ইতিহাস গড়ার ম্যাচ থেকে খালি হাতে ফিরছে কিংস
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে আশরোর গফুরভের লাল কার্ডটাই এলোমেলো করে দিয়েছিল বসুন্ধরা কিংসকে। ১০ জনের দল নিয়ে ওডিশা এফসি–কে বাকি সময় ঠেকিয়ে রাখাটা ছিল যথেষ্ট কঠিন কাজ। সেটিই করতে ব্যর্থ বাংলাদেশের লিগ চ্যাম্পিয়নরা। ভারতের ভুবনেশ্বরে আজ ওডিশা এফসির কাছে ১–০ গোলে হেরে আবারও এএফসি কাপের গ্রুপ পর্ব পেরোতে ব্যর্থ কিংস।
নিজেদের ইতিহাসেরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ছিল এটা কিংসের জন্য। দেশের ফুটবলে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পর এএফসি কাপের আন্ত–আঞ্চলিক প্লে–অফই ছিল আরাধ্য। ওডিশার বিপক্ষে ১ পয়েন্ট বেশি নিয়ে আজ খেলতে নামা কিংসের জন্য সমীকরণ ছিল সোজা—হার এড়ানো। অর্থাৎ জেতা বা ড্র করা। কিন্তু কিংসের মাঠের পারফরম্যান্স তেমন আশাজাগানিয়া ছিল না।
দলের মূল চালিকাশক্তি তিন ব্রাজিলিয়ান অধিনায়ক রবসন দা সিলভা, দরিয়েলতন গোমেজ আর মিগুয়েল ফেরেইরা ছিলেন নিষ্প্রভ। সেভাবে গোলের সুযোগও তৈরি করতে পারেনি কিংস। প্রথমার্ধের পুরোটা সময় প্রতি–আক্রমণ ফুটবল খেলার পর যোগ করা সময়ে সেই ‘দুর্ভাগ্য’—গফুরভের লাল কার্ড।
মাঝমাঠে ওডিশার এক খেলোয়াড়ের কাছ থেকে বল কাড়তে গিয়েছিলেন তিনি। ফাউল হয়েছিল বটে, কিন্তু সেটি লাল কার্ড দেখার মতো ফাউল কি না, তা নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে। ভিয়েতনামের রেফারি গফুরভকে লাল কার্ড দেখানোর পর সবাই হতভম্ব। অশ্রুসিক্ত হয়ে মাঠ ছাড়েন কিংসের উজবেক ফুটবলার। ডাগ–আউট থেকেও এল প্রতিবাদ। কোচ অস্কার ব্রুজোনের নেতৃত্বে পুরো কোচিং স্টাফ দুই হাত তুলে রেফারির সামনে গিয়ে প্রতিবাদ জানালেন। গতকালই সংবাদ সম্মেলনে ব্রুজোন রেফারিং নিয়ে নিজের শঙ্কার কথা বলেছিলেন। ৫০–৫০ সিদ্ধান্তগুলো তাঁদের বিপক্ষে যাওয়ার শঙ্কা। গফুরভের লাল কার্ডে যেন সেটিই প্রমাণিত!
রেফারির সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েই দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে নেমেছিল কিংস। ১০ জনের দল নিয়ে যে মানসিক দৃঢ়তার প্রয়োজন ছিল, সেটি দেখা গেছে খেলোয়াড়দের মধ্যে। কিন্তু রবসন, দরিয়েলতন, মিগুয়েলদের ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের খামতির কারণে বাড়তি কিছু করতে পারেনি দল। ৬২ মিনিটে প্রতিরোধ ভাঙে কিংসের। কর্নার থেকে হেড করে ওডিশাকে এগিয়ে নেন মুর্তোদা ফল।
এর আগে ৫৫ মিনিটে পেছন থেকে থ্রু পেয়ে প্রায় ফাঁকায় বল পেয়েও গোল করতে পারেননি দরিয়েলতন। কয়েক ম্যাচ ধরেই সহজ সুযোগ নষ্ট করছেন এই ব্রাজিলিয়ান। আজ দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে তিনি সেটারই পুনরাবৃত্তি ঘটালেন। রবসন দা সিলভাও ওডিশার বক্সে প্রায় ফাঁকায় একটা বল পেয়েছিলেন, কিন্তু তিনিও পায়ে পা জড়িয়ে পড়ে গেলেন। শটই নিতে পারেননি তিনি।
অন্যদিকে শুরু থেকেই তেড়েফুঁড়ে খেলছিল ওডিশা। প্রথম ২৫ মিনিটে চারটা কর্নার আদায় করে নেওয়াই তাঁর প্রমাণ। বসুন্ধরা কিংসের রক্ষণও ছিল আঁটসাঁট। তবে মাঝখানে তারিক কাজীর একটা ভুল দলকে বিপদে ফেলেছিল। সেটি অবশ্য সামাল দেওয়া গিয়েছিল। প্রথমার্ধে ওডিশা বেশ কয়েকবারই কিংসের গোলমুখে আক্রমণ তৈরি করেছে। তবে সে হিসেবে পরিষ্কার গোলের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেনি।
প্রথমার্ধের বেশির ভাগ সময়ই কিংস ছিল প্রতি–আক্রমণনির্ভর দল। ২৩ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার দরিয়েলতন গোমেজ বাঁ দিক দিয়ে বল ধরে আড়াআড়ি দিয়েছিলেন বাবুরবেককে। কিন্তু তিনি সেটাকে কাজে লাগাতে পারেননি। ২৯ মিনিটে রাকিব ওডিশার খেলোয়াড়ের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে প্রায় একক প্রচেষ্টায় বল নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন। আশপাশে কাউকে বল না দিয়ে নিজেই গোলে শট নেন। কিন্তু সেই শট ওডিশার গোলকিপারকে খুব একটা বিচলিত করতে পারেনি।
গফুরভের লাল কার্ড নিয়ে প্রশ্ন আছে, তবে তারপরও কথা থেকে যায়। এমন ম্যাচে কিংসও কি খুব ভালো খেলতে পেরেছে? অন্তত গফুরভের লাল কার্ডের আগের ৪৫ মিনিট? উত্তর হবে ‘না’। অন্তত ওডিশাকে শঙ্কায় ফেলার মতো খেলা দেখা যায়নি কিংসের ফুটবলারদের পা থেকে। এবারের এএফসি কাপে প্রথম ম্যাচ হারার পর তিন ম্যাচ জিতেছে তারা। এই ভুবনেশ্বরেই মোহনবাগানের বিপক্ষে একটা ড্র আছে। জয় পাওয়া তিন ম্যাচেই তারা লিখেছে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। কিন্তু আজ সেই আগুনের ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি।
এএফসি কাপ থেকে তাই আবারও খালি হাতে ফিরছে কিংস।