ফুটবলে বছরের ‘খলনায়কেরা’

ফুটবলে বছরের তিন ‘খলনায়ক’ জর্ডান হেন্ডারসন, লুইস রুবিয়ালেস ও দানি আলভেজইনস্টাগ্রাম

বছরের শেষ ভাগে এসে শুরু হয়েছে সালতামামির প্রস্তুতি। এরই মধ্যে ফুটবল মঞ্চে বছরের সেরা খেলোয়াড় ও ইতিবাচক ঘটনাগুলো নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আয়োজনও। সম্প্রতি বিবিসি যেমন স্পোর্টস পারসোনালিটি অব দ্য ইয়ারের পুরস্কার ঘোষণা দিয়েছে। তবে বছরজুড়ে শুধু যে ইতিবাচক ঘটনা ঘটেছে, তা নয়। এর মধ্যে প্রচুর নেতিবাচক ঘটনার সাক্ষীও হয়েছে ফুটবল–বিশ্ব। কিছু কিছু ঘটনা কলঙ্কিত করেছে ফুটবলকে।

বছরের শুরুতে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন বার্সেলোনা ও ব্রাজিল তারকা দানি আলভেজ। নারী বিশ্বকাপ ফাইনালে স্প্যানিশ ফুটবলার হেনি হেরমোসোকে ঠোঁটে চুমু খেয়ে বিতর্কের জন্ম দেন স্প্যানিশ ফুটবলের সভাপতি লুইস রুবিয়ালেস। এ ঘটনায় শেষ পর্যন্ত ফিফা কর্তৃক বরখাস্তই হন রুবিয়ালেস। এ ছাড়া অন্যদের মধ্যে ইংলিশ ফুটবলের অন্যতম ‘আইকন’ জর্ডান হেন্ডারসনের সৌদি আরবে যাওয়ার ঘটনাও জন্ম দিয়েছে বিতর্কের। এ বছরের ফুটবলে তেমনই কয়েকজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে নিয়ে এ আয়োজন।

আরও পড়ুন

দানি আলভেজ

ঘটনার সূত্রপাত গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরে। অভিযোগ ওঠে, সেদিন বার্সেলোনার একটি নৈশ ক্লাবে এক নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবল তারকা দানি আলভেজ। তাৎক্ষণিকভাবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন আলভেজ। তবে এতেও রক্ষা হয়নি তাঁর। ২০ জানুয়ারি আলভেজকে আটক করে বার্সেলোনা পুলিশ। এর পর থেকে বছরজুড়ে আলোচনায় ছিলেন সাবেক এই বার্সেলোনা তারকা। জবানবন্দিতে তিন রকম কথা বলার পর তাঁর বড় শাস্তি পাওয়ার গুঞ্জনও সামনে আসে। শুরুতে স্ত্রীকে পাশে পেলেও পরিস্থিতি বদলাতে সময় লাগেনি।

৩৯ বছর বয়সী আলভেজ ক্যারিয়ারে দুই মেয়াদে বার্সেলোনায় খেলেছেন

একপর্যায়ে স্ত্রীও মুখ ফিরিয়ে নেন আলভেজের কাছ থেকে। আলভেজের স্ত্রী হোয়ানা সাঞ্জ বিচ্ছেদের ঘোষণাটা নিজেই জানান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এর পর থেকে অনেকটা নিঃসঙ্গভাবেই নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে লড়ছেন আলভেজ। যদিও আইনি লড়াইয়ে আলভেজ মোটেই সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তাঁকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীর আইনজীবী। আগামী বছরের ৫–৭ ফেব্রুয়ারি স্পেনের আদালতে শুরু হবে আলভেজের বিচারকাজ। মূলত বড় ধরনের অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার কারণেই ফুটবলের বর্ষসেরা খলনায়কদের তালিকায় ওপরের দিকে থাকবেন আলভেজ।

