'শেষ নাচ' নাচবেন মেসি
>মেসি আর্জেন্টিনাকে ২০২২ বিশ্বকাপ জেতাবেন, আশা লুকাস বিলিয়ার
শব্দত্রয়ী সে সময়ের শিকাগো বুলস কোচ ফিল জ্যাকসনের আবিষ্কার। 'দ্য লাস্ট ডান্স!
১৯৯৭-৯৮ মৌসুমের শুরুর দিকেই জ্যাকসন বুঝতে পেরেছিলেন, নব্বইয়ের দশক মাতানো বুলস দলটার অনেকেরই শেষ মৌসুম সেটি। সে কারণেই শব্দত্রয়ীর ব্যবহার। একসঙ্গে ওই দলের সেটিই শেষবার বাস্কেটবল কোর্ট, এনবিএর মঞ্চ মাতানো ছিল কি না!
সেই মৌসুমটাতে আবার একটা ফিল্ম ক্রু অনুমতি পেয়েছিল, বুলস কিংবদন্তি মাইকেল জর্ডান ও তাঁর বুলস দলকে মৌসুমজুড়ে অনুসরণ করার। সেই মৌসুম, আর মাইকেল জর্ডানের ক্যারিয়ারের উত্থান-পতন নিয়েই দশ পর্বের একটা সিরিজ বানিয়েছে সম্প্রচারক প্রতিষ্ঠান নেটফ্লিক্স। যা সমাদৃত হয়েছে বেশ।
বুলসের হয়ে শেষ সেই মৌসুমে এনবিএ শিরোপা তো জিতেছিলেনই, সেটি ছিল জর্ডানের আট বছরে ষষ্ঠ শিরোপা। আর দ্বিতীয় থ্রি-পিট (টানা তিন মৌসুমে শিরোপা)। মাঝে কিছুদিন বাস্কেটবল থেকে দূরে ছিলেন জর্ডান, সেই দুই মৌসুমে শিরোপা জেতেনি বুলস।
তা জর্ডান ফিরে এসেও দাপট দেখিয়েছেন, বুলসের হয়ে শেষ মৌসুমে শেষবারের মতো বাস্কেটবল কোর্টে 'নাচ' দেখিয়েছেন। আর তাঁর 'দ্য লাস্ট ড্যান্স' সিরিজটা দেখে আর্জেন্টিনার সাবেক মিডফিল্ডার লুকাস বিলিয়া স্বপ্ন দেখছেন, লিওনেল মেসিও আর্জেন্টিনার জার্সিতে ২০২২ বিশ্বকাপে এমন কিছু করেই বিদায় নেবেন।
বার্সেলোনার হয়ে সম্ভাব্য সব জিতেছেন, ব্যালন ডি'অর জেতা হয়ে গেছে রেকর্ড ছয়বার, কিন্তু আর্জেন্টিনার জার্সিতে মেসির ট্রফি ক্যালেন্ডারটা এখনো শূন্যই। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপকেই বিশ্বমঞ্চে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের শেষ ভাবা হয়। আগামী ২৪ জুন ৩৩-এ পা দিতে যাওয়া মেসির বয়স ২০২২ বিশ্বকাপের সময় যে ৩৫ পেরিয়ে যাবে! খুব বেশি হলে আগামী বছর হতে যাওয়া কোপা আমেরিকাই হতে পারে আর্জেন্টিনার জার্সিতে তাঁর কিছু জেতার শেষ সুযোগ, এমনই ভাবেন অনেকে। যে কোপা আমেরিকা এবার হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে পিছিয়ে গেছে এক বছর।
কিন্তু বিলিয়ার স্বপ্ন বাঁধ মানে না। ২০২২ বিশ্বকাপে মেসিকে খেলতে তো দেখেনই, তাঁর হাতে শিরোপার স্বপ্নও দেখেন এসি মিলানের আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার। স্বপ্নের মূলে? ওই যে, দ্য লাস্ট ডান্স! এফএম ৯৪.৭ রেডিওতে বিলিয়া বলেছেন, মেসিকে নিয়েও এমন সিরিজ দেখার আশায় আছেন তিনি, 'কদিন আগে দ্য লাস্ট ড্যান্স দেখলাম। দারুণ হয়েছে সিরিজটা। এটা দেখে মনে হলো, কয়েক বছর পর, আশা করি আমরা আমাদের ফেনোমেননকে (মেসি) নিয়েও এমন কিছু দেখতে পাব।'
