বাঙ্গুরার মৃদুস্বর, উচ্চকণ্ঠ মামুনুল

নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী লিগে সর্বোচ্চ সাফল্যই চান চার অধিনায়ক। বাঁ থেকে বিজেএমসির আরিফুজ্জামান হিমেল, ফেনী সকারের আকবর হোসেন রিদন, চট্টগ্রাম আবাহনীর মামুনুল ইসলাম ও মোহামেডানের ইসমাইল বাঙ্গুরা। কাল বাফুফে ভবনে l প্রথম আলো
নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী লিগে সর্বোচ্চ সাফল্যই চান চার অধিনায়ক। বাঁ থেকে বিজেএমসির আরিফুজ্জামান হিমেল, ফেনী সকারের আকবর হোসেন রিদন, চট্টগ্রাম আবাহনীর মামুনুল ইসলাম ও মোহামেডানের ইসমাইল বাঙ্গুরা। কাল বাফুফে ভবনে l প্রথম আলো

ইসমাইল বাঙ্গুরা মৃদুস্বরে বললেন, ‘আশা করি, আমরা ভালো কিছু করতে পারব।’ মোহামেডান অধিনায়কের মুখে কথাটা শুনে সমর্থকেরা একটু নড়েচড়ে বসতে পারেন। কিন্তু সাবধান শিরোপা জয়ের স্বপ্ন আবার কেউ দেখে ফেলবেন না! গত আটটি পেশাদার লিগে শিরোপাহীন ঐতিহ্যবাহী দলটির সম্ভাবনা এবারও কম।

বাস্তবতা মেনে তাই কোচ কাজী জোসিমউদ্দিন জোসি সেরা তিনে থাকার একটা লক্ষ্য দাঁড় করিয়েছেন। কিন্তু এটি অর্জনও সম্ভব কি না সংশয় থাকছেই। এসব নিয়ে কাল বাফুফে ভবনে সংবাদ সম্মেলনে নানা তির্যক প্রশ্ন উঠল। মোহামেডান কর্মকর্তা আবদুর রব মাহবুবের কণ্ঠে থাকল ঘুরে দাঁড়ানোর গান। কিন্তু তা বেসুরো লাগল।

পেশাদার লিগ–পূর্ব দলগুলোর ধারাবাহিক সংবাদ সম্মেলন পর্বে কাল চার দলের মধ্যে মোহামেডান অংশটা সব ছাপিয়ে একপর্যায়ে হয়ে ওঠে অম্লমধুর। নানা সংকটে ক্ষয়িষ্ণু মোহামেডানের কোচ-কর্মকর্তারা নিরাপদ দূরত্বে হাঁটেন। জোর গলায় কেউ বলতে পারেন না, ‘আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে চাই।’

তবে এই বাক্যটা জোর দিয়ে উচ্চারণ করলেন চট্টগ্রাম আবাহনীর অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম। চট্টগ্রামের দলটির গায়ে এবার বড় দলের তকমা। মৌসুম সূচক স্বাধীনতা কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দিয়েছে সামর্থ্যের প্রমাণ। যদিও পরের টুর্নামেন্ট ফেডারেশন কাপের গ্রুপ পর্বেই বিদায় হয়েছে। সেই হতাশার আবরণ সরিয়ে লিগে নতুনভাবে দেখা দেওয়ার অঙ্গীকারই করলেন মামুনুল, ‘ফেডারেশন কাপের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা আমরা নেব।’

সেই শিক্ষা নিতে পারলে এবার ঢাকা আবাহনী ও শেখ রাসেলের সঙ্গে শিরোপার বড় দাবিদার হয়ে উঠবে তারাই। কথাটা আগে অনেকবারই বলেছেন মামুনুলদের স্লোভাক কোচ যোসেফ পাভলিক, চট্টগ্রামে দলের সঙ্গে থাকায় যিনি এই সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন না। ম্যানেজার শাকিল মাহমুদ চৌধুরী কোচের হয়ে যেন প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেন বারবার।

