সালাহই কি আধুনিক যুগে লিভারপুলের সেরা
প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের কাছে তিনি ছিলেন এক আতঙ্কের নাম। লিভারপুলের হয়ে দ্রুততম ১০০ গোল করেছেন। নব্বইয়ের দশকে ক্লাব যখন দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, কত জাদুকরি মুহূর্তই না মাঠে উপহার দিয়েছেন রবি ফাউলার।
দুই মেয়াদে লিভারপুলের হয়ে ৩৬৯ ম্যাচ খেলে সব মিলিয়ে করেছেন ১৮৩ গোল। এই গোলের ১২৮টি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে, যা গত রোববারের আগপর্যন্ত লিভারপুলের খেলোয়াড়দের মধ্যে ছিল সর্বোচ্চ।
রোমা থেকে ২০১৭ সালে লিভারপুলে নাম লেখানো সালাহ সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে লিভারপুলের হয়ে ২৯১ ম্যাচ খেলে করেছেন ১৭৮ গোল। আর ৬টি গোল পেলেই ছাড়িয়ে যাবেন ফাউলারকে।
রোববার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ৭-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দেওয়া ম্যাচে মোহাম্মদ সালাহ লিভারপুলের হয়ে করেছেন জোড়া গোল। এই জোড়া গোলে ফাউলারকে পেছনে ফেলে লিভারপুলের হয়ে লিগে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ডটি নিজের করে নিয়েছেন সালাহ। মিসরের ফরোয়ার্ড এই গোল করেছেন ২০৫ ম্যাচ খেলে। আর ফাউলার ১২৮ গোল করতে খেলেছেন ২৬৬ ম্যাচ।
ফাউলারের রেকর্ড মিসরীয় তারকা নিজের করে নেওয়ার পর একটি আলোচনা চলছে ফুটবল–বিশ্বে—লিভারপুলের গোলের রাজাদের মধ্যে সালাহর অবস্থান আসলে কোথায়?
রোমা থেকে ২০১৭ সালে লিভারপুলে নাম লেখানো সালাহ সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে লিভারপুলের হয়ে ২৯১ ম্যাচ খেলে করেছেন ১৭৮ গোল। আর ৬টি গোল পেলেই ছাড়িয়ে যাবেন ফাউলারকে। সব মিলিয়ে কেউ কেউ বলছেন, লিভারপুলের ঘরের ছেলে ফাউলারকে সরিয়ে ক্লাবটির সর্বকালের সেরা ফরোয়ার্ড হিসেবে ভক্ত-সমর্থকদের মনে জায়গা করে নেবেন সালাহ।
প্রিমিয়ার লিগে সালাহর গোল করার শুরু ২০১৩-১৪ মৌসুমে, চেলসির হয়ে। ২০১৪-১৫ মৌসুমে ধারের চুক্তিতে ফিওরেন্তিনায় নাম লেখানোর আগে চেলসির হয়ে ১৯ ম্যাচ খেলে তাঁর গোল দুটি। দুটিই প্রিমিয়ার লিগে। সেই দুই গোলেই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন নিজের জাত।
সালাহ আবার প্রিমিয়ার লিগে ফেরেন ২০১৭ সালে। সে বছর রোমা থেকে লিভাপরপুলে নাম লেখানোর পর প্রথম মৌসুমেই প্রিমিয়ার লিগে ৩৬ ম্যাচে করেন ৩২ গোল, সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫২ ম্যাচে ৪৪টি। এত গোল না পেলেও সালাহর গোলের এই ধারায় ছেদ পড়েনি কোনো মৌসুমেই।
প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় ১৫ নম্বরে উঠে এসেছেন সালাহ। যেখানে ২৬০ গোল নিয়ে সবার ওপরে আছেন অ্যালান শিয়ারার। বর্তমানে খেলছেন, এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে সালাহর ওপরে আছেন শুধু দুজন। ১৩৪ গোল নিয়ে ১৪তম স্থানে আছেন জেমি ভার্ডি। আর তৃতীয় স্থানে থাকা হ্যারি কেইনের গোল ২০১টি।
