মেসির পাস থেকে মার্তিনেজের চোখধাঁধানো গোলে জিতল আর্জেন্টিনা

শূন্যে ভেসে আছেন লাওতারো মার্তিনেজ। কিক নেওয়ার পরের মুহূর্তের ছবি। এই কিক থেকেই গোল পেয়েছেনএএফপি

আর্জেন্টিনা ১–০ পেরু

বক্সের আশপাশে লিওনেল মেসিকে ওভাবে বল নিয়ে ঘুরতে দেখা নতুন কিছু নয়। বিপদ আঁচ করতে পেরে পেরুর দুই ডিফেন্ডার তাঁকে দুই পাশ থেকে আটকানোর চেষ্টা করেন। ছুটে আসেন আরও এক ডিফেন্ডার। কয়েক মুহূর্তের জন্য ত্রিভুজ আকৃতির সেই রক্ষণজালের ঠিক মাঝে মেসি। ততক্ষণে বক্সের ভেতরে ওত পেতে দাঁড়িয়ে যান লাওতারো মার্তিনেজ। হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন কিছু একটা হবেই। মেসিকে তো তাঁর চেনা! ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, পঞ্চভুজ, ষড়ভুজ—প্রতিপক্ষের রক্ষণ যেমনই হোক, বক্সের বাঁ প্রান্ত থেকে মেসি বলটা মাঝে ফেলতে পারবেন না, তা হয় না। আর মেসিও যেন আরও এক কাঠি সরেস। মার্তিনেজ কোথায় দাঁড়িয়ে সেটি কীভাবে বুঝলেন, কে জানে! বাঁ পা দিয়ে বলটা যেন চিপ করলেন, বাতাসে ভাসতে ভাসতে সেই বল যখন মার্তিনেজের সামনে, করণীয়টা বুঝে ফেলেছিলেন ইন্টার মিলান স্ট্রাইকারও।

আরও পড়ুন

শূন্যে লাফিয়ে চলন্ত বলেই বাঁ পায়ের কিক নেন মার্তিনেজ। বল পেরু গোলকিপার পেদ্রো গ্যালেসে তাঁর বাঁ দিকে ডাইভ দিয়েও কিছু করতে পারেননি। গোল! ৫৫ মিনিটে মার্তিনেজের এই গোলেই শেষ পর্যন্ত পেরুর বিপক্ষে ১–০ গোলের জয় তুলে নিয়েছে আর্জেন্টিনা। সর্বশেষ ম্যাচে প্যারাগুয়ের কাছে হারের পর আবারও জয়ের পথে ফিরল লিওনেল স্কালোনির দল।

মার্তিনেজের শটটিকে ঠিক সিজার কিকও বলা যায় না। বাইসাইকেল তো নয়ই। আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ‘ক্লারিন’ জানিয়েছে ‘পিরোয়েত’ শট। তারা আরও জানিয়েছে, মার্তিনেজের গোলটি আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের ইতিহাসে ১ হাজার ৯৯৯তম গোল। মেসি নিজেও ভাগ বসিয়েছেন একটি রেকর্ডে। ছেলেদের আন্তর্জাতিক ফুটবলে যুক্তরাষ্ট্রের কিংবদন্তি ল্যান্ডন ডনোভানের গড়া সর্বোচ্চ গোল বানানোর রেকর্ডে (৫৮) ভাগ বসিয়েছেন মেসি।

আরও পড়ুন

প্যারাগুয়ের মাঠে গিয়ে আগের ম্যাচটি ২–১ গোলে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। বুয়েনস এইরেসে ঘরের মাঠ লা বোমবেনারো স্টেডিয়ামে জয়ে ফিরতে মরিয়া ছিল স্কালোনির দল। বোকা জুনিয়র্সের এই মাঠে জাতীয় দলের খেলা দেখতে গিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার সাবেক মিডফিল্ডার হুয়েন রোমান রিকেলমে। শুরু থেকেই আর্জেন্টিনা যে দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছে, তা নয়। তবে জয়ের খিদেটা বোঝা গেছে ম্যাচের পুরো সময়েই।

পেরুর গোলপোস্ট তাক করে পুরো ম্যাচে আর্জেন্টিনার ৩টি শট নেওয়ার পরিসংখ্যানে অবশ্য ব্যাপারটা পুরোপুরি বোঝা যায় না। পেরু অবশ্য একটি শটও নিতে পারেনি। ২টি শট নিলেও তা পোস্টে ছিল না। আর্জেন্টিনা নিয়েছে মোট ১০টি শট। এর মধ্যে প্রথমার্ধে মার্তিনেজের পাস থেকে একটি শট পোস্টে মেরেছেন হুলিয়ান আলভারেজ।

মার্তিনেজকে দারুণ পাসে গোল বানিয়ে দেন মেসি
এএফপি

প্রথমার্ধের ৪ মিনিটেই নিকোলাস তালিয়াফিকো গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁর শট পোস্টের ওপর দিয়ে যায়। ২২ মিনিটে মেসির ৩৫ গজ দূরত্বের শটেরও একই ভাগ্য হয়েছে। এর ২ মিনিট পরই অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারও পোস্টের বাইরে হেড করেন। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ২ মিনিট আগে মেসির শট রুখে দেন গ্যালেসে। এই অর্ধের যোগ করা সময়েও ম্যাক অ্যালিস্টার হেড করেছেন পোস্টের বাইরে।

আরও পড়ুন

গোল পেতে মরিয়া আর্জেন্টিনার পোস্টের বাইরে বল মারার ‘বদভ্যাস’ বজায় ছিল ৬১ মিনিটেও। এবারে মার্তিনেজ। তবে তার আগেই গোল করে ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে ছুঁয়ে ফেলেন মার্তিনেজ। আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডল ‘সিলেকশন আর্জেন্টিনা’ থেকে করা পোস্টে জানানো হয়, মার্তিনেজ এবং ম্যারাডোনার গোলসংখ্যা এখন সমান, ৩২। দুজনেই এখন আর্জেন্টিনার জার্সিতে পঞ্চম সর্বোচ্চ গোলদাতা।

মার্তিনেজের গোলের পর তাঁকে বুকে টেনে নেন মেসি
এএফপি

দ্বিতীয়ার্ধের শেষ ২০ মিনিটে মেসি ও মার্তিনেজ আরও দুটি গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি। জয়ের পাশাপাশি ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে দক্ষিণ আমেরিকান অঞ্চল থেকে শীর্ষস্থান নিয়েও বছর শেষ করল আর্জেন্টিনা। ১২ ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে স্কালোনির দল। সমান ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় উরুগুয়ে। ব্রাজিলের সঙ্গে আজ ১–১ গোলে ড্র করেছে মার্সেলো বিয়েলসার দল।

দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চল থেকে পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষ ৬ দল সরাসরি খেলবে বিশ্বকাপে। সপ্তম দলটিকে দিতে হবে প্লে অফ পরীক্ষা।