নারী ফুটবলারদের মধ্যে বেতনে শীর্ষে যাঁরা
শুরু হয়েছে নারীদের ফুটবল বিশ্বকাপ। সাম্প্রতিক সময়ে নারীদের ফুটবল জগতে দারুণ সব পরিবর্তন এসেছে। ফুটবলীয় দিক থেকে তো বটেই, অর্থনৈতিক দিক থেকেও নারী ফুটবলে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-ব্রাজিলসহ অনেক দেশ পুরুষ ও নারী ফুটবলারদের বেতনে সমতা এনেছে।
বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে নারী ফুটবলারদের আয় কেমন, তা নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। জাতীয় দলের পাশাপাশি ক্লাব থেকেও বড় অঙ্কের অর্থ পান নারী ফুটবলাররা। যদিও সেটা পুরুষ ফুটবলাররা ক্লাব থেকে যে অর্থ পান, তার চেয়ে অনেক কম। নারী ফুটবলারদের মধ্যে ক্লাব থেকে বেশি বেতন পান কারা, তা জানিয়েছে পরিসংখ্যানভিত্তিক পোর্টাল স্টাটিস্টা।
সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া ৪ নারী ফুটবলার
স্যাম কার (অস্ট্রেলিয়া)
বছরে ৫ লাখ ১৩ হাজার ডলার
স্যাম কারকে বিবেচনা করা হয় এ সময়ের সেরা ফুটবলারদের একজন হিসেবে। ২০০৮ সালে পেশাদার ফুটবলে যাত্রা শুরু করা কার বর্তমানে খেলেন চেলসির হয়ে। ২৯ বছর বয়সী এই ফুটবলারকে বছরে ৫ লাখ ১৩ হাজার ডলার বেতন দেয় চেলসি, যা তাঁকে সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া খেলোয়াড়ের তালিকায় সবার ওপরে জায়গা করে দিয়েছে। ২০২০ সালে যোগ দেওয়ার পর চেলসির টানা তিনটি ওমেন সুপার লিগ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে কারের। এ ছাড়া তিনটি এফএ কাপ, দুটি এফএ লিগ কাপ এবং একটি কমিউনিটি শিল্ডও জিতেছেন কার। ২০২০-২১ সালে চেলসিকে নারীদের চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে তুললেও শেষ পর্যন্ত তিনি শিরোপা জিততে পারেননি। তিনটি ভিন্ন লিগে খেলে গোল্ডেন বুট জয়ের অনন্য কীর্তিও আছে কারের। ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অভিষেক হওয়ার পর ১২০ ম্যাচ খেলে ৬৩ গোল করেছেন কার।
অ্যালেক্স মরগান (যুক্তরাষ্ট্র)
বছরে ৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার
যুক্তরাষ্ট্রের কিংবদন্তি ফুটবলার অ্যালেক্স মরগান। দেশের হয়ে দুটি বিশ্বকাপ জয়ের কীর্তি আছে তাঁর। ২০১৫ সালের পর ২০১৯ সালে জিতেছেন বিশ্বকাপ শিরোপা। ২০১২ সালের অলিম্পিকে সোনাজয়ী দলের সদস্যও ছিলেন মরগান। বয়স ৩৪ পেরোলেও এখনো প্রতিপক্ষ রক্ষণে আতঙ্ক ছড়াতে পারেন এই স্ট্রাইকার। লিঁওর হয়ে ২০১৬-১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা মরগান ২০২০ সাল থেকে খেলছেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওমেনস সকার লিগের (এনডব্লিউএসএল) ক্লাব সান ডিয়াগো ওয়েবের হয়ে। এই ক্লাব তাঁকে বেতন দেয় বছরে ৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার, যা তাঁকে দ্বিতীয় শীর্ষ বেতনধারী খেলোয়াড়ের মর্যাদা দিয়েছে। ২০১০ অভিষেকের পর মরগান জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ২০৭ ম্যাচ। আর গোল করেছেন ১২১টি।
মেগান র্যাপিনো (যুক্তরাষ্ট্র)
৪ লাখ ৪৭ হাজার ডলার
