বাবাকে বাংলাদেশ ম্যাচের টিকিট দেন 'ইংলিশ' ফুটবলার হামজা
>ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের নিয়মিত মুখ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার হামজা চৌধুরী। এবার জায়গা করে নিয়েছেন ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলে। ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে তিনি এখন ইতালিতে। সেখান থেকে নিয়মিত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খোঁজ খবর রাখছেন হামজা।
ইতালিতে চলছে অনূর্ধ্ব-২১ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ। ইউরোপের সেরা দলগুলোর লড়াই মানেই উত্তেজনায় ঠাসা। কে কাকে ছাপিয়ে ভবিষ্যৎ তারকা হয়ে উঠবে, মাঠে খেলোয়াড়দের বুটের ঘর্ষণে বোঝা যায় সেই তীব্র লড়াইয়ের ঝাঁজ। যুবাদের ইউরোপ সেরা টুর্নামেন্টের মাঝেও একজন খেলোয়াড়ের মগজে ঘুরে বেড়িয়েছে বাংলাদেশের নাম। অবাক হওয়ার মতোই কথা! ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে খেলছে এমন খেলোয়াড়ের সঙ্গে তো বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক থাকার কথা নয়। আছে! আছে বলেই ইতালিতে ইউরো টুর্নামেন্টের মাঝেও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খোঁজ খবর নিয়েছেন। তিনি ইংল্যান্ড দলের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী।
হামজার নাম উঠলেই বাংলাদেশের ফুটবল-প্রেমীদের দীর্ঘশ্বাস ওঠে যায়। ইশ্, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ছেলেটা যদি বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে হয়ে খেলতেন! ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব লেস্টার সিটির জার্সিতে নিয়মিত খেলেন মিডফিল্ডার হামজা। দুর্দান্ত পারফরমেন্স করে জায়গা করে নিয়েছেন ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব ২১ দলে। ঝাঁকড়া চুলের হামজা এখন ইংলিশ যুব দলের প্রাণভোমরা। ৪-৩-৩ ফরমেশনে হোল্ডিং মিডফিল্ডার পজিশনে খেলে থাকেন। যুব দলে ভালো খেললে সিনিয়র জাতীয় দলের কোচ সাউথগেটের নজরে আসার সুযোগ। ইংল্যান্ড দলে খেলার সুযোগ থাকলে আর বাংলাদেশ ফুটবল দল কেন? অন্তত হামজার জীবদ্দশায় বাংলাদেশ ফুটবল দলের বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনাই নেই যেখানে!
তবে বাংলাদেশ ঠিকই বিশ্বকাপ খেলে। সেটা ক্রিকেট বিশ্বকাপ। আর এই ক্রিকেট নিয়ে বাবার পাগলামি হামজা জানেন। এ কারণে নিজের দেশ ইংল্যান্ডে ক্রিকেট বিশ্বকাপ চলছে বলে বাবা দিবসের উপহার হিসেবে বাবাকে দিয়েছিলেন বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের টিকিট। গতকাল ইংল্যান্ড থেকে প্রথম আলোকে তথ্যটি দিলেন স্বয়ং হামজার বাবা গোলাম মোর্শেদ চৌধুরী, ‘ছেলে তো আমাকে চমকে দিয়েছে। বাবা দিবসে ইতালি থেকে আমাকে ফোন দিয়ে বলল, বাবা তোমার জন্য আমার একটা উপহার আছে। এই বলে অনলাইনে কেনা বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট ম্যাচের টিকিট পাঠাল। সেই টিকিটে নটিংহামে বসে বাংলাদেশ দলের খেলাও দেখেছি।’
মুশফিকুর রহিমের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়াই করে হেরেছিল বাংলাদেশ। অনলাইনে খুঁটিনাটি তথ্য পাওয়া গেলেও ইতালিতে বসে খেলা দেখার সৌভাগ্য হয়নি হামজার। তাই মুশফিকের সেঞ্চুরির আমেজটাও তাঁর বোঝার কথা নয়। রাতেই ইতালি থেকে বাবাকে ফোন। সেই গল্পগুলো প্রথম আলোকে শোনালেন হামজার বাবা, ‘ওই ম্যাচের দিন রাতেই ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা কেমন খেলা দেখলাম। বাংলাদেশ কেমন খেলল, কে ভালো খেলছে। এ ছাড়া এর আগে বা পরে যখনই ফোন করে, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কথা জিজ্ঞেস করে। বাংলাদেশের যেকোনো বিষয় নিয়েই ওর প্রচুর আগ্রহ প্রচুর।’
১৯ জুন বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের পরের দিন ফ্রান্সের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে অনূর্ধ্ব ২১ ইউরোর মিশন শুরু করে ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ড ১-০ গোলে এগিয়ে থাকা অবস্থায় ৬৩ মিনিটে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন হামজা। বাকি সময় ১০ খেলোয়াড় নিয়ে কুলিয়ে উঠতে না পারাই শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলে হেরে মাঠ ছাড়ে ইংল্যান্ড। লাল কার্ডের খড়্গে রোমানিয়ার বিপক্ষে পরের ম্যাচেও খেলা হয়নি। ৪-২ গোলে হেরে বিদায় ঘণ্টা বেজে যায় ইংলিশদের। আর গতকাল নিয়মরক্ষার শেষ ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে ৩-৩ গোলের ড্র। মন্দের ভালো দিক হলো, এবার চাইলে বাবাকে নিয়ে মাঠে বসে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলা দেখতে পারবেন। বাংলাদেশের পরের দুটি ম্যাচ নিয়েই যে উত্তাপ ছড়াবে!
ইংল্যান্ডে জন্ম নিলেও ছয় মাস বয়স থেকে মায়ের সঙ্গে হামজার বাংলাদেশে যাতায়াত শুরু। সর্বশেষ বাংলাদেশে এসেছিলেন ২০১৫ সালে। বাংলাদেশে হামজাদের বাড়ি হবিগঞ্জের বাহুবল থানার স্নানঘাট গ্রামে। সেই সুবাদে অসংখ্যবার বাংলাদেশে আসা হয়েছে তাঁর। সংখ্যাটা ২০ বারের কম নয়।