মালিকের সম্পদ জব্দ, চেলসির চ্যাম্পিয়নস লিগ-যাত্রা নিয়ে অনিশ্চয়তা
মালিকের নাম রোমান আব্রামোভিচ—এ তথ্যটা ছিল চেলসির শক্তির জায়গা। দলবদলের বাজারে চেলসিকে প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন আব্রামোভিচ। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বা লিভারপুলের মালিকপক্ষের মতো ক্লাবের ব্র্যান্ড ব্যবহার করে লাভ বের করা নয়, ক্লাবকে ফুটবল মাঠে শক্তিশালী দেখাটাই ছিল তাঁর মূল আগ্রহ। কিন্তু এখন আব্রামোভিচের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতাই কাল হয়ে উঠেছে চেলসির জন্য।
আগামী সপ্তাহে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোয় লিলের মুখোমুখি হবে চেলসি। নিজেদের মাঠের প্রথম লেগে ২-০ ব্যবধানে জিতেছে চেলসি। পরের লেগ প্রতিপক্ষের মাঠে। আর এতেই বিপদে পড়েছে তারা। কারণ, আজই আব্রামোভিচের সব সম্পদ জব্দ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্য। এ কারণে ক্লাবের ব্যয়ের একটা মাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। এই মাত্রা মেনে ফ্রান্সে গিয়ে খেলতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।
পুতিনের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য সরকার বিভিন্ন উপায়ে শাস্তির ব্যবস্থা করেছে। যুক্তরাজ্য সরকারের কোষাগারের আর্থিক শাস্তি বিভাগ আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতি দিয়ে সে শাস্তির কথা জানিয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন একটি বিবৃতি দিয়ে রুশ ধনকুবেরদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে চেলসি বিপাকে পড়ে গেছে। যুক্তরাজ্যের সংস্কৃতিসচিব নাদিন ডরিস বলেছেন, চেলসিকে ফুটবল-সংশ্লিষ্ট সব কাজের জন্য ‘বিশেষ লাইসেন্স’ দেওয়া হবে। আজ রাতে নরউইচের সঙ্গে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ নিয়ে তাই কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এখন থেকে ম্যাচের দিনের টিকিট বিক্রি করতে পারবে না চেলসি। শুধু যাঁরা পুরো মৌসুমের টিকিট কেটে রেখেছেন, তাঁরাই এখন চেলসির মাঠে যেতে পারবেন। আজ চেলসির ম্যাচ নরউইচের মাঠে বলে এর প্রভাব অন্তত আজ টের পাওয়া যাবে না।
এই নিষেধাজ্ঞা প্রাথমিকভাবে অতটা ধাক্কা দেবে না চেলসিকে। কিন্তু আর্থিকভাবে পাওয়া অন্যান্য নিষেধাজ্ঞাই ঝামেলা বাড়াচ্ছে চেলসির। নিষেধাজ্ঞার ফলে ম্যাচের টিকিট যেমন বিক্রি করতে পারবে না, তেমনি অন্যান্য পণ্য, যেমন স্কার্ফ, জার্সিও বিক্রি করতে পারবে না। খেলোয়াড়দের সঙ্গে চুক্তি নবায়নে যেতে পারবে না। তবে কোনো ক্লাবের কাছে দেনা থাকলে সেটা পরিশোধ করতে পারবে। আয় করতে পারলেও সে অর্থ জব্দ অবস্থায় থাকবে। ম্যাচ আয়োজন করায় সর্বোচ্চ ৫ লাখ পাউন্ডের সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
তবে চেলসিকে সবচেয়ে বড় ধাক্কা দিচ্ছে ভ্রমণের ওপর দেওয়া শর্ত। এখন প্রতিপক্ষের মাঠে খেলতে গেলে ভ্রমণের জন্য সর্বোচ্চ ২০ হাজার পাউন্ড খরচ করতে পারবে ‘ব্লুজ’রা। টেলিগ্রাফের প্রধান ফুটবল প্রতিবেদক স্যাম ওয়ালেস টুইট করেছেন, ‘“রাশিয়া শর্ত” লাইসেন্সে প্রতিপক্ষের মাঠে ভ্রমণে ২০ হাজার পাউন্ডের বেশি খরচ করতে পারবে না চেলসি। ফলে আগামী বুধবার লিলের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচের যাতায়াত নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।’
সাধারণত চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচ খেলার জন্য চেলসির খেলোয়াড় ও স্টাফরা ভাড়া করা বিমানে যেতেন এবং ম্যাচের আগে-পরে পাঁচ তারকা বিলাসবহুল হোটেল থাকতেন। এখন থেকে আর সেটা সম্ভব হবে না। কারণ, শুধু প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলতে অর্থাৎ যুক্তরাজ্যের মধ্যে মাত্র এক দিনে ম্যাচ খেলে ফিরে আসতেই নাকি এর চেয়ে বেশি খরচ হয়।
এই সীমা কেন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, সেটা বোঝা যায় খেলোয়াড় দেখভাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা হুগো শেখতারের টুইটে, ‘ব্যাপারটা বুঝতে হলে, একটা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে প্রতিপক্ষের মাঠে খেলতে গেলে ফ্লাইট, নিরাপত্তা, খাবার, হোটেলভাড়া সব মিলিয়ে ৩০ হাজার পাউন্ড খরচ করে। আর, এখন দেশের বাইরে, তারা কীভাবে এসব করবে বুঝছি না। যদি তারা বাণিজ্যিক ফ্লাইটে চড়ে কিংবা নিজেদের বাসে যায় এবং হোটেলের মান কমায়, তাহলে হয়তো সম্ভব। অনেক বড় প্রভাব ফেলবে।’
চেলসির জন্য কাজটা কত কঠিন হবে, সেটা বোঝাতে আরেকটি তথ্যও দিয়েছেন ভিন্ন টুইটে, ‘৩০ হাজার পাউন্ডও অনেক কম ধরে’। অর্থাৎ নিজেদের মান বজায় রেখে এখন আর ফ্রান্সে যেতে পারবে না চেলসি। এসব ক্ষেত্রে খেলায় প্রভাব পড়েই। ২০১০ সালে প্রাকৃতিক কারণে বাসে চড়ে ইতালিতে গিয়েছিল বার্সেলোনা। ভ্রমণক্লান্তির কারণে জোসে মরিনিওর ইন্টার মিলানের কাছে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ৩-১ গোলে হেরেছিল বার্সেলোনার সর্বকালের সেরা দল।