ফুটবলের বাইরে একজন আন্দোলনকর্মী হিসেবেও খ্যাতি আছে মেগান র্যাপিনোর। মাঠে ও মাঠের বাইরে বিভিন্ন আলোচনায়ও উঠে আসে যুক্তরাষ্ট্রের এই ফুটবলারের নাম। মরগানের মতো তিনিও যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে জিতেছেন দুটি বিশ্বকাপ। একইভাবে ছিলেন ২০১২ সালের অলিম্পিক সোনা জেতা দলেও। ৩৮ পেরোনো র্যাপিনো ২০১৯ সালে জিতেছেন নারীদের ব্যালন ডি’অর। ক্লাব ফুটবলে ২০১৩ সাল থেকে খেলছেন ওএল রেজিনের হয়ে। সম্প্রতি ক্লাবটির হয়ে তাঁর নতুন করে চুক্তি বাড়ানোর পর বেতনও বেশ বেড়েছে তাঁর, যা তাঁকে সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া খেলোয়াড়দের তালিকায় জায়গা করে দিয়েছে তিন নম্বরে। বছরে তাঁর বেতন এখন ৪ লাখ ৪৭ হাজার ডলার।
জুলি ইর্টজ (যুক্তরাষ্ট্র)
৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার
সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া চতুর্থ খেলোয়াড়টিও যুক্তরাষ্ট্রের। বয়সে র্যাপিনো ও মরগানদের চেয়ে একটু ছোট মার্কিন মিডফিল্ডার জুলি ইর্টজ। ২০১৪-২০২১ পর্যন্ত তিনি খেলেছেন শিকাগো রেড স্টার্সের হয়ে। এরপর ফুটবল থেকে দেড় বছরের বিরতিতেও যান ইর্টজ। বর্তমানে খেলছেন অ্যাঞ্জেল সিটি এফসির হয়ে। ৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার বেতন পাওয়া ইর্টজ বিরতি থেকে ফিরে জায়গা পেয়েছেন বিশ্বকাপ দলেও। যদিও মা হওয়ার পর বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন ইর্টজ নিজেই। তবে লম্বা সময়ের বিরতির পরও দলে ভালোভাবে জায়গা ধরে রেখেছেন এই ফুটবলার। যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বকাপ ধরে রাখতে হলে জ্বলে উঠতে হবে ইর্টজকেও।
এই চারজনের পর শীর্ষ বেতন পাওয়া খেলোয়াড়ের তালিকায় যাঁরা আছেন তাঁরা হলেন নরওয়ের আডা হেগেরবার্গ। লিঁওর কাছ থেকে তিনি পান বছরে ৪ লাখ ২৫ হাজার ডলার। ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি মার্তা অরল্যান্ডো প্রাইডের কাছ থেকে পান বছরে ৪ লাখ ডলার। অ্যাঞ্জেল সিটি এফসির ফরাসি ফুটবলার আমান্ডিনে হেনরি অ্যাঞ্জেল সিটি এফসি থেকে পান বছরে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৫০০ ডলার। হেনরির পরের অবস্থানটি তাঁর স্বদেশি ওয়েনডিয়ে রেনার্ডের। যিনি লিঁওর কাছ থেকে পান বছরে ৩ লাখ ৯২ হাজার ডলার। পরের অবস্থানে থাকা কানাডিয়ান তারকা ক্রিস্টিনে সিনক্লিয়ার তাঁর ক্লাব পোর্টল্যান্ড পাইলটসের কাছ থেকে পান ৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার।
তবে সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া খেলোয়াড় কিন্তু সবচেয়ে মূল্যবান খেলোয়াড় নন। ট্রান্সফার মার্কেটের হিসাব অনুযায়ী সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় বার্সেলোনার স্প্যানিশ তারকা অ্যালেক্সিস পুতেয়াস। ২০২১ ও ২০২২ সালে টানা দুইবার ব্যালন ডি’অর জেতা পুতেয়াসের বাজারমূল্য ৬ লাখ ১২ হাজার ডলার। দ্বিতীয় স্থানে আছেন আইতানা বুনমাতি। পুতেয়াসের বার্সা সতীর্থের বাজারদর ৫ লাখ ৫৬ হাজার ডলার। সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়াদের মধ্যে শুধু স্যাম কার ও হেগেরবার্গ সেরা ১০ মূল্যবান খেলোয়াড়ের তালিকায় জায়গা পেয়েছেন। তিন নম্বরে থাকা কারের বাজারদর ৫ লাখ ৫৬ হাজার ডলার। চারে থাকা হেগেরবার্গের বাজারদর ৫ লাখ ডলার।