ফিফা বনাম আইসিসি, বছরে কার কত আয়
পৃথিবীতে জাতিসংঘ স্বীকৃত দেশ আছে ১৯৩টি। আর ফুটবলের বৈশ্বিক সংস্থা ফিফার সদস্যসংখ্যা ২১১।
রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত দেশের তুলনায় ফিফার সদস্যসংখ্যার আধিক্যই বলে দিচ্ছে ফুটবলের দুনিয়াটা কত বড়। ফুটবলই যে বিশ্বের জনপ্রিয়তম খেলা, তা নিয়ে তাই দ্বিধা নেই কারোরই। বিভিন্ন তথ্য–উপাত্ত বলছে, ফুটবলের পরের জায়গাটি ক্রিকেটেরই। খেলাটি প্রবল জনপ্রিয়—এমন অঞ্চলের জনসংখ্যা এবং বিশ্বকাপের দর্শকসংখ্যার বিচারে ক্রিকেটকে বিশ্বের দ্বিতীয় জনপ্রিয় খেলা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বিশ্বজুড়ে ফুটবলের মূল অভিভাবক ফিফা (ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন), আর ক্রিকেটের অভিভাবক আইসিসি (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল)। দুটি সংস্থার জন্ম কাছাকাছি সময়ে। ফিফার প্রতিষ্ঠা ১৯০৪ সালে, প্যারিসে। আইসিসির যাত্রা ১৯০৯ সালে, লন্ডনে। বর্তমানে দুটিরই প্রধান কার্যালয় অন্যত্র। ফিফার সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের জুরিখে, আইসিসির প্রধান কার্যালয় সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে।
দুই বৈশ্বিক কর্তৃপক্ষের মধ্যে ফিফা যে আইসিসির চেয়ে ধনী—এ কথা সহজেই বোধগম্য। বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে ফুটবল চলে, খেলাধুলা অঙ্গনে সবচেয়ে বেশি অর্থের ছড়াছড়ি এই খেলাকে কেন্দ্র করে। তুলনায় ক্রিকেটের দুনিয়া অনেকটাই সীমিত।
ব্রিটিশ উপনিবেশে থাকা দলগুলো, আরও স্পষ্ট করে বললে কমনওয়েলথের সদস্যদেশগুলোতেই ক্রিকেটের বিস্তৃতি বেশি। তবে দক্ষিণ এশিয়ার মতো বিশ্বের জনবহুল এলাকায় জনপ্রিয় বলে ক্রিকেট নিয়ে মাতামাতিও কম নয়। সাম্প্রতিক সময়ে টি–টোয়েন্টির সুবাদে আইসিসির মোট সদস্য সংখ্যা ১০৮–এ পৌঁছে যাওয়ায় ক্রিকেটও হাঁটছে বিশ্বায়ন, একই সঙ্গে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি আয়ের পথে।
এবার দেখা যাক, ফুটবল ও ক্রিকেটের দুটি বৈশ্বিক সংস্থা কে কেমন আয় করে?
ফিফা ও আইসিসি কেমন আয় করে
দুটি সংস্থারই আয়ের উৎস একই ধরনের। যার বেশির ভাগই আসে সম্প্রচার স্বত্ব থেকে। এ ছাড়া বিপণন স্বত্ব, টিকিট বিক্রি, টুর্নামেন্ট আয়োজন, সনদ স্বত্ব—এসব থেকে আয় করে থাকে ফিফা ও আইসিসি। দুটি সংস্থাই আয়-ব্যয়ের চূড়ান্ত হিসাব করে থাকে দীর্ঘ মেয়াদে। মূলত অন্যান্য বছরের তুলনায় বিশ্বকাপের বছরে আয় বেশি হয় বলে একসঙ্গে কয়েক বছরের হিসাবকে বিবেচনায় নেওয়া হয়।
আইসিসি বর্তমানে আট বছরের চক্রে আছে, যা শেষ হবে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের মাধ্যমে। ইতিমধ্যে ২০২৪ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত পরবর্তী চার বছরের আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে। ফিফায় চার বছরের হিসাব সম্পন্ন করা হয়েছে ২০২২ বিশ্বকাপের মাধ্যমে। এখন চলছে ২০২৩-২৬ চক্র।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ফিফা কাউন্সিলে ২০২২ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯-২২ চক্রে ফিফা ৭৫৬ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার আয় করেছে। এর মধ্যে টেলিভিশন সম্প্রচার স্বত্ব বাবদ আয় হয়েছে ৩৪২ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫ বিলিয়ন দর্শক দেখেছেন ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ, যা বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি। সম্প্রচার স্বত্বের বাইরে অ্যাডিডাস, কোকা-কোলা, হুন্দাই, কিয়া, কাতার এয়ারওয়েজ, ভিসার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বিপণন খাতে এসেছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয়।
ফিফা প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে আয়ে ভাটা পড়লেও কাতার বিশ্বকাপের কারণে আয়ের অঙ্কে প্রবৃদ্ধি ঘটেছে, যা সংস্থাটিকে ২০১৫-১৮ চক্রের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি আয় এনে দিয়েছে।
ফিফার দেওয়া হিসাবটি চার বছরের। ভাগ করলে প্রতিবছরের আয় দাঁড়ায় ১৮৯ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার।
এবার চোখ বোলানো যাক আইসিসির ২০২২ সালের আর্থিক বিবরণীতে। গত ৩১ ডিসেম্বর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা প্রাথমিক বার্ষিক আর্থিক বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালে মোট ৪৩ কোটি ১৯ লাখ মার্কিন ডলার আয় করেছে আইসিসি।
এর মধ্যে ৪১ কোটি ৩৯ লাখ মার্কিন ডলার আয় এসেছে ইভেন্টস থেকে। বর্তমানে একটি চক্র চলমান থাকায় আইসিসির গড় বার্ষিক আয়ের হিসাব এখনই পাওয়া যাচ্ছে না। তবে চক্রের মধ্যে চলা সব কটি বিশ্বকাপের আয় যোগ হলে সেটি বাড়ারই কথা। যদিও ফিফার ১৮৯ কোটির তুলনায় তা চার ভাগের এক ভাগেরও কম।
সামনে কার কেমন আয়
ইতিমধ্যে ২০২৪-২৭ চক্রের জন্য আয়ের একটি প্রাক্কলন করেছে আইসিসি। ক্রিকেটের বৈশ্বিক সংস্থাটির হিসাব অনুসারে, ২০২৪ থেকে পরবর্তী চার বছর গড়ে ৬০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করবে আইসিসি। এই চার বছরের জন্য ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যে সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রি করেছে তারা। প্রথমবারের মতো ভারতসহ পাঁচটি ভিন্ন অঞ্চলে সম্প্রচার বিক্রি করেছে আইসিসি।
অপর দিকে ফিফার প্রাক্কলন বলছে, ২০২৩-২৬ মেয়াদে ১ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার আয়ের আশা করছে সংস্থাটি, বছরপ্রতি যা ২৭৭ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।