চলে গেলেন ১৯৭৪ বিশ্বকাপজয়ী জার্মান দলের হোলৎসেনবাইন
একে একে নিভিছে দেউটি!
হেইঞ্জ ফ্লোহে (২০১৩) নিভেছেন সবার আগে। তারপর গার্ড মুলার (২০২১), ইয়ুর্গেন গ্রাবোস্কি (২০২২), ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার (২০২৪) এবং গতকাল (স্থানীয় সময়) নিভলেন বার্নড হোলৎসেনবাইন। তাঁরা সবাই জার্মানির ১৯৭৪ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য।
সেই দলটিরই ষষ্ঠজন হিসেবে হোলৎসেনবাইনের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছে তাঁর দীর্ঘদিনের ক্লাব আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্ট। ’৭৪ বিশ্বকাপজয়ী জার্মানির সেই দলটির কোচ হেলমুট শোন মারা গেছেন ১৯৯৬ সালে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ বিবৃতিতে ফ্রাঙ্কফুর্ট লিখেছে, ‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বার্নড হোলৎসেনবাইনের চলে যাওয়ায় আইনট্রাখট পরিবার শোকাহত। খেলোয়াড় হিসেবে তিনি আইনট্রাখটের হয়ে চারটি শিরোপা জিতেছেন। আইনট্রাখটের জার্সিতে বুন্দেসলিগায় তাঁর ১৬০ গোল সম্ভবত কেউ ছুঁতে পারবে না। তাকে করা একটি ফাউল স্থান পেয়েছে ইতিহাসের প্রতিটি বইয়ে, তার অসংখ্য গোলের মধ্যে একটি গোল ভুলে যাওয়ায়ও অসম্ভব...বার্নড হোলৎসেনবাইনের নাম যখনই উচ্চারিত হবে, আইনট্রাখট পরিবার এসব স্মরণ করবে। আইনট্রাখটের এই কিংবদন্তি ২০২৪ সালের ১৫ এপ্রিল মারা গেছেন।’
হোলৎসেনবাইন আইনট্রাখটের বুন্দেসলিগা ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা। ক্লাবটির ইতিহাসে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। তবে জার্মান ফুটবলে তিনি চিরস্মরণীয় ১৯৭৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে সেই ফাউলটি নিয়ে। মিউনিখের সেই ফাইনালে ইয়োহান ক্রুইফ ও নেসকেন্সদের সোনালি প্রজন্ম তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে ২ মিনিটে এগিয়ে গিয়েছিল।
২৫ মিনিটে হোলৎসেনবাইন নেদারল্যান্ডসের বক্সে ফাউলের শিকার হওয়ায় পেনাল্টি পেয়েছিল পশ্চিম জার্মানি। সেখান থেকে গোল করে দলকে সমতায় ফিরিয়েছিলেন পল ব্রাইটনার। পরে মুলারের গোলে ২-১ ব্যবধানের জয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় পশ্চিম জার্মানি।
ডাচ সমর্থকেরা সেই পেনাল্টির জন্য হোলৎসেনবাইনকে সব সময় দুষেছে। তাঁর বিরুদ্ধে ডাইভ দেওয়ার অভিযোগ করেছে তারা। কিন্তু হোলৎসেনবাইন সব সময় আত্মপক্ষ সমর্থন করে দাবি করেছেন, ওটা ‘পরিষ্কার পেনাল্টি।’
১৯৭৬ ইউরো ফাইনালে সাবেক চেকোস্লোভাকিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের ৮৯ মিনিটে হোলৎসেনবাইনের গোলে ২-২ ব্যবধানে সমতায় ফিরেছিল পশ্চিম জার্মানি। পরে টাইব্রেকারে ৫-৩ গোলে হেরে যায় তারা।
ক্লাব পর্যায়ে ক্যারিয়ারের সিংহভাগ সময় কাটিয়েছেন আইনট্রাখটে। তিনটি জার্মান কাপ এবং উয়েফা কাপ জিতেছেন ১৪ বছরের ক্যারিয়ারে। জাতীয় দলের (১৯৭৩–১৯৭৮) জার্সিতে ৪০ ম্যাচে করেছেন ৫ গোল।
১৯৮১ সালে ফ্রাঙ্কফুর্ট ছেড়ে পাড়ি দেন যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া ফুটবলে। সেখানে লডারহিল স্ট্রাইকার্স, মেম্ফিস আমেরিকানস ও বাল্টিমোর ব্লাস্টের হয়ে খেলেছেন সাবেক এই স্ট্রাইকার। উইঙ্গার হিসেবেও খেলেছেন হোলৎসেনবাইন। বাসচালকের ছেলে থেকে ফুটবল দিয়ে জীবন পাল্টানো হোলৎসেনবাইন আইনট্রাখটে ফিরে ক্লাবটির স্কাউট (প্রতিভা অন্বেষণকারী) ও সহসভাপতি হিসেবেও কাজ করেছেন।
১৯৭৯ উয়েফা কাপ দ্বিতীয় রাউন্ডে বুখারেস্টের বিপক্ষে ফিরতি লেগে হোলৎসেনবাইনের মজার একটি গোল স্মরণীয় হয়ে আছে। ফ্রাঙ্কফুর্টে বৃষ্টিস্নাত সে ম্যাচে মাঠ বেশ পিচ্ছিল ছিল। বুখারেস্ট গোলকিপার একটি হেড থেকে আসা বল ধরতে গিয়ে হাতে রাখতে পারেননি। ওই মুহূর্তে হোলৎসেনবাইন বেশ এগিয়ে আসতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গিয়ে মাঠে বসে পড়ার অবস্থায় ছিলেন। বলটা গোলকিপারের হাত থেকে মাথা বরাবর পড়তেই আলতো হেডে গোল করেন। কেউ কেউ সেই গোলকে বলেন ‘সিটিং হেডার’।