রেকর্ড ভেঙে ৭৮৮ কোটিতে স্ট্রাইকার কিনছে লিভারপুল
আর্লিং হরলান্ডকে নিয়ে লিভারপুলের তেমন আগ্রহের কথা সেভাবে শোনা যায়নি। তাঁকে প্রায় ৬ কোটি ইউরোতে কিনে নিয়েছে গত কয়েক বছরে ইংলিশ লিগের দৌড়ে লিভারপুলের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার সিটি।
তবে অরেলিয়াঁ চুয়ামেনিকে পেতে রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে অনেকদিন লড়েছিল ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। শেষ পর্যন্ত ফরাসি মিডফিল্ডারকে অনেক চড়া দামে কিনে নিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। গতকালই সেটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে মাদ্রিদের কূলীন ক্লাবটি। তাঁকে পেতে রিয়ালের খরচ হয়েছে ১০ কোটি ইউরো।
লিভারপুলও বসে নেই। গোলের সামনে একজন ‘শিকারি’র খোঁজ অলরেডদের গত মৌসুম থেকেই। সে খোঁজে বেনফিকার হয়ে গত মৌসুমে পর্তুগালে-ইউরোপে আলো ছড়ানো দারউইন নুনিয়েজের সঙ্গে লিভারপুলের নাম জড়িয়ে গুঞ্জনের বয়সও কয়েক মাস। গুঞ্জনটাই অবশেষে সত্যি হলো। ইংল্যান্ডসহ ইউরোপের সব সংবাদমাধ্যমই জানাচ্ছে, দলবদলে ক্লাবের রেকর্ড ভেঙে ৮ কোটি ইউরোতে নুনিয়েজকে কিনছে লিভারপুল। বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭৮৮ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ডিফেন্ডার ভার্জিল ফন ডাইককে কিনতে ৭ কোটি ৫০ লাখ ইউরো খরচ করেছিল লিভারপুল, এতদিন সেটিই ছিল তাদের রেকর্ড।
২২ বছর বয়সী উরুগুইয়ান স্ট্রাইকারকে পেতে বেনফিকার সঙ্গে সমঝোতা হয়ে গেছে লিভারপুলের। ছয় বছরের জন্য ব্যক্তিগত চুক্তিও হয়ে গেছে। এখন শুধু বাকি আছে স্বাস্থ্যপরীক্ষা। দলবদলের খবরের ক্ষেত্রে বিশেষ সুনাম অর্জন করা ইতালিয়ান সাংবাদিক ফাব্রিজিও রোমানো ইংলিশ দৈনিক গার্ডিয়ানে সাচিন নাকরানির সঙ্গে যৌথ প্রতিবেদনে লিখেছেন, এই মুহূর্তে স্পেনের আলমেরিয়াতে আছেন নুনিয়েজ। বেনফিকায় যাওয়ার আগে স্প্যানিশ ক্লাব আলমেরিয়াতেই খেলেছেন তিনি। আগামীকাল আলমেরিয়া থেকে ইংল্যান্ডে যাবেন স্বাস্থ্যপরীক্ষার উদ্দেশ্যে। সেখানে সবকিছু ঠিকঠাক হলেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা চলে আসবে।
নুনিয়েজকে পেতে অনেক সংবাদমাধ্যমে লিভারপুলের খরচ ১০ কোটি বলা হলেও এর মধ্যে ২ কোটি শর্তসাপেক্ষ। অর্থাৎ, আপাতত দলবদলে নিশ্চিতভাবে ৮ কোটি খরচ হচ্ছে লিভারপুলের। এরপর লিভারপুলের জার্সিতে নুনিয়েজের পারফরম্যান্স, নির্দিষ্টসংখ্যক ম্যাচ খেলা... অনেক শর্ত পূরণ সাপেক্ষে বাকি ২ কোটি পাবে বেনফিকা।
গতি দারুণ, ড্রিবলিংও একেবারে খারাপ নয়, প্রতিপক্ষ পোস্টের সামনে ঠান্ডা মাথার শিকারি, প্রায় ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতা কাজে লাগিয়ে হেডেও দারুণ দক্ষ...ইউরোপে তরুণ স্ট্রাইকারদের মধ্যে গত এক-দেড় মৌসুমে নুনিয়েজের এত নজর কেড়ে নেওয়ার কারণ আর ব্যাখ্যা করার দরকার পড়ে না।
