মেসির বিয়ে এবং...
সব পথ যেন মিলেছে রোজারিওতে। একে তো সময়ের সেরা দুই ফুটবলারের একজনের বিয়ে, তার ওপর সেই উপলক্ষে রোজারিওতে আসছেন ফুটবলের, শোবিজ-জগতের অনেক তারকা। বিয়েটা যে লিওনেল মেসির! যেটি এরই মধ্যে পেয়ে গেছে গত কয়েক দশকে দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিয়ের স্বীকৃতি।
আগামীকাল তাঁর ৩০তম জন্মদিন, তার ছয় দিন পর জন্মস্থান রোজারিওরই সিটি সেন্টারে ৩০ জুন দীর্ঘদিনের বান্ধবী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোর সঙ্গে বিয়ের বাঁধনে বাঁধা পড়তে যাচ্ছেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। আমন্ত্রিতদের তালিকায় আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের ছোটকালের বন্ধু যেমন আছেন, তেমনি আছেন বার্সেলোনার তারকা সতীর্থ-বন্ধুরাও। নেইমার, লুইস সুয়ারেজ, সেস্ক ফ্যাব্রিগাস...যেন তারকারাজি! সব গুঞ্জন মিথ্যা করে অনুষ্ঠানে আসবেন বলা কথা দিয়েছেন জেরার্ড পিকে ও তাঁর স্ত্রী কলম্বিয়ান পপতারকা শাকিরাও। শুধু রোজারিও কেন, পুরো বিশ্বই তো এই বিয়ে নিয়ে রোমাঞ্চিত।
মেসিরই বাল্যকালের বন্ধু ডিয়েগো ভায়েহসকেই দেখুন। কয়েক দিন ধরেই চিন্তায় যেন ঘুমই হচ্ছে না তাঁর। কী পরবেন বন্ধুর বিয়েতে, চুলের ছাঁটটাই বা কেমন হবে...কত ভাবনা! বিয়েতে যত সেলিব্রিটি আসবেন, তাঁদের পাশে মানাতে হবে না! ‘আমি আমার চুল বড় করছি, যাতে বিয়ের ঠিক আগে তারকাদের মতো করে একটা ছাঁট দিতে পারি’—পেশায় রেস্তোরাঁকর্মী ভায়েহস এএফপিকে বলছিলেনও নিজের ‘প্রস্তুতি’র কথা।
পুরো আর্জেন্টিনাই যেন মেসির বিয়ে নিয়ে উথালপাতাল। এই বিয়ের অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাকারী বারবারা দিয়েজও বেশ বিখ্যাত। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মরিসিও মাক্রির ঘনিষ্ঠ এক মিত্রের স্ত্রী তিনি। ফুটবল আর রাজনীতি যেখানে সমান্তরালে চলে, সেই আর্জেন্টিনায় ব্যাপারটা এমনই হওয়ার কথা! বিয়েতে গান গাইবেন মেসির ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও আর্জেন্টিনা দলের সতীর্থ সার্জিও আগুয়েরোর স্ত্রী কারিনা।
কেউ বলছেন এই বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথির সংখ্যা ৬০০, আবার আর্জেন্টাইন অনেক সংবাদমাধ্যমই বলছে, সংখ্যাটা ২৫০। তা কে কে থাকছেন? বিয়েতে বার্সেলোনার মূল দলের ২১ ফুটবলারকেই নিমন্ত্রণ করেছেন মেসি। আসছেন পুরোনো সতীর্থ জাভি হার্নান্দেজও। তবে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো থাকছেন না। নিমন্ত্রণ পাননি বার্সেলোনার কোনো কোচও। তবে বার্সেলোনার পুরো ব্যাকরুম স্টাফ, কিটম্যান, ডাক্তার, ফিজিওথেরাপিস্ট, ম্যাসিউর...সবাইকেই বিয়েতে নিমন্ত্রণ করেছেন মেসি।
উপহার চান না মেসি-রোকুজ্জো জুটি। তবে তাঁরা বলেছেন, কেউ যদি সত্যিই কিছু দিতে চান, সেটি যেন দান করেন ‘লিও মেসি ফাউন্ডেশনে’, যে ফাউন্ডেশন বিশ্বজুড়ে কাজ করে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়ালেখা, স্বাস্থ্য ও খেলাধুলা নিয়ে। তবে ভায়েহস অতসব নিয়মনীতি মানতেই রাজি নন, ‘ওসব তো ভিআইপিদের জন্য। আমি ওকে প্রতীকী কিছু দেব, সেটি একজোড়া কাফলিংকও হতে পারে।’
কিন্তু বিয়েটা রোজারিওতে কেন, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এটি যে আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বিপজ্জনক শহরগুলোর একটি। নিরাপত্তার ব্যাপারে কোনো ফাঁক রাখছে না নগর কর্তৃপক্ষ। নগরকেন্দ্রের একটি সূত্র এএফপিকে জানিয়েছে, ‘মেসি সব সময়ই শহরে এলে খুব স্বাভাবিকভাবেই ঘুরে বেড়ায়। তবে বিশ্বের অন্য অনেক ফুটবল তারকাও এবার রোজারিওতে আসছে, সেটির প্রভাবটা আমাদের দেখতে হবে।’ মেসির নিরাপত্তার দায়িত্ব অবশ্য থাকবে তাঁর নিজস্ব নিরাপত্তা দলের ওপর।
বিয়ের ভেন্যু হিসেবে রোজারিওকে বেছে নেওয়ায় অবশ্য একটুও আশ্চর্য নন মেসির সেই বন্ধু ভায়েহস, ‘ওরা বিয়ের অনুষ্ঠান এখানেই করছে, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কী আছে। ও সব সময়ই একই রকম। সাধারণ একজন মানুষ, যে তার পরিবার, বন্ধুদের কাছাকাছি থাকতে চায়। অর্থ ওকে একটুও বদলাতে পারেনি।’ অবশ্য বিয়ের অনুষ্ঠান সেখানেই করার পেছনে চাইলে রোমান্টিক কারণও খুঁজে নেওয়া যেতে পারে। মেসি ও রোকুজ্জোর প্রথম পরিচয়, প্রথম ভালো লাগা তো এখানেই, সেই ছোট্ট বয়সে। ছুটিতে প্রতিবছরই কয়েকবার রোজারিওতে যান মেসি-রোকুজ্জো। দুই ছেলে থিয়াগো ও মাতেওর ‘ব্যাপ্টাইজেশনও’ হয়েছে এখানে।
এমন দুর্দান্ত প্রেমগাথার সুন্দর পরিণতিতে রোমাঞ্চিত ভায়েহসও, ‘ওরা দুজন হচ্ছে দুজনেরই জীবনের একমাত্র প্রেম। বিয়ের ওই মুহূর্তটায় ওর পাশে থাকতে মুখিয়ে আছি আমি। ও অনেক বিনয়ী বলেই আমাকে নিমন্ত্রণ করেছে, যে কিনা সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা ওর সবচেয়ে পুরোনো বন্ধুদের একজন।’ এএফপি।