জিদানকে নিয়ে জ্বলা আগুনে ঘি ঢালল রিয়াল
ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যম আরএমসি স্পোর্টসকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ফ্রেঞ্চ ফুটবল ফেডারেশনের (এফএফএফ) সভাপতি নোয়েল গ্রায়েত। ফ্রান্স দলের কোচ হতে জিনেদিন জিদান যদি তাঁকে ফোন করতেন, তাহলে কী করতেন—এ প্রশ্নের উত্তরে নোয়েল যা বলেছেন, তাতেই আগুনটা লেগেছে।
গ্রায়েত বলেছেন, ‘আমি তার ফোন ধরতাম না। কী বলতাম? হ্যালো স্যার, এটা নিয়ে ভাববেন না, অন্য কোনো ক্লাবে যোগাযোগ করুন। দিদিয়েরের সঙ্গে আমি মাত্রই চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। সে কী করবে, তা তার ব্যাপার। আমার এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই। তার সঙ্গে কখনো দেখা হয়নি এবং দিদিয়েরের (দেশম) সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হওয়া নিয়েও আমরা ভাবিনি। সে যেখানে খুশি, সেখানে যেতে পারে, সেটা ক্লাবে। ইউরোপে সে এমন অনেক ক্লাবই পাবে। বড় ক্লাব। কিন্তু জাতীয় দলের ব্যাপারটি বিশ্বাস করা কঠিন, আমার অন্তত এমন মনে হয়।’
কাতার বিশ্বকাপ ফাইনালে হেরে যাওয়া দেশমের সঙ্গে আগামী বিশ্বকাপ (২০২৬) পর্যন্ত চুক্তি করেছে ফ্রান্সের ফুটবল ফেডারেশন (এফএফএফ)। ২০২৪ সাল পর্যন্ত আগের চুক্তি থাকলেও দুই বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে গুঞ্জন আছে, জিদান ফ্রান্সের কোচ হতে চেয়েছিলেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের কোচ হওয়ার প্রস্তাবে সাড়া দেননি। ফ্রান্সকে বিশ্বকাপ জেতানো কিংবদন্তি জিদান গত জুনেই বলেছিলেন, ‘আমি ফ্রান্সের কোচ হতে চাই। আশা করি, কোনো একদিন হব। কখন, সেটা অবশ্য আমার ওপর নির্ভর করছে না।’
জিদানকে ঘিরে সাম্প্রতিক সময়ে আরেকটি গুঞ্জন উঠেছে। ব্রাজিল জাতীয় দলের কোচ হতে পারেন তিনি! বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ব্রাজিলের বিদায়ের পর কোচের দায়িত্ব ছাড়েন তিতে। সেখানে জিদানকে দেখছেন অনেকেই। কারণ, ফ্রান্সের দরজা আপাতত বন্ধ। ফ্রান্স বিবেচনা না করার পর জিদানের সামনে ব্রাজিল জাতীয় দলের কোচ হওয়ার সম্ভাবনার কথাই তোলা হয়েছিল নোয়েল গ্রায়েতের সাক্ষাৎকারে। উত্তরে এফএফএফ সভাপতি যেভাবে কথা বলেছেন, তাতে জিদানের মতো কিংবদন্তির প্রতি সম্মানবোধের ছিটেফোঁটাও দেখছেন না অনেকে। ফ্রান্সের তারকা স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপ্পেই যেমন টুইটে বলেছেন, ‘কিংবদন্তিকে এভাবে অসম্মান করবেন না।’ পিএসজি তারকার এই সুরে সুর মিলিয়েছেন আরও অনেকেই।
নোয়েল গ্রায়েত পরে ক্ষমা চাইলেও অবশ্য কাজ হয়নি। ততক্ষণে ক্ষোভের আগুন যা জ্বলার, জ্বলে গেছে। জিদানের সাবেক ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ এ নিয়ে চড়া সুরে বিবৃতি দিয়েছে, ‘ফ্রেঞ্চ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি নোয়েল গ্রায়েত বিশ্ব ফুটবলের কিংবদন্তি জিনেদিন জিদানকে নিয়ে যে দুর্ভাগ্যজনক মন্তব্য করেছে, রিয়াল মাদ্রিদের কাছে তা দুঃখজনক। এই মন্তব্যে বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের খুব পছন্দের ব্যক্তিত্বের প্রতি সম্মানের অভাব ছিল। তাৎক্ষণিকভাবে ভুলটা শুধরে নেওয়ার অপেক্ষায় আছে আমাদের ক্লাব।’
ফ্রান্সকে ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন জিদান। ২০০৬ বিশ্বকাপের ফাইনালেও তুলেছেন। জিতেছেন ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপও (ইউরো)। জুভেন্টাসে দুবার চ্যাম্পিয়নস লিগে রানার্সআপ হওয়ার পর ২০০১ সালে যোগ দেন রিয়াল মাদ্রিদে। সেখানেই জিতেছেন একটি চ্যাম্পিয়নস লিগ ও দুটি লা লিগা। স্প্যানিশ ক্লাবটিতে নিজেকে ক্লাবটির কিংবদন্তিতেও পরিণত করেন ব্যালন ডি’অরজয়ী সাবেক এই প্লে–মেকার। ২০১৬ থেকে রিয়ালে দুই মেয়াদে কোচের দায়িত্বপালন করে জিতেছেন টানা তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগ, লা লিগাও জিতেছেন দুবার। সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলারদের কাতারে জিদানের নামটা সহজেই উঠে আসে।
এমন এক কিংবদন্তির প্রতি সম্মান রেখে কথা না বলায় সমালোচনা হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। ঘটেছেও ঠিক তাই। সাবেক ও বর্তমান ফুটবলারদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গ্রায়েতকে জিদানের কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন ফ্রান্সের ক্রীড়ামন্ত্রী এমিলি ওদিয়া–কাস্তেরা। শেষ পর্যন্ত জিদানের কাছে ক্ষমা চেয়ে গ্রায়েত বলেছেন, ‘মন্তব্যগুলোর জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যে মন্তব্যগুলোতে আমার দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ছিল না, খেলোয়াড় ও কোচ বিষয়ে বিবেচনাও ছিল না।’
জিদানকে নিয়ে দীর্ঘ বিবৃতিতে রিয়ালের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, ‘বিশ্ব ও ইউরোপের চ্যাম্পিয়ন জিনেদিন জিদান তার দেশের প্রতিনিধিত্ব করে। খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে সে প্রমাণিত এবং ফুটবলের মূল্যবোধগুলো ধারণ করে। ফ্রেঞ্চ ফুটবল ফেডারেশনের প্রধান যে বিবৃতি দিয়েছে, তার (জিদান) মতো কারও সঙ্গে সেটি বেমানান। এমন পদে থাকা ব্যক্তির সঙ্গেও এমন কথা যায় না। ঠিক যেভাবে তিনি আমাদের অধিনায়ক, ফ্রান্সের হয়ে নেশনস লিগ চ্যাম্পিয়ন, বর্তমান ব্যালন ডি’অরজয়ী এবং পাঁচবার চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী করিম বেনজেমাকে নিয়েও এমন কথা বলেছেন।’