সিরিজে দর্শক মেসির প্রতিদিনের জীবন সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পাবেন, এমন আশা বিলিয়ার, 'ওর প্রতিদিনের জীবন থেকে হাজারটা জিনিস শেখার আছে। কারণ আপনি ওকে এখন শুধু অনুশীলন করতে দেখেন, খেলতে দেখেন, কিন্তু প্রতিদিনের জীবনে আরও কত কিছু ঘটে, যেগুলো আমরা জানতে পারি না। যেটা (জর্ডানের ক্ষেত্রে) এই সিরিজে দেখলাম।'
এরপরই বিলিয়ার কণ্ঠে মেসির হাতে বিশ্বকাপ দেখার স্বপ্ন, 'ভবিষ্যতে যে দৃশ্যটা আমি খুব বেশি করে দেখতে চাই, সেটা জর্ডানের ওই এনবিএ ট্রফি জড়িয়ে ধরে কান্নার মতো। আমি চাই মেসি আর বিশ্বকাপ নিয়ে তেমন কিছু হোক। খুব করেই দেখতে চাই সেটা। জানি ওর জন্য সেটা কত বড় একটা স্বপ্নপূরণ হবে, আর্জেন্টিনার মানুষের জন্যও।'
জর্ডান ও মেসি দুজনের ক্যারিয়ারই অর্জনে ঠাসা। তবে দুজনের তুলনায় মেসিকে একটা জায়গায় এগিয়ে রাখলেন তাঁর সাবেক সতীর্থ – টেম্পারামেন্টে। বিলিয়ার বিশ্লেষণ, 'ও সব সময় নিজেকে আপনার মতোই একজন মনে করাবে। এটা শুধু ওর বিনয়ের কারণে নয়, আপনাকে ওর সঙ্গে সহজ হতে সাহায্য করার জন্যও। সতীর্থরা কীসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তারা কেমন, সেটা অনুভব করেই তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করে ও। সেটা ওকে আরও বিশেষ একজন করে তোলে। খেলোয়াড় হিসেবে তো ওকে বর্ণনা করার মতো শব্দ আমার নেই। মানুষ হিসেবেও ও দশে দশ, (খেলোয়াড় হিসেবে যতটা, তার চেয়েও) ১০০ গুণ ভালো!'
যদিও আর্জেন্টিনায় মেসিকে অপছন্দ করেন অনেকে, এমন কথাও সব সময়ই শোনা যায়। বার্সেলোনায় তিনি যতটা প্রিয়, আর্জেন্টিনায় ততটা নন। ব্যর্থ হলেই মেসিকে শূলে চড়াতে বাকি রাখেন না আর্জেন্টাইনরা – এটা প্রচলিত ধারণাই। কিন্তু বিলিয়ার কথা, আর্জেন্টিনায়ও মানুষ মেসিকে একইরকম ভালোবাসে, 'দেখুন, ভালো স্মৃতিগুলো সবাই মনে রাখে। খারাপগুলোও। কিন্তু দেখুন, একটা মানুষকেই কেন এত কষ্ট পেতে হবে? গত বিশ্বকাপে (শেষ ষোলোতে) বাদ পড়া ওকে কতটা কষ্ট দিয়েছে সবাই দেখেছে। ওকে এত কষ্ট পেতে দেখে আমার অনেক কষ্ট লেগেছে। প্রশ্নটা মনে জেগেছে, কেন? কেন ওকেই এত কষ্ট পেতে হবে? ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, যেন দুবছর পর ওকে আগামী বিশ্বকাপেও দেখি।'
প্রার্থনাটা যে মেসির হাতে বিশ্বকাপ দেখারও, তা আর বলতে!