পেলে, ম্যারাডোনা থেকে ইয়ামাল, আন্তর্জাতিক ফুটবলে অল্প বয়সে যত অভিষেক
ইউরো ২০২৪ বাছাইপর্বে গত পরশু রাতে জর্জিয়ার বিপক্ষে বদলি হিসেবে নামেন স্পেনের লামিনে ইয়ামাল। ম্যাচটিতে খেলতে নেমেই স্পেনের ফুটবলের একটি রেকর্ড নিজের করে নেন তিনি। বার্সেলোনার এই তরুণ ফরোয়ার্ড এখন স্পেনের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার। পরশু রাতে যখন তিনি মাঠে নামেন, ইয়ামালের বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর ৫৭ দিন। এর আগে স্পেনের সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলারের রেকর্ডটি ছিল ইয়ামালেরই বার্সেলোনা সতীর্থ গাভির। ২০২১ সালে ১৭ বছর ৬২ দিন বয়সে স্পেন দলে অভিষেক হয়েছিল তাঁর।
১৬ বছর বা এর কম বয়সে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হওয়া আরও কয়েকজন ফুটবলারকে নিয়ে পেছন ফিরে দেখেছে বিবিসি স্পোর্ট।
হ্যারি উইলসন, ওয়েলস
অক্টোবর ২০১৩ সালের কথা। লিভারপুলের হ্যারি উইলসন তখনো ক্লাব দলের হয়ে সিনিয়র বিভাগে কোনো ম্যাচ খেলেননি। সেই সময় বেলজিয়ামের বিপক্ষে ম্যাচে এই মিডফিল্ডারকে নামিয়ে দেন সেই সময়ের ওয়েলস কোচ। উইলসনের বয়স ছিল তখন ১৬ বছর ২০৭ দিন। ওয়েলস দলে গ্যারেথ বেলের রেকর্ড ভাঙেন উইলসন। বেলের চেয়ে ১০৮ দিন কম বয়সে ওয়েলস দলে অভিষেক হয়েছে তাঁর।
সেই সময় উইলসনকে নিয়ে কথা চলছিল যে ইংল্যান্ড দলে তাঁকে ডাকা হতে পারে। দাদার দেশ ইংল্যান্ডে হওয়ায় তাদের হয়ে খেলারও সুযোগ ছিল উইলসনের। কিন্তু বেলজিয়ামের বিপক্ষে ৮৭ মিনিটে তাঁকে মাঠিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয়। ওয়েলসের হয়ে দ্বিতীয় ম্যাচটি খেলার জন্য পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল উইলসনকে।
স্যাম জনস্টন, আয়ারল্যান্ড
মাত্র ১৫ বছর ১৫৩ দিন বয়সে আয়ারল্যান্ডের হয়ে অভিষেক হয় স্যাম জনস্টনের। অভিষেক ম্যাচটা হয়তো তিনি ভুলেই যেতে চাইবেন। ১৮৮২ সালের সেই ম্যাচে যে জনস্টনের দল ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছিল ১৩-০ গোলে। ১৯১০ সালে মারা যাওয়া জনস্টনকে এখনো ইউরোপের দলগুলোর মধ্যে অভিষেক হওয়া সর্বকনিষ্ঠ আন্তর্জাতিক ফুটবলার মনে করা হয়। বেলফাস্টে জন্ম নেওয়া জনস্টন অভিষেকের পর আয়ারল্যান্ডের হয়ে আরও চারটি ম্যাচ খেলেন। তাঁর খেলা ম্যাচগুলোর একটিও জিততে পারেনি আইরিশরা। এই ৫ ম্যাচে তারা খেয়েছে ৪১ গোল, দিতে পেরেছে ৫ গোল।
মার্টিন ওডেগার্ড, নরওয়ে
