ফিফাকে ধর্মঘটের হুমকি ফুটবলারদের, কারণ ঠাসা সূচি
এমনিতেই ফুটবলে ঠাসা সূচি। তার ওপর ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের কারণে সামনের মৌসুমে ম্যাচের সংখ্যা বাড়তে যাচ্ছে আরও। এত দিন এই প্রতিযোগিতা ৭টি দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হলেও আগামী বছর ১৫ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া ক্লাব বিশ্বকাপ হবে ৩২টি দল নিয়ে। বিভিন্ন লিগ ও পেশাদার খেলোয়াড়দের সংগঠন (পিএফএ) এ মাসের শুরুতে অভিযোগ তুলেছিল, ক্লাব বিশ্বকাপ তাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে ফিফা। আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও দিয়েছিল তারা। এবার এল ধর্মঘটের হুমকি।
পিএফএর প্রধান নির্বাহী মাহেতা মোলাঙ্গো গতকাল বলেছেন, ঠাসা সূচির প্রতিবাদে খেলোয়াড়েরা ধর্মঘটে যেতে প্রস্তুত—এমন সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে ফিফাকে। খেলোয়াড়দের বৈশ্বিক ইউনিয়ন ফিফপ্রো এ নিয়ে ফিফার বিরুদ্ধে যৌথ আইনি লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ইউরোপের বিভিন্ন লিগকে পাশে পাচ্ছে ফিফপ্রো, যাদের মধ্যে আছে লা লিগা এবং ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগও।
ক্লাব বিশ্বকাপের নতুন সংস্করণ ৩২ দলের হওয়ায় এই প্রতিযোগিতায় ম্যাচের সংখ্যা এমনিতেই বাড়বে। ফিফার এমন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পিএফএ, সিরি আ, লা লিগা ও প্রিমিয়ার লিগের কর্তারা একসঙ্গে বসেছিলেন। মাহেতা মনে করেন, খেলোয়াড়েরা সহ্যের শেষ সীমায় পৌঁছে গিয়েছেন। তাঁর মতে, ঠাসা সূচি খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে এবং খেলার মানও কমেছে।
মাহেতা বলেছেন, ‘বেশি দিন নয়, মাত্র ১০ দিন আগে একটা ড্রেসিংরুমের ঘটনা বলতে পারি। ঠাসা সূচির সরাসরি প্রভাব ছিল ওই ড্রেসিংরুমে। আমি (খেলোয়াড়দের) বললাম, এখানে এসে ভালো লাগছে, হয়তো উচ্চবাচ্যও করতে পারি একটু। কিন্তু এটা (ঠাসা সূচির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ) সম্পূর্ণ তোমাদের ওপর। তোমরা ঠিক কতদূর যেতে চাও? উত্তরে কেউ কেউ বলল, “অনেক হয়েছে, আমরা ধর্মঘটেও যেতে পারি।” অন্যরা বলল, “মানেটা কী? হ্যাঁ, আমি হয়তো কোটিপতি। কিন্তু টাকা খরচ করার সময়টাই তো নেই আমার।’”
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় খেলোয়াড়দের ম্যাচের সংখ্যা বেড়েছে। নতুন নতুন প্রতিযোগিতা চালু হয়েছে। অথবা নতুন প্রতিযোগিতাকেই কলেবরে বড় করা হয়েছে। খেলোয়াড় থেকে কোচেরাও বলেছেন, চাপটা অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে। মাহেতা এ নিয়ে বলেছেন, ‘ইউনিয়ন নয়, ইয়ুর্গেন ক্লপ ও পেপ গার্দিওলাই এ নিয়ে কথা বলেছেন। আমরা এমন একটি জায়গায় পৌঁছেছি, যেকোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভাবনাটা যেখান থেকে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।’
ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা যদি নিজেদের অবস্থান থেকে সরে না আসে তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে—এমন হুমকি দেওয়া অব্যাহত রেখেছে ফিফপ্রো, পিএফএ এবং ওয়ার্ল্ড লিগ অ্যাসোসিয়েশেন (ডব্লিউএলএ)। ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো এবং জেনারেল সেক্রেটারি ম্যাথিয়াস গ্রাফস্টর্মকে এ নিয়ে তারা চিঠিও পাঠিয়েছে। সেই চিঠিতে ক্লাব বিশ্বকাপে দল বাড়ানোর প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
ফিফা অবশ্য নিজেদের অবস্থানে অনড়। ক্লাব বিশ্বকাপ চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তারা অস্বীকার করেছে। ডব্লিউএলএ ও ফিফপ্রোকে পাঠানো চিঠিতে ফিফার সেক্রেটারি জেনারেল ম্যাতিয়াস গ্রাফস্টর্ম দাবি করেছেন, আন্তর্জাতিক সূচি নিয়ে ব্যাপকভাবে সবার সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। চিঠিতে গ্রাফস্টর্ম লিখেছেন, ‘পর্যাপ্ত আলোচনা ছাড়াই নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থে ফুটবল-সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর ওপর ফিফার আন্তর্জাতিক ম্যাচের সূচি (আইএমসি) চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আমরা শুরু থেকেই প্রত্যাখ্যান করছি।’
কিন্তু মাহেতার কথা শুনলে মনে হবে ব্যাপারটা আরও জটিল হচ্ছে। অন্তত ফিফার সঙ্গে এসব সংগঠনগুলোর আলোচনার টেবিলে বসে সমাধান বের করার রাস্তাটা সম্ভবত বের যাচ্ছে না। মাহেতা তাই বলেছেন, ‘ফিফা এবং উয়েফার কিছু পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ফুটবলে বাধ্য হয়েই কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। যেটা ঘটেছে তাতেই পরিষ্কার যে কিছু একটা করতে হবে। আমরা কূটনৈতিক রাস্তাগুলো খোলা রেখেছি। চিঠি পাঠিয়েছি। সেটার উত্তরও পেয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সময় আমাদের পক্ষে নেই। কখনো কখনো দুজন পুর্ণবয়স্ক মানুষ খুব চেষ্টা করেও সমাধান বের করতে না পারলে তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজন হয়, সেটা হতে পারে একজন সালিসকারী কিংবা বিচারসভা।’