায় মার্কা। পিএসজি নাকি শর্ত দিয়েছিল, এমবাপ্পের নতুন ক্লাব অবশ্যই রিয়াল হতে পারবে না।
আর তখনই সামনে আসে লিভারপুলের নাম। এমবাপ্পেকে নিজের আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন লিভারপুল বস ইয়ুর্গেন ক্লপও। লিভারপুল নাকি এমবাপ্পের মায়েরও খুব পছন্দের। তাই অনেকে দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে তাঁকে ‘অল রেড’ জার্সিতেও দেখে ফেলেছিল। তবে এমবাপ্পের ১৫ কোটি পাউন্ডের উচ্চ মূল্য পরিশোধ করে লিভারপুল এখন তাঁকে কিনতে রাজি হবে কি না, সে প্রশ্ন রয়েই যায়।
এমবাপ্পেকে কেনার লড়াইয়ে চেলসিরও মাঠে নামার কথা শোনা যাচ্ছে। গত মৌসুমটা চেলসির জন্য ভুলে যাওয়ার মতোই ছিল। নতুন মৌসুমে দলকে নতুনভাবে প্রস্তুত করবেন কোচ মরিসিউ পচেত্তিনো। এমবাপ্পের সঙ্গে পিএসজিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে পচেত্তিনোর। চেলসিতেও এমবাপ্পেকে তিনি নিয়ে আসতে চাইলে সেটি অবাক হওয়ার কিছু হবে না। লিভারপুলের মতো চেলসিরও টাকা খরচ করার ব্যাপারে অনীহা নেই। তাই এমবাপ্পেকে কেনার ব্যাপারে চেলসি মাঠে নামলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে বাকি দলগুলো।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মেইল অনলাইন বলছে, এমবাপ্পেকে পেতে চায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডও। তবে তার আগে দলটির মালিকানা নিয়ে জটিলতার অবসান পুরোপুরি ঘটতে হবে। এরই মধ্যে কাতারি ধনকুবের শেখ জসিমের ইউনাইটেডের মালিকানা পাওয়া নাকি অনেকটা নিশ্চিত। সে ক্ষেত্রে ওল্ড ট্রাফোর্ডের ক্লাবটির নতুন মালিকের প্রথম লক্ষ্য হতে পারে এমবাপ্পেকে দলে নিয়ে আসা। তবে দলবদলের বাজার বরাবরই অনিশ্চয়তায় ভরপুর। সেই অনিশ্চয়তার কারণে সামনের দিনগুলোতে আরও জমে উঠতে পারে এমবাপ্পেকে নিয়ে নাটক।