নেইমারহীন পিএসজিকে বাঁচালেন মেসি
নেইমার ছিলেন না। তো কী হয়েছে? মেসি তো ছিলেন! ছিলেন এমবাপ্পেও। তাতেই চ্যাম্পিয়নস লিগে জার্মান ক্লাব আর বি লাইপজিগকে নিজেদের মাঠে ৩-২ গোলে হারিয়ে গ্রুপে নিজেদের শীর্ষস্থান নিশ্চিত করেছে পিএসজি। জোড়া গোল করেছেন লিওনেল মেসি। একটি গোল করেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে।
তাতেই যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে লাইপজিগের। দুই গোল করে পিএসজিকে চোখ রাঙালেও কোনো পয়েন্ট কপালে জোটেনি তাঁদের।
এই নিয়ে ক্যারিয়ারে ৩৪তম বারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগে জোড়া বা তার চেয়ে বেশি গোল করলেন মেসি। পিএসজির হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে করলেন প্রথমবারের মতো।
এই ম্যাচে ৪-৩-৩ ছকে সেজেছিল পিএসজি। মেসি আর এমবাপ্পের সঙ্গে আক্রমণভাগে সঙ্গী হয়েছিলেন জার্মান উইঙ্গার ইউলিয়ান ড্রাক্সলার। মাঝমাঠে ইদ্রিসা গে-কে মাঝে রেখে দুপাশে খেলেছেন ইতালিয়ান তারকা মার্কো ভেরাত্তি ও স্প্যানিশ মিডফিল্ডার আন্দের এরেরা। ওদিকে রক্ষণভাগ সামলেছেন আশরাফ হাকিমি, অধিনায়ক মার্কিনিওস, প্রেসনেল কিমপেম্বে ও নুনো মেন্দেস। গোলবারের নিচে জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা নন, বরং ছিলেন কেয়লর নাভাস। দোন্নারুম্মার সঙ্গে বেঞ্চে ছিলেন ভাইনালডম, দিয়ালো, কেহরের, দানিলো পেরেইরার মতো তারকারা।
শুরু থেকেই মেসিদের চেপে ধরে লাইপজিগ। মাত্র দুই মিনিটে অস্ট্রিয়ান মিডফিল্ডার কনরাড লাইমারের এক শট সেভ করেন নাভাস। ছয় মিনিটে পর্তুগিজ স্ট্রাইকার আন্দ্রে সিলভার হেড সেভ করতে আবারও এগিয়ে আসতে হয় নাভাসকে। ততক্ষণে প্যারিস সমর্থকদের মনে সন্দেহ, রাতটা ভালোয় ভালোয় কাটবে তো?
ভালোয় ভালোয় যে কাটবে, সেটার প্রথম নিশ্চয়তা দিলেন এমবাপ্পে। দুর্দান্ত এক প্রতি আক্রমণে নয় মিনিটেই দলকে এগিয়ে দিলেন। পিছিয়ে পড়েও আশা হারায়নি লাইপজিগ। ২৭ মিনিটেই আন্দ্রে সিলভার একটা দুর্দান্ত শট পোস্টে লাগে। এক মিনিট পরেই গোলের দেখা পেয়ে যান এই স্ট্রাইকার। স্প্যানিশ লেফটব্যাক আনহেলিনোর দুর্দান্ত এক মাটি ঘেঁষা ক্রসে পা ঠেকিয়ে দলকে সমতায় ফেরান সিলভা। ৪২ মিনিটে ফরাসি মিডফিল্ডার ক্রিস্টোফার এনকুনকুর এক শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৪৯ মিনিটেও গোল করার সুযোগ পেয়েছিলেন এনকুনকু। কিন্তু তাঁর ফ্রি-কিক লক্ষ্যে পৌঁছায়নি।
পিএসজিকে ক্রমাগত চাপে রাখার ফসল ৫৭ মিনিটে ঘরে তোলে লাইপজিগ। দলের হয়ে দ্বিতীয় গোল করেন ফরাসি রাইটব্যাক নর্দি মুকিয়েলে, এই গোলের কারিগরও আনহেলিনো।
পিছিয়ে পড়েই কি না, গা ঝাড়া দিয়ে উঠল পিএসজি। নির্দিষ্ট করে বললে, গা ঝাড়া দিয়ে উঠল মেসি-এমবাপ্পে জুটি। ৬৭ মিনিটে এমবাপ্পের সহায়তায় নিজের প্রথম গোল পেয়ে যান মেসি। শটটা হয়তো আটকাতেও পারতেন লাইপজিগের গোলকিপার পিটার গুলাকচি। তাঁর হাতে গেলে পোস্টে লাগে বল, গোল হয়েছে এটা পুরোপুরি নিশ্চিত করার জন্য মেসিকেই এগিয়ে গিয়ে আবারও পা ছোঁয়ানো লাগে।
সাত মিনিট পর আবারও মেসি-এমবাপ্পে ঝলক। বক্সে বিপজ্জনকভাবে ঢুকে যাওয়া এমবাপ্পেকে বাজেভাবে ফাউল করে বসেন লাইপজিগের ফরাসি সেন্টারব্যাক মোহাম্মদ সিমাকান। সেখান থেকে পেনাল্টি পায় পিএসজি। কিন্তু নিজে না নিয়ে এমবাপ্পে পেনাল্টি নিতে বলেন মেসিকে। দুর্দান্ত পানেনকা শটে দলকে এগিয়ে দেন মেসি। ম্যাচের একদম শেষ মূহুর্তে পিএসজি আরেকটা পেনাল্টি পেলে সেটা অবশ্য মেসি নেননি। হ্যাটট্রিক করার সুযোগ থাকলেও নিঃস্বার্থভাবে এমবাপ্পেকে পেনাল্টিটা দিয়ে দেন। কিন্তু সেখান থেকে গোল করতে ব্যর্থ হয়েছেন এমবাপ্পে। কিন্তু তাতে কী? ম্যাচ সেরা যে এমবাপ্পেই হয়েছেন!
গ্রুপ ‘এ’ তে সাত পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে আছে পিএসজি। এক পয়েন্ট কম নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে ম্যানচেস্টার সিটি। চার পয়েন্ট নিয়ে ক্লাব ব্রুগা আছে তৃতীয় স্থানে। ওদিকে দুর্দান্ত খেলেও এখনও পয়েন্টের খাতা খুলতে পারেনি লাইপজিগ।