প্রিমিয়ার লিগে কিংবদন্তি ফরোয়ার্ডদের মধ্যে সালাহকে আসলে কোন জায়গায় রাখবেন ফুটবলপ্রেমীরা? গোলের সংখ্যা ছাড়া এটা বিচারের মাপকাঠি সেভাবে খুব বেশি নেই। এ ছাড়া সমর্থকেরা তাদের নিজেদের ক্লাবের খেলোয়াড়কেই এগিয়ে রাখতে চান। কিন্তু এটা সত্যি যে প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় থাকা খেলোয়াড়দের মধ্যে সালাহ একটু অন্য রকমই।
তালিকার প্রথম ২০ জনের মধ্যে সালাহ ছাড়া আর দুজনই শুধু ট্র্যাডিশনাল নাম্বার নাইন নন। একজন ওয়েইন রুনি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক ফরোয়ার্ড ৯ নম্বর জার্সি পরে খেলেছেন, ১০ নম্বর জার্সির পরেছেন, এমনকি সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবেও খেলেছেন। আরেকজন ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড, যিনি মূলত খেলেছেন আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে। আর এখন সালাহ, যিনি মূলত ডান উইংয়ে খেলেন।
তবে সালাহর লিগ শিরোপা, তিনটি গোল্ডেন বুট জেতা তিনজন খেলোয়াড়দের একজন হওয়া, তাঁর অ্যাসিস্ট, তাঁকে ঘিরে দলের আবর্তনে তাঁর প্রভাব এবং ৬ মৌসুমে যে ধারাবাহিকতা—সব মিলিয়ে নিশ্চিত করেই প্রিমিয়ার লিগের আধুনিক যুগে তিনি অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড।
লিভারপুল আর তাদের সমর্থকদের জন্য এখন বড় একটা প্রশ্ন হতে পারে, ফাউলারকে প্রিমিয়ার লিগের গোলসংখ্যায় ছাড়িয়ে যাওয়া সালাহ কি এককভাবে শীর্ষে থাকবেন? সালাহর গোলসংখ্যাই শুধু যে তাঁর পক্ষে কথা বলে তা নয়; তাঁর মান, ধারাবাহিকতা আর দলে অপরিহার্যতা—এগুলো ১১ নম্বর জার্সি পরা মিসরীয় ‘রাজা’র পক্ষে বাড়তি নম্বর যোগ করে!
তা ছাড়া শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সালাহর গোলের ধারাও অন্য অনেকের চেয়ে তাঁকে এগিয়ে রাখবে। বিশেষ করে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে সালাহর গোল পাওয়ার ধারাবাহিকতা আছে। লিভারপুলের তুমুল প্রতিপক্ষ ইউনাইটেডের বিপক্ষে সব মিলিয়ে ১২ গোল করেছেন সালাহ, যার ১০টিই লিগে। ইউনাইটেডের বিপক্ষে এত গোল লিভারপুলের আর কোনো খেলোয়াড় করতে পারেননি। ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষেও তাঁর গোল ১০টি।
সিটির বিপক্ষে সালাহর চেয়ে বেশি গোল আছে লিভারপুলের আর তিনজনের—গর্ডন হজসন, কেনি ডালগ্লিস ও ইয়ান রাশ। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সিটির তখন এমন রমরমা অবস্থা ছিলই না। সাম্প্রতিক সময়ের তারকাদের মধ্যে লুইস সুয়ারেজ আর ফার্নান্দো তোরেসও লিভারপুলের হয়ে অসাধারণ সময় কাটিয়েছেন। কিন্তু অ্যানফিল্ড ছাড়ার আগে লিভারপুলের হয়ে চারটি করে মৌসুম খেলে তোরেস করেছেন ৮১ গোল আর সুয়ারেজ ৮২টি।
প্রিমিয়ার লিগের গোলসংখ্যায় সালাহ এরই মধ্যে ফাউলারকে ছাড়িয়ে গেছেন। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়েও আধুনিক যুগে লিভারপুলের সবচেয়ে সমর্থক-প্রিয় তারকাকে হয়তো শিগগিরই ছাড়িয়ে যাবেন তিনি। তাহলে আধুনিক যুগে সালাহকে অ্যানফিল্ডের সেরা বলতে আর বাধা কোথায়!