সাম্প্রতিক সময়ে বর্ণবাদের প্রতিবাদে সোচ্চার ক্রীড়াবিশ্ব। ফুটবলের ময়দানে এমন ঘটনা নতুন কিছু না। গত মঙ্গলবার রাতেও বর্ণবাদের প্রতিবাদে খেলা ফেলে মাঠ ছেড়েছিলেন নেইমাররা।
সেটি ছিল চ্যাম্পিয়নস লিগে পিএসজি-ইস্তাম্বুল বাশাকশেহির ম্যাচ। ম্যাচের চতুর্থ রেফারি তুর্কি ক্লাবের সহকারী কোচের প্রতি বর্ণবাদী মন্তব্য করেছেন, এই অভিযোগে খেলা ফেলে মাঠ ছেড়েছিল দুই দল। পরের দিন অর্থাৎ পরশু আবারও মুখোমুখি হয়ে জিতেছে পিএসজি।
ম্যাচ শেষে বর্ণবাদ নিয়ে কথা বলেন পিএসজি তারকা নেইমার। ব্রাজিলিয়ান তারকা মনে করেন, এর আগে মার্শেইয়ের বিপক্ষে ম্যাচেও ঠিক একই কারণে খেলা ফেলে মাঠ ছেড়ে যাওয়া উচিত ছিল তাঁর।
মার্শেই-পিএসজি ম্যাচের সেই ঘটনা অনেকেরই জানা। সে কথায় আসার আগে পিএসজি-বাশাকশেহির ম্যাচের ঘটনা জানিয়ে রাখা ভালো।
চতুর্থ রেফারি সেবাস্তিয়ান কোলতেসকু বাশাকশেহির সহকারী কোচ ও সাবেক ক্যামেরুন ফরোয়ার্ড পিয়ের ওয়েবোকে ‘ওই কালো লোকটা’ বলে সম্বোধন করেন। এর প্রতিবাদে ম্যাচের ১৪ মিনিটের মাথায় মাঠ ছেড়ে যায় দুই দল।
পরে আবারও মাঠে গড়ানো ম্যাচ শুরু হয় ১৪ মিনিট থেকে। ৫-১ গোলের জয় তুলে নেয় পিএসজি। হ্যাটট্রিক করেন নেইমার।
মার্শেই-পিএসজি লড়াই সব সময় অন্য মাত্রা যোগ করে ফরাসি ফুটবলে। দেশটির ঘরোয়া ফুটবলে দুটি ক্লাব চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীও। গত সেপ্টেম্বরে লিগে মার্শেই-পিএসজি ম্যাচে লাল কার্ড দেখেছিলেন মোট ৫ খেলোয়াড়।
সেদিন উত্তেজনাকর পরিস্থিতির দুই মূল হোতা মার্শেই ডিফেন্ডার আলভারো গঞ্জালেজ ও নেইমারও লাল কার্ড দেখেছিলেন। গঞ্জালেজের মাথার পেছনে চড় মেরে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছেন পিএসজি তারকা।
ম্যাচ শেষে নেইমার দাবি করেন, মাঠে আলভারো তাঁর উদ্দেশে বর্ণবাদী মন্তব্য করেছেন। নেইমারকে নাকি ‘বানর’ বলেছিলেন গঞ্জালেজ। এক টুইটে নেইমার নিজেই এ দাবি করেছিলেন। ব্রাজিল ফরোয়ার্ডের বিরুদ্ধেও বর্ণবাদের অভিযোগ উঠেছিল সে ম্যাচে।
কিন্তু প্রমাণ না থাকায় সে যাত্রায় বেঁচে যান নেইমার। প্রমাণ না থাকায় শাস্তির হাত থেকে বেঁচে যান গঞ্জালেজও। বাশাকশেহিরের বিপক্ষে ম্যাচের পর সেদিনের সেই ঘটনাই স্মরণ করেন নেইমার।
সেদিন ম্যাচটা তাঁর থামানো উচিত ছিল, মনে করেন পিএসজি তারকা, ‘এটা খুব মারাত্মক বিষয়। খুবই স্পর্শকাতর। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসব ঘটছে যা ভীষণ বিরক্তিকর। মৌসুমের শুরুতে আমার সঙ্গেও (মার্শেই ম্যাচ) এমন ঘটেছিল। গায়ের চামড়ার রং ও জাতের জন্য ভোগান্তিটা মোটেই স্বাভাবিক বিষয় না। আমরা (মাঠ ছেড়ে) খুব ভালো করেছিলাম (বাশাকশেহির ম্যাচ)। মাথায় এটাই সবার আগে এসেছিল এবং সেদিনও ঠিক একই কাজ করা উচিত ছিল।’
ফ্রান্সের লিগ ডি ফুটবল প্রফেশনাল (এলএফপি) তখন নেইমারের বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগের পর্যাপ্ত প্রমাণ খুঁজে পায়নি। প্রমাণ মেলেনি গঞ্জালেজের বিরুদ্ধে ওঠা বর্ণবাদের অভিযোগেরও।
কর্তৃপক্ষ বিবৃতিতে জানিয়েছিল, ‘বৈষম্যমূলক আচরণের যে অভিযোগ উঠেছে, তার পক্ষে পর্যাপ্ত প্রমাণ খুঁজে পায়নি শৃঙ্খলা কমিশন। এ কারণে শাস্তি দেওয়ার যুক্তি নেই।’