ম্যাচ পাতানোর শাস্তি পাওয়া সেই আরামবাগ ফিরেছে ফুটবলে
ম্যাচ পাতানোর কলঙ্কে শাস্তি পাওয়া আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ আবার ফিরেছে ঘরোয়া ফুটবলে। ১ জুলাই কমলাপুর স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া ঘরোয়া ফুটবলের তৃতীয় স্তর সিনিয়র ডিভিশন ফুটবল লিগে (প্রথম বিভাগ) খেলছে তারা। ১৮ দলের সিঙ্গেল লিগ–ভিত্তিক এই লিগের প্রথম তিনটি ম্যাচই জিতেছে আরামবাগ। স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘকে ৪-০, উত্তর বারিধারাকে ১-০ এবং আজ টিঅ্যান্ডটি ক্লাবকে ১-০ গোলে হারিয়েছে তারা।
২০২০ সালে জানুয়ারিতে শুরু হওয়া ত্রয়োদশ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের প্রথম দিকে আরামবাগ তিনটি ম্যাচে লাইভ বেটিং ও স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িয়েছে বলে অভিযোগ পায় এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি)।
ম্যাচগুলো ছিল মোহামেডান, ঢাকা আবাহনী ও শেখ রাসেলের বিপক্ষে। পরে বাফুফের ডিসিপ্লিনারি কমিটি আরামবাগের বিরুদ্ধে লাইভ বেটিং, স্পট ফিক্সিং, ম্যাচ গড়াপেটা ও অনলাইনে বেটিংয়ের সুস্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছে। এর ভিত্তিতে ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট ক্লাবটির কর্মকর্তা ও দেশি-বিদেশি ১৪ জন খেলোয়াড়কে বিভিন্ন মেয়াদে নিষিদ্ধ করা হয়। ক্লাবের তৎকালীন সভাপতি এম স্পোর্টসের স্বত্বাধিকারী মিনহাজুল ইসলাম, দলীয় ম্যানেজার গওহর জাহাঙ্গীর, ট্রেনার ভারতের মাইদুল ইসলাম শেখ ও সহকারী ম্যানেজার আরিফ হোসেনকে ফুটবলে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়।
ক্লাবের তৎকালীন ভারতীয় ফিজিও সঞ্চয় বোস, খেলোয়াড়দের এজেন্ট ভারতের আজিজুল শেখ ফুটবল থেকে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন তখন। ক্লাবের খেলোয়াড় আপেল মাহমুদকে দেওয়া হয় পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা। তিন বছর করে নিষিদ্ধ হন আবুল কাশেম মিলন, আল আমিন, মো. রকি, জাহিদ হোসেন, রাহাদ মিয়া, সৈকত, শামীম রেজা ও অস্ট্রেলিয়ান স্মিথ। দুই বছর নিষিদ্ধ হন ফুটবলার ওমর ফারুক, রাকিবুল ইসলাম, মেহেদী হাসান ফাহাদ, মিরাজ মোল্লা ও নাইজেরিয়ান চিজোবা ক্রিস্টোফার। অবশ্য আপিলে কারও কারও শাস্তি কমেছে।
সে সময় ক্লাবটি এমনিতেই প্রিমিয়ার লিগ থেকে অবনমিত হয়েছিল। তবে শাস্তি হিসেবে আরামবাগকে দেশের ফুটবলে তৃতীয় স্তর সিনিয়র ডিভিশনে নামিয়ে দেওয়া হয় দুই বছরের জন্য। পরে ক্লাবের আবেদনের ভিত্তিতে সাজার মেয়াদ এক বছর করে বাফুফে।
কিন্তু চাইলেই পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে আরামবাগ সিনিয়র ডিভিশনে খেলতে পারত না। কারণ, ক্লাবটির তৎকালীন ভারতীয় কোচ সুব্রত ভট্টাচার্য ফিফার কাছে নালিশ করেছিলেন যে তাঁর বেতন ঠিকমতো দেয়নি আরামবাগ। বেতন পরিশোধের জন্য ফিফা একটা সময় বেঁধে দিলেও আরামবাগ বেতন দেয়নি। ফলে ২০২২ সালে সিনিয়র ডিভিশনে আরামবাগের খেলোয়াড় নিবন্ধনের ওপর ফিফার নিষেধাজ্ঞা ছিল। ২০২৩ সালে সিনিয়র ডিভিশন লিগ হয়নি। তবে এবার হচ্ছে এবং তাতে অংশ নিচ্ছে আরামবাগ।
আবার কি সেই পাতানো ম্যাচের মতো ফুটবলবিনাশী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যাবে আরামবাগ? ক্লাবটির সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী না বোধক উত্তর দিয়ে সামনে তাকাতে চাইলেন, ‘অতীত পেছনে ফেলে আমরা সামনে তাকাতে চাই। আমরা চাই, ধাপে ধাপে প্রিমিয়ারে ফিরে যেতে। এ ব্যাপারে বসুন্ধরা গ্রুপ আমাদের আর্থিক সহায়তা করছে।’
ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সময় ইয়াকুব আলীই ছিলেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। সেই দায় কি তাঁরও নয়? গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও ইয়াকুব কোনো দায় নিতে রাজি নন, ‘তখন পুরো ব্যাপারটি দেখেছে মিনহাজ। টাকাপয়সা সে দিয়েছে। ভারত থেকে কোচ এবং কোচিং স্টাফ এনেছে। আমরা এর সঙ্গে জড়িত ছিলাম না।’
ম্যাচ পাতানো কলঙ্কের আগে ২০১৯ সালে ক্যাসিনো–বিরোধী অভিযানে আরামবাগ ক্লাবও সিলগালা করা হয়েছিল। ক্যাসিনোর পরে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ ক্লাবটির ৬৬ বছরের সম্মান ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে। অথচ ২০১৮ সালে দেশের শীর্ষ ক্লাবগুলোর টুর্নামেন্ট স্বাধীনতা কাপ জিতেছিল আরামবাগ। যেখানে খেলেছেন শুধু স্থানীয় খেলোয়াড়েরা। ক্লাবের ইতিহাসে সবচেয় বড় সাফল্যের পরই আরামবাগে নেমে আসে আঁধার। আবার কি আলোর দেখা পাবে তারা?