মেসির যে ‘অভিশাপ’ এখনো কাটাতে পারেনি বার্সেলোনা
২ মে ২০২১।
দিনটি কি মনে আছে লিওনেল মেসির? কিংবা বার্সেলোনার? মেসির ক্যারিয়ারে এত গোল আর এত কীর্তি যে নির্দিষ্ট করে কোনো কিছু মনে রাখা কঠিন। আর স্মৃতি ব্যাপারে তো অগ্রাধিকারের অদৃশ্য এক তালিকা থাকে সবারই। মেসির ব্যাপারে যেমন, আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ ও কোপা আমেরিকা জয় কখনো ভুলতে পারবেন না। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে ২০তম গোল কিংবা এমন যেকোনো সাধারণ গোল ভুলে যেতে পারেন এবং সেটাই স্বাভাবিক। আর এ ক্ষেত্রে ঘটেছেও ঠিক তা–ই।
যেদিনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেদিন ভ্যালেন্সিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল বার্সেলোনা। ফ্রি-কিক থেকে সরাসরি গোল করেছিলেন তখনো বার্সার হয়ে খেলা মেসি। তারপর কোনোভাবেই দিনটি এখন লেখার মতো স্মরণীয় হয়ে ওঠার কথা নয়। কারণ, গোলটি ফ্রি-কিক থেকে মেসির আর দশটি গোলের মতোই ছিল। কিন্তু সেই দিন ও সেই গোল স্মরণ করতে হচ্ছে বিশেষ এক কারণে, যা জেনে মোটেও ভালো লাগবে না বার্সার সমর্থকদের।
ভ্যালেন্সিয়ার জালে সেই গোলের প্রায় দুই মাস পর বার্সা ছেড়ে পিএসজিতে নাম লেখান মেসি। কিন্তু ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে তাঁর ফ্রি-কিক থেকে সেই যে গোল, এরপর বার্সার আর কোনো খেলোয়াড় ফ্রি-কিক থেকে সরাসরি প্রতিপক্ষের জালে গোল করতে পারেননি।
কথাটা অবিশ্বাস্য শোনালেও সত্যি—মেসির সেই গোলের পর এই দুই বছরে বার্সা সরাসরি ফ্রি-কিক থেকে আর কোনো গোল পায়নি। চাইলে কালকের দিনটাও মনে করতে পারেন—২ মে। হ্যাঁ, মেসির প্রস্থানের পর বার্সার এই ‘অভিশাপ’–এর কাঁটায় কাঁটায় কাল ছিল দুই বছর পূর্তি!
অভিশাপ? মেসির পাঁড় ভক্তরা আবেগের বশে এভাবে ভেবে নিতে পারেন। মেসি তো বার্সায় থাকতেই চেয়েছিলেন। কিন্তু লা লিগার বেঁধে দেওয়া বেতনসীমা নীতি ও আর্থিক সমস্যার কারণে তাঁকে ধরে রাখতে পারেনি কাতালান ক্লাবটি। ক্যাম্প ন্যু থেকে প্রস্থানের সময় কেঁদেছিলেন কিংবদন্তি। সেই স্মৃতি যাঁদের হৃদয়ে হিরণ্ময় ফ্রেমে গাঁথা আছে, তাঁরা চাইলে কল্পনার রথ ছুটিয়ে বেনফিকাকে দেওয়া বেলা গুটমানের অভিশাপের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে পারেন।
হাঙ্গেরিয়ান কোচ গুটমান আজ থেকে ৫২ বছর আগে অভিশাপ দিয়েছিলেন পর্তুগিজ ক্লাব বেনফিকাকে। ১৯৬০ সালে দায়িত্ব নিয়েই ইউসেবিওদের বেনফিকাকে গুটমান নিয়ে যান অন্য উচ্চতায়। ১৯৬১ ও ১৯৬২ সালে টানা দুই বছর বার্সা-রিয়ালকে হারিয়ে জেতেন ইউরোপিয়ান কাপ।
অভাবিত এই সাফল্যের পর হাঙ্গেরিয়ান কোচ তাঁর বেতন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু ক্লাব কর্তৃপক্ষ অস্বীকৃতি জানায়। ক্ষিপ্ত গুটমান ক্লাব ছেড়ে যাওয়ার সময় অভিশাপ দিয়ে গিয়েছিলেন, ‘আগামী ১০০ বছরেও বেনফিকা কোনো ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতা জিততে পারবে না।’ কী অবিশ্বাস্য! সেই অভিশাপের পর বেনফিকা কিন্তু এখনো ইউরোপে সাফল্য পায়নি।
মেসি ও বার্সার ক্ষেত্রে বিষয়টি সরাসরি অভিশাপ বলা যায় না। বার্সা মেসির ভালোবাসার ক্লাব। এই ক্লাবে খেলেই তিনি কিংবদন্তি, মেসি এই ক্লাবে খেলার কারণে বার্সাও ইউরোপে রাজত্ব করেছে একসময়। কিংবদন্তির সঙ্গে বিচ্ছেদটা সম্ভবত বার্সাও চায়নি। কিন্তু কখনো কখনো কোনো কিছুই কারও হাতে থাকে না। মেসির ক্ষেত্রে তেমন কিছু ঘটেছে, তা ধরে নিয়েও বলা যায়, কিংবদন্তি যখন চলে যান, তখন তাঁর মনে সম্ভবত এই প্রশ্ন জেগেছিল, ‘চাইলে কি ওরা আমাকে ধরে রাখতে পারত না!’
আর্জেন্টাইনের মনের ভেতর এমন কোনো অপ্রাপ্তি জমা থাকতে পারে, সেটা তাঁর ভক্তরা ভেবে নিতেই পারেন। আর দুই বছর ধরে বার্সা ফ্রি-কিকে যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাতে দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে অনেকে ‘অভিশাপ’ বলতেই পারেন।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘এএস’ বার্সার এই ফ্রি-কিক থেকে গোল না পাওয়াকে শিরোনামে অভিশাপই বলেছে—‘দ্য কার্স অব লিওনেল মেসি’। স্পেনের আরেক সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা’ সংখ্যাটা জানিয়ে দিয়েছে। কোন সংখ্যা?
ফ্রি-কিক থেকে মেসির সেই গোলের পর এ পর্যন্ত ৪১টি ফ্রি-কিক পেয়েছে বার্সা—একটিতেও গোল হয়নি। এ সময়ে বার্সা কোনো ফ্রি–কিকে মেসির মতো বিশেষজ্ঞ কাউকে পায়নি কিংবা সেভাবে কাউকে গড়েও তোলেনি। এ সময়ে বার্সার ১০৪ ম্যাচে মোট ১১ জন খেলোয়াড় ফ্রি–কিক নিয়েছেন, কিন্তু কেউ মেসি হতে পারেননি, মানে গোল পাননি। সবচেয়ে বেশিবার চেষ্টা করেছেন রাফিনিয়া—৯ বার। ৮ বার ফ্রি–কিক নিয়েছেন রবার্ট লেভানডফস্কি।