আরও পড়ুন

লুইস রুবিয়ালেস

২০ আগস্ট সিডনিতে নারী বিশ্বকাপ ফাইনালের পর থেকে আলোচনায় স্প্যানিশ ফুটবল সভাপতি লুইস রুবিয়ালেস। ফাইনাল শেষে পুরস্কার মঞ্চে হেরমোসোর ঠোঁটে রুবিয়ালেস চুমু খাওয়ার পর থেকেই মূলত বিশ্ব ফুটবলে বিতর্কের ঝড় ওঠে। শুরুটা সমালোচনা দিয়ে হলেও পরে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়। চুমু-কাণ্ডের ঘটনায় রুবিয়ালেসের বিরুদ্ধে মামলা করেন হেরমোসোও। দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে উপস্থিত হয়ে তিনি অভিযোগ দায়ের করেন।

এ ঘটনায় অবশ্য শুরু থেকেই নিজের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন রুবিয়ালেস। তবে একপর্যায়ে চতুর্মুখী চাপে দায়িত্ব ছাড়তে বাধ্য হন রুবিয়ালেস। শুধু স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতির পদ থেকেই নয়, উয়েফার নির্বাহী কমিটির সহসভাপতির পদ থেকেও সরে দাঁড়ান তিনি। ফিফাও তাঁকে ফুটবলীয় কার্যক্রম থেকে বরখাস্ত করে। এ ঘটনায় বর্ষসেরা প্রতিনায়কদের তালিকাতেও জায়গা হয়েছে রুবিয়ালেসের।

নারী বিশ্বকাপের বিজয়মঞ্চে হেরমোসোর ঠোঁটে চুমু দেন রুবিয়ালেস
টুইটার

জর্ডান হেন্ডারসন

এ বছর ফুটবলে বড় বিপ্লব নিয়ে এসেছে সৌদি আরব। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে দিয়ে শুরুটা হলেও গ্রীষ্মকালীন দলবদলে ইউরোপ থেকে একের পর এক তারকা পাড়ি জমিয়েছেন সৌদি আরবে। যেখানে করিম বেনজেমা, রবার্তো ফিরমিনো ও সাদিও মানের মতো তারকারাও আছেন। তবে সৌদি আরব গিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনার মুখে পড়েছেন ইংল্যান্ডের সহ–অধিনায়ক জর্ডান হেন্ডারসন। গত কয়েক বছরে শুধু মাঠের ফুটবলে নয়, মাঠের বাইরেও নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্ব দিয়ে নিজেকে ইংলিশ ফুটবলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন হেন্ডারসন।

আরও পড়ুন

ফুটবলের বাইরে ঘটে যাওয়া অন্যায় এবং অনৈতিকতার বিরুদ্ধেও সোচ্চার কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত ছিলেন হেন্ডারসন। এ ছাড়া খেলোয়াড়দের মধ্যেও হেন্ডারসন দারুণভাবে সম্মানিত ও জনপ্রিয়। করোনা মহামারি চলাকালে প্রিমিয়ার লিগ এবং পিএফএর যখন মাঠে ও মাঠের বাইরে নেতার প্রয়োজন হয়, তখন সবাই বেছে নিয়েছিলেন হেন্ডারসনকেই। যে কারণে তাঁর সৌদি আরবে যাওয়ার সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি অনেকে। বিশেষ করে সৌদি আরবে ক্রমাগত অবনতির হতে থাকা মানবাধিকার পরিস্থিতির কারণে বেশি সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে হেন্ডারসনকে। আর এ কারণে বর্ষসেরা প্রতিনায়কের তালিকাতেও জায়গা পেয়েছেন সাবেক লিভারপুল অধিনায়ক।

আরও পড়ুন

ফারুক কোজা

ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে তুরস্কের শীর্ষ লিগে আঙ্কারাগুজু ও রিজেসপোরের ম্যাচ ১–১ গোলে ড্র হওয়ার পর অবিশ্বাস্য এক ঘটনার জন্ম দেন আঙ্কারাগুজুর সভাপতি ফারুক কোজা। মাঠে নেমে রেফারিকে ঘুষি মেরে মাটিতে ফেলে দিয়েছিলেন কোজা। এ ঘটনার পর ফুটবল–বিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এরপর কোজার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিয়েছে তুরস্কের ফুটবল ফেডারশন (টিএফএফ)। কোজকে ফুটবল থেকে আজীবনের নিষিদ্ধ ঘোষণা করে টিএফএফ। পাশাপাশি ক্লাবটিকে ২০ লাখ লিরা (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। এ ছাড়া এ ঘটনায় অন্য অফিশিয়ালদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তির পাশাপাশি জরিমানা ও সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়।