শেষ পর্যন্ত পর্তুগাল হারেনি, পিছিয়ে পড়েও ১-১ গোলে ড্র করেছে। অনেক সুযোগ হারিয়ে ম্যাচটা আর জেতা হয়নি স্পেনের। তবে পর্তুগাল হেরে গেলে সম্ভবত এ নিয়ে আলোচনা অনেক বেশি হতো। এবারের নেশনস লিগে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পরশু স্পেনের বিপক্ষে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে শুরুর একাদশে না রেখেই যে নেমেছিল পর্তুগাল!
সেটি যদি চমক জাগিয়ে থাকে, তবে এমন সিদ্ধান্তের যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন পর্তুগাল কোচ ফার্নান্দো সান্তোস, সেটি আরও বেশি চমকে দেবে। সান্তোসের কাছে মনে হয়েছে, রোনালদোর বদলে যাঁকে মূল একাদশে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলিয়েছেন, সেই আন্দ্রে সিলভা এমন কিছু করতে পারেন, যা রোনালদো অত ভালোভাবে করতে পারেন না!
রোনালদোর বয়স ৩৭ হয়ে গেছে ঠিকই, তবু গত এক যুগ বিশ্ব–ফুটবল মাতিয়ে রাখা, যুগ ছাপিয়ে সর্বকালের সেরাদের ছোট্ট তালিকায় জায়গা করে নেওয়া একজনকে নিয়ে তাঁরই কোচের এমন কথা রোনালদো ভক্তরা ভালোভাবে না-ই নেওয়ার কথা।
সেভিলের ক্লাব রিয়াল বেতিসের মাঠ এস্তাদিও বেনিতো ভিয়ামারিনে পরশু স্পেনের বিপক্ষে ৬২ মিনিটে মাঠে নেমেছেন রোনালদো। তার অনেক আগেই—২৫ মিনিটে আলভারো মোরাতার গোলে এগিয়ে গেছে স্পেন। নেমে সেভাবে কিছু করতে পারেননি রোনালদো, তবে পর্তুগাল গোলটা পেয়েছে তিনি মাঠে নামার পর। ৮২ মিনিটে রিকার্দো হোরতার গোলই শেষ পর্যন্ত সমতাসূচক হয়ে থেকেছে।
কিন্তু রোনালদোকে কেন শুরু থেকে নামানো হয়নি? পর্তুগাল কোচ সান্তোসের ব্যাখ্যা, ‘এটা শুধুই একটা সিদ্ধান্ত। কোচের সিদ্ধান্ত, কৌশলগত সিদ্ধান্ত। এই চারটি ম্যাচে (স্পেনের পর ১৩ জুনের মধ্যে আরও তিনটি ম্যাচ খেলবে পর্তুগাল) এভাবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
পর্তুগালকে ২০১৬ ইউরোর পর নেশনস লিগের প্রথম আসরেরই শিরোপা জেতানো কোচ এরপর যা বললেন, তা-ই রোনালদো ভক্তদের গাত্রদাহের কারণ হতে পারে, ‘এই ম্যাচে আমার কাছে মনে হয়েছে আন্দ্রের (সিলভা) মতো একজনের শুরু থেকে খেলা দরকার। ও কঠোর পরিশ্রম করে, প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের চেপে ধরে। ও এমন কিছু করতে পারে, যা রোনালদো একইভাবে করতে পারবে না।’
নিজেদের রক্ষণ থেকে ছোট ছোট অজস্র পাসে খেলা গড়া, বলের দখল রেখে প্রতিপক্ষকে ক্লান্ত করে ফেলার কৌশলে সম্ভবত বিশ্বসেরা স্পেন। তাদের বিপক্ষে স্বাভাবিকভাবেই আক্রমণেও সহজাতভাবে ‘প্রেসিং’য়ে দক্ষ খেলোয়াড়কেই চেয়েছেন সান্তোস।
৩৭ বছর বয়সী রোনালদো এখনো গোল করায় বিশ্বসেরাদের একজন, কিন্তু প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বল কেড়ে নেওয়ার জন্য টানা ‘প্রেসিং’য়ে পা জোড়া আর সায় দেয় না। সে কারণেই হয়তো রোনালদোকে মূল একাদশের বাইরে রাখা। আবার পর্তুগাল পিছিয়ে পড়ার পর গোলের খোঁজে শেষ ৩০ মিনিটে সেই রোনালদোর দিকেই চোখ পড়েছে সান্তোসের।