আর্সেনালের বর্তমান অধিনায়ক মার্টিন ওডেগার্ডের নরওয়ে দলে অভিষেক হয় ২০১৪ সালে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচে। সেই সময় তাঁর বয়স ছিল ১৫ বছর ২৫৩ দিন। পুরো ম্যাচেই খেলেছিলেন তিনি। সেই সময় ক্লাবের হয়ে মাত্র ১৪টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা ছিল ওডেগার্ডের। অভিষেকের সেই বছরই ওডেগার্ড ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়ের রেকর্ড গড়েন। বুলগেরিয়ার বিপক্ষে জয় পাওয়া ম্যাচে মাঠে নেমে রেকর্ডটি গড়েছিলেন তিনি। ২৪ বছর বয়সী ওডেগার্ড কাল পর্যন্ত নরওয়ের হয়ে খেলেছেন ৫১ ম্যাচ।
পেলে, ব্রাজিল
অভিষেকের পরের বছরই বৈশ্বিক তারকা বনে যান পেলে। সেটা ১৯৫৮ বিশ্বকাপে আলো ছড়ানোর কারণে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে ফ্রান্সের বিপক্ষে সেই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হ্যাটট্রিক করেন পেলে। ব্রাজিলকে শিরোপা জেতাতে ফাইনালে স্বাগতিক সুইডেনের বিপক্ষে করেছেন জোড়া গোল। এরপর আরও দুটি বিশ্বকাপে জেতেন পেলে। কিংবদন্তি এই পেলের ব্রাজিল দলে অভিষেক ১৯৫৭ সালের ৭ জুলাই। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৬ বছর ৯ মাস। বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সেই ম্যাচে গোলও করেছিলেন পেলে।
স্যামুয়েল ইতো, ক্যামেরুন
১৯৯৭ সালে স্যামুয়েল ইতো ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়। সেই সময় ১৬তম জন্মদিনের ঠিক আগের দিন কোস্টারিকার কাছে ৫-০ গোলে হেরে যাওয়া ম্যাচে ক্যামেরুন দলে অভিষেক হয় ইতোর। পরবর্তী সময়ে ক্যামেরুনের হয়ে ১১৮ ম্যাচ খেলে ৫৬ গোল করেছেন বার্সেলোনার সাবেক ফরোয়ার্ড। বর্তমানে ক্যামেরুনের ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি ইতো দেশটির ইতিহাসে সর্বকালের সেরা গোলদাতা।
ডিয়েগো ম্যারাডোনা, আর্জেন্টিনা
১৯৭৭ সালে হাঙ্গেরির সঙ্গে এক প্রীতি ম্যাচে আর্জেন্টিনা দলে অভিষেক হয় ম্যারাডোনার। সেই সময় তাঁর বয়স ছিল ১৬ বছর ১২০ দিন। তবে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ম্যারাডোনা প্রথম গোল পেয়েছেন অভিষেকের ২ বছর পর, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। পরে তাঁর নেতৃত্বেই ১৯৮৬ বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে আর্জেন্টিনা। ২০২০ সালে না–ফেরার দেশে পাড়ি জমানো ম্যারাডোনা দেশের হয়ে ৯১ ম্যাচ খেলে করেছেন ৩৪ গোল। ২০০৮ থেকে ২০১০—এ দুই বছর আর্জেন্টিনার কোচের দায়িত্বও পালন করেন ম্যারাডোনা।
লুকাস কেনেত, নর্দার্ন মারিয়ানা আইল্যান্ডস
সর্বকনিষ্ঠ আন্তর্জাতিক ফুটবলার মনে করা হয় নর্দার্ন মারিয়ানা আইল্যান্ডের লুকাস কেনেতকে। ২০০৭ সালে গুয়ামের কাছে ৯-০ গোলের হারের ম্যাচে অভিষেকের দিন কেনেতের বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর ২ দিন। যদিও এ দলটি ফিফার সদস্য নয়। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১২ সালে ওই গুয়ামের বিপক্ষেই নর্দার্ন মারিয়ানা আইল্যান্ডসে ১৪ বছর বয়সী আরও তিনজন ফুটবলারের অভিষেক হয়।