তাঁকে পেতে লিভারপুলের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড অনেক চেষ্টা করেছে। ইউনাইটেডের নতুন কোচ এরিক টেন হাগের বিশেষ চাওয়াই ছিল নুনিয়েজকে দলে টানা। কিন্তু আগামী মৌসুমে ইউনাইটেড চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে পারবে না, যা নুনিয়েজের চাওয়ার সঙ্গে মেলেনি। তারওপর নুনিয়েজের চোখে ‘বিশ্বের সেরা কোচ’ ইয়ুর্গেন ক্লপের সঙ্গে আলোচনাও তাঁর লিভারপুলে যোগ দেওয়ার পেছনে বড় কারণ ছিল বলে জানিয়েছেন ইংলিশ দৈনিক দ্য টাইমসের বিখ্যাত সাংবাদিক পল জয়েস।
নুনিয়েজকে টেনে লিভারপুলেরও একটা জবাব দেওয়া হয়ে গেল। লিগে প্রতিদ্বন্দ্বী সিটি তারকা স্ট্রাইকার আর্লিং হরলান্ডকে কিনেছে, লিভারপুল একই ঢংয়ের স্ট্রাইকার কিনে সেটির জবাব দিয়েছে। আর রিয়ালকে জবাব দেওয়ার প্রক্রিয়াটা একটু ভিন্নই হলো। কিলিয়ান এমবাপ্পে পিএসজিতে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানানোর আগেই ৫ কোটি ইউরোর কাছাকাছি দামে চুয়ামেনিকে পেতে মোনাকো আর চুয়ামেনি দুই পক্ষের সঙ্গেই কথাবার্তা অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছিল লিভারপুলের, চুয়ামেনি তখন রিয়ালের চেয়ে লিভারপুলে যোগ দেওয়াতেই বেশি আগ্রহী বলে শোনা গিয়েছিল।
কিন্তু এমবাপ্পে রিয়ালে না গিয়ে পিএসজিতে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানানোর পর দলবদলে আগ্রাসী হয়ে ওঠা রিয়াল মোনাকোর কাছে বড় অঙ্কের প্রস্তাব নিয়ে গেছে। এত বড় অঙ্ক দেখে তখনই লিভারপুল দৌড় থেকে সরে যায়। ওদিকে পিএসজিও চুয়ামেনিকে পাওয়ার দৌড়ে নামায় চুয়ামেনির দাম শেষ পর্যন্ত ৫ কোটির দ্বিগুণ হয়ে যায়। রিয়ালের কাছে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে হারের পর চুয়ামেনিকেও হারানো লিভারপুল নুনিয়েজকে কিনে ইংল্যান্ড-ইউরোপে প্রতিদ্বন্দ্বীদের একটা হুঁশিয়ারিও কি দিয়ে রাখল?
গত মৌসুমে পর্তুগিজ লিগে ২৬ গোল করেছেন নুনিয়েজ, সব মিলিয়ে মৌসুমে গোল ৩৪টি। বেনফিকাকে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে তুলেছেন, সেখানে লিভারপুলের কাছেই হেরে বেনফিকার বাদ পড়া। তবে কোয়ার্টার ফফাইনালে দুই লেগেই গোল করেন নুনিয়েজ। সে সময় উরুগুইয়ান স্ট্রাইকারকে নিয়ে প্রশ্নে ক্লপ প্রথমে মজা করে বলেছিলেন, ‘ছেলেটা দেখতে সুদর্শন বটে!’ এরপর ফুটবলীয় বিশ্লেষণে লিভারপুল কোচ বলেছিলেন, ‘শারীরিকভাবে শক্তিশালী, গতি অনেক, ফিনিশিং ভালো, আজ যখন গোলটা করেছে সে মুহূর্তে কী শান্ত ছিল। ভালো, খুবই ভালো খেলোয়াড়। এরকম কারও ক্ষেত্রে আমরা যেটা বলি আর কি, ও যদি সুস্থ-চোটমুক্ত থাকতে পারে, তাহলে দারুণ একটা ক্যারিয়ার হবে ওর।’
সব ঠিকঠাক থাকলে সেটির একটা অধ্যায় লেখা হবে লিভারপুলের জার্সিতে। এই মৌসুমে লিভারপুলের সাদিও মানে চলে যাবেন বলে গুঞ্জন, সে ক্ষেত্রে আক্রমণে মূলত মো সালাহ আর লুইস দিয়াজের সঙ্গেই খেলবেন নুনিয়েজ। গার্ডিয়ান লিখেছে, নুনিয়েজকে নিয়ে লিভারপুলের ছক ৪-৩-৩ থেকে বদলে ৪-২-৩-১ হয়ে যেতে পারে।
নুনিয়েজের আগে মৌসুমে ফুলহাম থেকে ১৯ বছর বয়সী উইঙ্গার ফাবিও কারভালিওকে কিনেছে লিভারপুল। স্কটিশ ক্লাব অ্যাবারডিন থেকে ১৮ বছর বয়সী রাইটব্যাক ক্যালভিন রামসেকেও কেনার প্রক্রিয়া অনেকটা এগিয়ে গেছে বলে শোনা যায়। মানে, সালাহ, ফিরমিনো, থিয়াগো, হেন্ডারসনদের নিয়ে কিছুটা বয়সের হিসাবে ভারী হয়ে ওঠা লিভারপুল তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়ে পালাবদলের গানই শোনাচ্ছে।