সে কারণেই কি না, সান্তোসই আবার বলছেন, ‘রোনালদো এমন অনেক কিছু করতে পারে (যা অন্য কেউ সেভাবে পারে না), সে কারণেই ও বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়। তবে এ বেলায় আমার সিদ্ধান্ত এমনই (আন্দ্রে সিলভাকে নামানো) ছিল। পরের তিন ম্যাচেও এমন অনেক অদলবদল খেলাব। খেলোয়াড়দের সবাইকেই এ জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, সেটাই তাদের কাছে প্রত্যাশিত।’
তবে সান্তোসের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে পর্তুগালের বেশির ভাগ মানুষই একমত। অন্তত পর্তুগিজ ক্রীড়াদৈনিক আ বোলার জরিপ তা-ই বলছে। সান্তোসের রোনালদোকে বসিয়ে রাখার সিদ্ধান্তের সঙ্গে আপনি একমত কি না—এমন প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ ভোটই পড়েছে ৬৫.৬ শতাংশ!
রোনালদো অবশ্য এ নিয়ে তেমন কিছু বলেননি। স্পেনের বিপক্ষে ম্যাচের পর ইনস্টাগ্রামে শুধু লিখেছেন, ‘নেশনস লিগ টুর্নামেন্টের ইতিহাস সব সময়ই আমাদের জাতীয় দলের কথা বলবে, আমরাই প্রথম শিরোপাটা জিতেছি। স্পেনের বিপক্ষে ড্র দিয়ে এই টুর্নামেন্টে আমাদের এবারের শুরু আমাদের নতুন আকাঙ্ক্ষার কথা বলে। আকাঙ্ক্ষাটা অবশ্য সব সময়ের মতো একই আছে, সব সময়ের মতো একইভাবে আমাদের প্রেরণা জোগায়, এক করে। সেটি হলো, পর্তুগালের জন্য জেতা।’
তবে পরশু মূল একাদশে না থাকায় পাঁচ বছর পুরোনো স্মৃতি ফিরেছে রোনালদোর। এ নিয়ে পর্তুগালের জার্সিতে ১৮৭ ম্যাচ খেলেছেন রোনালদো, এর মধ্যে মাত্র ১৩ বার শুরুর একাদশে ছিলেন না। তালিকাটা আরেকটু ছোট করে শুধু প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচের হিসাবে নিলে মাত্র চারবার শুরুর একাদশে রোনালদোকে না রেখেই নেমেছে পর্তুগাল। সর্বশেষটি পাঁচ বছর আগের, ২০১৮ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে অ্যান্ডোরার বিপক্ষে ২-০ গোলে জয়ের ম্যাচে।
এর বাইরে ২০০৪ ইউরোর গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে গ্রিস ও রাশিয়ার বিপক্ষে, আর ২০০৮ ইউরোর গ্রুপ পর্বে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে রোনালদোকে শুরুর একাদশে রাখেনি পর্তুগাল।
প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ বাদ দিয়ে সব মিলিয়ে হিসাবটা করলে রোনালদোকে মূল একাদশে না রেখে পর্তুগাল সর্বশেষ বার নেমেছে ২০২০ সালের নভেম্বরে অ্যান্ডোরার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে। সেদিন অবশ্য বিরতির পর মাঠে নামা রোনালদো একটা গোল করেছিলেন।
স্পেনের বিপক্ষে ড্র দিয়ে শুরুর তিন দিন পর আগামীকাল রাতেই আবার মাঠে নামছে পর্তুগাল। বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে নিজেদের মাটিতে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে নামবেন রোনালদোরা। এরপর আগামী বৃহস্পতিবার চেক প্রজাতন্ত্রের বিপক্ষে ম্যাচের পর আবার পরের রোববার, ১২ জুন পর্তুগাল খেলবে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে।