মা–ভক্ত বেলিংহাম ১৮ বছর বয়সেই ডর্টমুন্ডের ‘নেতা’
জুড বেলিংহাম যেখানেই যান, সেখানেই রেকর্ড বইয়ে তাঁর নাম ওঠে। ১৮ বছর বয়সী মিডফিল্ডারের সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে রেকর্ড ভাঙা-গড়া যেন অভ্যাস!
১৬ বছর ৩৮ দিন বয়সে বার্মিংহাম সিটির সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে মূল দলে অভিষিক্ত হন জুড বেলিংহাম। গত বছর তাঁকে দলে ভেড়ায় বরুসিয়া ডর্টমুন্ড।
জার্মান ক্লাবটির হয়ে প্রথম প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচেই পেলেন গোলের দেখা। ১৭ বছর ৭৭ দিন—ডর্টমুন্ডের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে গোলের রেকর্ড। ইংল্যান্ডের জাতীয় দলেও অভ্যাসটা পাল্টায়নি।
ওয়েন রুনি ও থিও ওয়ালকটের পর ইংল্যান্ডের তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভিষিক্ত হন ১৭ বছর ১৩৬ বয়সে। সে যা–ই হোক, আগামী জুনে ১৯ বছরে পা রাখতে যাওয়া বেলিংহাম এরই মধ্যে মাঠে ডর্টমুন্ডের হাল ধরাদের একজন হয়ে উঠেছেন। অথচ মাঠে ‘নেতা’ হয়ে উঠলেও এই ছেলেই আবার মাঠের বাইরে মাকে ছাড়া একমুহূর্ত থাকতে পারেন না! মাকে নিয়েই বসবাস করছেন নিজের ফ্ল্যাটে। ছেলেকে নিয়ে মা ডেনিস বেলিংহামেরও চিন্তার শেষ নেই। মাঠে ছেলে খেলার সময় মা গ্যালারি কিংবা বাসায় বসেও দুশ্চিন্তা করেন। বাবা–মায়েরা আসলে এমনই হন।
জার্মান ফুটবলে এ নিয়ে দুই মৌসুম হলো খেলছেন বেলিংহাম। কিন্তু মঙ্গলবার চ্যাম্পিয়নস লিগে স্পোর্তিং লিসবনের বিপক্ষে ম্যাচে ডর্টমুন্ডের একাদশে সম্ভাব্য খেলোয়াড়দের মধ্যে বেলিংহামের নাম উঠে আসবে অনেকের আগে। ডর্টমুন্ড তারকা ম্যাটস হুমেলসের ভাষায়, ‘সে আমার দেখা সবচেয়ে পরিণত ১৮ বছর বয়সী ছোকরা। জুড ইতিমধ্যেই আমাদের একজন নেতা হয়ে উঠেছে। সে অসাধারণ ফুটবলার। নিজের পথ নিজেই তৈরি করে নেবে।’
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বেলিংহামের এই ‘পথ’ নিয়েই বেশি আগ্রহী। ডর্টমুন্ডে তাঁর বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ফুরাবে ২০২৫ সালে। এই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারকে কিনতে আগ্রহী লিভারপুল। ডর্টমুন্ড তাঁকে এই দুই মৌসুমেই সম্ভাব্য তারকা হিসেবে গড়ে তুলেছে। গত নভেম্বরে তাঁকে আন্তর্জাতিক ময়দানে অভিষিক্ত করতে কার্পণ্য করেননি ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেট।
বার্মিংহাম সিটি থেকে ২৩ মিলিয়ন ইউরোয় বেলিংহামকে কিনেছিল ডর্টমুন্ড। তখনকার ১৭ বছর বয়সী বেলিংহাম এরই মধ্যে বুন্দেসলিগার অন্যতম সেরা সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
অনলাইনে এক কলামে লিভারপুলের সাবেক উইঙ্গার স্টিভ ম্যাকম্যানামান তাঁকে নিয়ে লিখেছেন, ‘আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই তাকে প্রিমিয়ার লিগে দেখা যাবে বলে আমি নিশ্চিত। এক বছর আগে ডর্টমুন্ড যে দামে তাকে কিনেছে, (প্রিমিয়ার লিগে) তখন তার দাম তিন গুণ হবে বলেই বিশ্বাস।’
বেসিকতাসের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বশেষ ম্যাচটা ২-১ গোলে জেতে ডর্টমুন্ড। সে ম্যাচে দারুণ এক গোল করার পাশাপাশি হরলান্ডকে দিয়েও গোল করান বেলিংহাম। তাঁকে নিয়ে হরলান্ডও বেশ উচ্ছ্বসিত, ‘সে আমার চেয়ে তিন বছরের ছোট, মাত্র ১৮ বছর বয়স। কিন্তু এই বয়সেই সে দুর্দান্ত।’
তবে বেলিংহামের এখনো অনেক কিছু শেখার আছে। বুন্দেসলিগায় শনিবার বরুসিয়া মনশেনগ্লাডবাখের বিপক্ষে ১-০ গোলে হারে ডর্টমুন্ড, সে ম্যাচে মনশেনগ্লাডবাখের বিপক্ষে একটি বল দখলে একটু দেরি করায় সে সুযোগ নেন প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড় ডেনিস জাকারিয়া।
মাঠের বাইরে বেলিংহাম অবশ্য আর দশজন সাধারণ কিশোরের মতোই। ডর্টমুন্ডে চার বছরের ক্যারিয়ারে সময়ের হিসাব রাখতে পারেননি সানচো। অনুশীলনে বেশির ভাগ সময়ই সময়মতো আসতে পারতেন না। বেলিংহামের এমন হওয়ার সুযোগ নেই।
তাঁর মা এসবের দেখভাল করেন। বাবা ও ছোট ভাই ইংল্যান্ডে, কিন্তু বেলিংহামকে দেখাশোনা করতে তার মা তাঁর সঙ্গেই থাকেন। করোনার এ সময়ে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে তেমন দেখা হয়নি বেলিংহামের। তবে মাকে কাছে পেয়ে বেলিংহাম ‘যারপরনাই কৃতজ্ঞ’।