মায়ামিতে মেসির সঙ্গে আরেক আর্জেন্টাইন, কে এই রেদোন্দো
বাবার মতোই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। বাবার নামের প্রতি সুবিচার করতে পারবেন তো?
ফেদেরিকো রেদোন্দোর শুরুটা আশাবাদী হওয়ার মতোই। রেদোন্দো—নামটা শুনেই মনের মধ্যে বড় চুলের এক খেলোয়াড়ের মুখ ভেসে ওঠার কথা। ১৯৯৪ থেকে ২০০০ পর্যন্ত রিয়াল মাদ্রিদের রক্ষণ ও আক্রমণভাগ মাতানো ফার্নান্দো রেদোন্দো! স্প্যানিশ ক্লাবটির হয়ে দুবার করে লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার পাশাপাশি রিয়াল সমর্থকদেরও মন জিতে নিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার সাবেক এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার।
পরে এসি মিলানে যোগ দিয়েও জিতেছিলেন চ্যাম্পিয়নস লিগ। আর্জেন্টিনার হয়ে জিতেছেন কোপা আমেরিকা ও কনফেডারেশনস কাপও। খেলেছেন ১৯৯৪ বিশ্বকাপেও, কিন্তু চার বছর পর ফ্রান্সে ’৯৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দলে জায়গা হয়নি। কারণটা অদ্ভুত। রেদোন্দোর কথা শুনে মনে হতেই পারে, সে সময় আর্জেন্টিনার কোচ ড্যানিয়েল পাসারেলার সঙ্গে তাঁর ঝামেলা ছিল, ‘দারুণ ফর্মে ছিলাম। কিন্তু দলে নিয়মশৃঙ্খলা নিয়ে তিনি কিছু নিয়ম বেঁধে দিয়েছিলেন। তিনি আমার চুল কাটতে বলেছিলেন। ফুটবল খেলার সঙ্গে চুলের কী সম্পর্ক আমি জানি না, তাই আবারও না বলে দিয়েছিলাম।’
ঝামেলা যা–ই হোক, রেদোন্দো তাঁর প্রজন্মের অন্যতম সৃষ্টিশীল ফুটবলার। সে রক্তই পেয়েছেন ফেদেরিকো রেদোন্দো। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে বাবার মতোই সৃষ্টিশীল, আর্জেন্টাইন ফুটবলে উঠতি প্রতিভার তকমাও পেয়েছেন। আর এই প্রতিভা নিয়েই ফেদেরিকো এখন ক্লাব ফুটবলে ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরার সতীর্থ হওয়ার অপেক্ষায়। কী ভাগ্য, সেই ‘সেরা’ও একজন আর্জেন্টাইন!
নিশ্চয়ই ধরে ফেলেছেন। কে আবার, লিওনেল মেসি! ২১ বছর বয়সী ফেদেরিকো ফার্নান্দো উঠে এসেছেন তাঁর বাবার পথ ধরেই। বাবা যেমন আর্জেন্টিনার ক্লাব আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স থেকে ভিন্ন মহাদেশে (ইউরোপের স্পেন) পা রেখেছিলেন, তেমনি ছেলে ফেদেরিকোও আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স থেকে বেরিয়ে মহাদেশ পাল্টালেন। যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ক্লাব ইন্টার মায়ামি আজ ফেদেরিকোকে দলে টানার কথা নিশ্চিত করেছে।
সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মায়ামি ফেদেরিকোকে কিনেছে ৮০ লাখ মার্কিন ডলারে। যদিও টাকার অঙ্কটা এখনো আনুষ্ঠানিক নয়। তবে যে ব্যাপারটি আনুষ্ঠানিক সেটা হলো, ফেদেরিকো এখন মায়ামিতে লিওনেল মেসির সতীর্থ। তাঁর বাবা এমনিতেই মেসির গুণমুগ্ধ। এর আগে একবার বলেছিলেন, মেসির প্রশংসা করে শেষ করতে পারবেন না।
তবে মেসির ভক্তদের জন্য হিসাবটি দাঁড়াল এমন—মেসির প্রাণের ক্লাব বার্সেলোনার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের একসময়ের ‘আইকন’ খেলোয়াড়ের ছেলে এখন কিংবদন্তির সতীর্থ। আরও আছে। বর্তমান মায়ামি কোচ জেরোর্দো মার্তিনো স্প্যানিশ ক্লাব টেনেরিফে একসময় রেদোন্দোর সতীর্থ ছিলেন। অর্থাৎ বাবার সতীর্থকে কোচ হিসেবে পাচ্ছেন ফেদেরিকো।
তিন বছরের চুক্তিতে মায়ামিতে যোগ দেওয়া ফেদেরিকো চাইলে মেয়াদ আরও এক বছর বাড়াতে পারবেন। চোটের কারণে মায়ামির অনূর্ধ্ব–২২ পর্যায়ের খেলোয়াড় ফাকুন্দো ফারিয়াসের মৌসুম শেষ হয়ে গেছে। তাঁর জায়গায় ফেদেরিকোকে টেনেছে মায়ামি। সরাসরি মেসির নাম নেননি, তবে মায়ামিতে যোগ দেওয়ার আনন্দ ফেদেরিকো বুঝিয়েছেন এভাবে, ‘বড় হয়ে ওঠার পথে থাকা এমন একটি ক্লাবে যোগ দিতে পেরে ভালো লাগছে। শীর্ষ সারির খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলতে পারাটাও দারুণ সুযোগ।’
ফেদেরিকো আর্জেন্টাইন ফুটবলে এখনই বেশ পরিচিত নাম। ২০২২ সালে আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের মূল দলে খেলে ৫৮ ম্যাচে ২ গোল করেছিলেন। আর্জেন্টিনার অনূর্ধ্ব–২০ এবং অনূর্ধ্ব–২৩ দলে খেলেও নজর কেড়েছেন। কিছুদিন আগে আর্জেন্টিনার অনূর্ধ্ব–২৩ দলের হয়ে অলিম্পিক বাছাইয়েও ছিলেন ছন্দে। ফেদেরিকো বাবা ফার্নান্দোর মতো অতটা সৃষ্টিশীল না হলেও জায়গার ব্যবহারে পটু। সোজাসুজি বললে একজন পাসিং হোল্ডিং মিডফিল্ডার। তবে আক্রমণভাগেও খেলতে পারেন। মার্তিনোর ছকে সের্হিও বুসকেতসের পাশে কিংবা একটু ওপরে খেলানো হতে পারে তাঁকে। একজন আদর্শ ৬ নম্বর থেকে তাঁকে আদর্শ ‘৮’ নম্বরেও পরিণত করতে পারেন মার্তিনো।
ফেদেরিকো কতটা ভালো খেলোয়াড়—সেই প্রশংসাপত্র গত বছরই দিয়েছেন কলম্বিয়ার কিংবদন্তি কার্লোস ভালদেরেমা। তাঁর বাবার প্রসঙ্গ টেনে বলেছিলেন, ‘আমি সব সময় ফার্নান্দো রেদোন্দোর মুখোমুখি হওয়া এড়াতে চেয়েছিলাম, কারণ সে খুব ভালো খেলোয়াড়। এর চেয়ে ডিয়েগো সিমিওনের মুখোমুখি হওয়া স্বস্তির ছিল, কারণ সে লাথি মারত, লড়াই করত। কিংবা রুগেরির বিপক্ষে খেলতেও অসুবিধা হয়নি। কিন্তু ফার্নান্দোর মুখোমুখি হলে আর রক্ষা থাকত না! ফার্নান্দো খুব ভালো ছিল। এখন তার ছেলের খেলা দেখছি। সে–ও ভালো খেলোয়াড়।’
প্রশংসা তো অনেক হলো। ২১ বছর বয়সী ফেদেরিকোর এখন তা দুনিয়াকে দেখানোর পালা!