চট্টগ্রাম আবাহনী আত্মবিশ্বাস নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা বলতে পারছে, ফেনী সকার বা বিজেএমসি নিশ্চয়ই তা নয়। অনেক সময় চমক দেওয়ার কথা বলে মাঝারি বা ছোট দলগুলো। কিন্তু সকার বা বিজেএমসি কোনো দলই খুব জোর দিয়ে কিছু বলতে পারেনি। বরং কোচ-অধিনায়কের কথায় আছে বিভ্রান্তি। সকারের কোচ লাডিবাবা লোলা যেমন ‘আমরা চমক দিতে চাই’ বলার পর অধিনায়ক আকবর হোসেন রিদনের গলায় পাওয়া গেল অন্য সুর, ‘আমরা পাঁচ-ছয়ে থাকার চেষ্টা করব।’

সকার টানা সপ্তম পেশাদার লিগে খেলতে চলেছে, তবে সাংগঠনিকভাবে দলটির উন্নতি চোখে পড়ছে না। কমলাপুর স্টেডিয়ামে যেনতেনভাবে থাকা-খাওয়া নিয়ে সমালোচনা আছে অনেক। যদিও দলটির ম্যানেজার শাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া দাবি করলেন, কিছু সমস্যা থাকলেও তা বলার মতো কিছু নয়।

বিজেএমসির ক্যাম্প চলছে ডেমরা করিম জুট মিলের ভেতর। তবে এই দলটির শক্তিও সীমিত, কোচ সাইদুল ইসলামের তাই উচ্চাশা নেই। গতবারের চেয়ে একটু ওপরে থাকতে পারলে নিজেদের সফল ভাববেন বলে জানিয়ে দেন পরিষ্কার। অধিনায়ক আরিফুজ্জামান হিমেলের ভাবনাও ব্যতিক্রম নয়। একই সঙ্গে ঢাকার বাইরে ঘুরে ঘুরে খেলার সম্ভাব্য ধকল নিয়েও সতর্কবার্তা দিলেন এই গোলরক্ষক। বলতে ভোলেননি, ঢাকার বাইরে মানিয়ে নেওয়ার ওপর নির্ভর করবে অনেক কিছুই।

অর্জন

বড় দল হিসেবে অর্জনের খাতাটা শূন্য। শিরোপা আসেনি কখনো। প্রথম তিনবার রানার্সআপ, পরের পাঁচ লিগে আর সেরা দুইয়েও আসতে পারেনি। দুবার তৃতীয়, একবার ষষ্ঠ।

এবার চাওয়া

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দল হয়নি বলে সেরা তিনে থাকতে পারাই গণ্য হবে সাফল্য!

চট্টগ্রাম আবাহনী

অর্জন

ছয়টি লিগে খেলে দুবার অষ্টম। নবম, দশম, একাদশতম এবং সর্বশেষ বারোতমও স্থানও জুটেছে। একবার অবনমিত হয়ে দুই মৌসুম পর ফিরে এসে গত দুটি লিগে টানা খেলেছে।

এবার চাওয়া

মৌসুমের প্রথম টুর্নামেন্ট স্বাধীনতা কাপ জিতে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাওয়া দলটির লক্ষ্য শিরোপা জয়।

বিজেএমসি

অর্জন

গত চারটি লিগে খেলে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে মাঝারি শক্তির দল হিসেবে। প্রথম দুবার চতুর্থ হলেও পরের দুবার হয়েছে সপ্তম।

এবার চাওয়া

গতবারের সপ্তম স্থান থেকে এবার আরেকটু ওপরে ওঠা। প্রথম চার-পাঁচে থাকাই হবে বড় সাফল্য। 

ফেনী সকার

অর্জন

তৃতীয় লিগে অভিষেকের পর টানা ছয়টি লিগে টিকে থাকাই বড় প্রাপ্তি। প্রথমবার চতুর্থ, তিনবার নবম, একবার করে সপ্তম ও অষ্টম।

এবার চাওয়া

ছয়টি লিগে টানা খেলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পয়েন্ট তালিকার পাঁচ-ছয়ে থাকাই মূল লক্ষ্য।