কুমিল্লায় আজ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে ফেডারেশন কাপ ফাইনাল শুরুর আগে ধর্মসাগরপাড়ের ভাষাসৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামের গ্যালারির দক্ষিণ অংশ দখলে নেন আবাহনী ও মোহামেডানের সমর্থকেরা। গ্যালারির দক্ষিণ–পূর্ব কোণে সাদা–কালো জার্সি পরিহিত মোহামেডানের সমর্থকেরা। দক্ষিণ–পশ্চিম কোণে আকাশি–নীল সমর্থকেরা। হাতে দুই দলের পতাকা।
একেকটি গোল হয় আর গ্যালারি ফেটে পড়ে উল্লাসে। খেলা যত এগিয়েছে, গ্যালারি ভরে ওঠে কানায় কানায়। নির্ধারিত সময় ৩-৩ গোলে অমীমাংসিত। অতিরিক্ত সময়ে দুই দলই একটি করে গোল করার পর খেলা যায় টাইব্রেকারে। তাতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে ৪-২ গোলে হারিয়ে ১৪ বছর পর হওয়া দুই দলের ফাইনালে ট্রফি জিতে নিল মোহামেডান।
কুমিল্লাবাসী এর আগে এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ জমজমাট ফাইনাল ম্যাচ আর দেখেননি। খেলা দেখতে আসা অনেকের চোখে এ যেন গত বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স ফাইনালের পুনরাবৃত্তি! ম্যাচ শেষে দুই দলের সমর্থকেরা খুশি দারুণ একটি ফাইনালের সাক্ষী হতে পেরে। তাঁদের সবার কথা— ফাইনাল ফাইনালের মতো হয়েছে।
কুমিল্লা জিলা স্কুল এলাকার বাসিন্দা ও একসময় সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল দলের স্ট্রাইকার ফুয়াদ আহমেদ বলেন, ‘১৪ বছর পর মোহামেডান ফেডারেশন কাপ জিতেছে। একজন সমর্থক হিসেবে উজ্জীবিত আমি। নান্দনিক এক ফুটবল ম্যাচ দেখল কুমিল্লাবাসী।’
সাবেক ফুটবলার ও লাকসাম উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক তাবারক উল্লাহ কায়েস বলেন, ‘আমি আবাহনীর সমর্থক। কিন্তু এক মোহামেডানের অধিনায়ক সোলেমান দিয়াবাতের কাছেই হেরে গেছে আবাহনী।’
কুমিল্লার বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক বদরুল হুদা জেনু বলেন, ‘ষোলোআনা উসুল হলো এই ম্যাচে। ৯০ মিনিটের খেলার পর অতিরিক্ত সময় গড়িয়ে টাইব্রেকার। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে কুমিল্লার অবস্থান। বড় দুই দলের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঢাকা থেকে এই মাঠে খেলা দেখতে এসেছেন। দর্শকেরা মন ভরে ফাইনাল উপভোগ করেছেন।’
ম্যাচ শেষ হওয়ার পর স্টেডিয়ামের দক্ষিণ প্রান্তের গ্যালারিতে দেখা গেল আবাহনীর জনা দশেক কট্টর সমর্থকের সঙ্গে। তবে হারের হতাশা কারোই খুব প্রবল নয়। প্রায় অভিন্ন সুরে তাঁরা জানালেন, বহু বছর পর কুমিল্লা স্টেডিয়ামে ফুটবল ম্যাচ দেখতে এসে নাটকীয়তায় ভরা শ্বাসরুদ্ধকর এক ফাইনাল দেখলেন।
নগরের ঠাকুরপাড়া এলাকার বাসিন্দা নাজমুল হাসান বলেন, ‘আগে আবাহনী ও মোহামেডানে নামকরা খেলোয়াড়েরা ছিলেন। খেলোয়াড়দের বিশেষ ব্যক্তিগত নৈপুণ্য ছিল। এবার সেটি দেখা গেল না। দুই দলের অধিনায়কই বিদেশি। গোল হয়েছে। পক্ষে–বিপক্ষে ১৮ বার তালি হয়েছে গোল দিয়ে ও খেয়ে। কিন্তু দুই দলের বাংলাদেশি কোনো খেলোয়াড়ই রং ছড়াতে পারেননি।’
দৌলতপুর এলাকার বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, গত বিশ্বকাপের ফুটবল ফাইনালে এমবাপ্পে যেমন ফ্রান্সকে টাইব্রেকারের আগপর্যন্ত খেলায় ধরে রেখেছিলেন, আজ মোহামেডানের অধিনায়ক দিয়াবাতেও তা–ই করেছেন। আবাহনী-মোহামেডানের খেলা দেখে ফ্রান্স-আর্জেন্টিনা ম্যাচের কথা নাকি মনে পড়ে গেছে তাঁর।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আহসান ফারুক বলেন, ‘অসহনীয় গরমে মোহামেডান-আবাহনীর খেলা দেখতে হাজার হাজার ফুটবলপ্রেমী এসেছেন। রোমাঞ্চকর ফাইনাল দেখে দর্শকদের মন ভরে গেছে।’