নিলামে ওঠা জার্সিটি ‘হ্যান্ড অব গড’–এর নয়
খেলোয়াড়ি জীবনে তাঁকে ঘিরে বিতর্ক ছিল। খেলোয়াড়ি জীবন শেষেও ডিয়েগো ম্যারাডোনার সঙ্গী ছিল বিতর্ক। এখন আর তিনি নেই। ম্যারাডোনা অন্যলোকে, প্রায় দেড় বছর হয়ে গেছে। এখনো কি বিতর্ক পিছু ছেড়েছে ম্যারাডোনার! এবার বিতর্ক তৈরি হয়েছে ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর ‘হ্যান্ড অব গড’ গোলের জার্সি নিয়ে।
অনেক দিন আগেই সেই ম্যাচে খেলা ইংল্যান্ডের স্টিভ হজ দাবি করেছিলেন, ম্যাচ শেষে ম্যারাডোনা তাঁর সঙ্গে জার্সি বিনিময় করেছেন। মেক্সিকো সিটিতে কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠে আর্জেন্টিনা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে জোড়া গোল করেছিলেন ম্যারাডোনা।
যার প্রথমটি তিনি করেছিলেন ‘হেডে’। কিন্তু ম্যারাডোনা গোলটি করেছিলেন আসলে হাত দিয়ে। সেটাকে কিংবদন্তি আখ্যা দিয়েছিলেন, হ্যান্ড অব গড! সেই থেকে ওই গোলের নাম হয়ে যায় ‘হ্যান্ড অব গড’ গোল। সেই ম্যাচে ম্যারাডোনার দ্বিতীয় গোলটি তর্ক সাপেক্ষে বিশ্বকাপের ইতিহাসেরই সেরা গোল।
স্টিভ হজের দাবি, ম্যাচ শেষে টানেল দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে জার্সি বদল করেছেন ম্যারাডোনা। সেই জার্সি এখন নিলামে তুলছেন ইংল্যান্ডের সাবেক মিডফিল্ডার। নিলামকারী প্রতিষ্ঠান সথবি আশা করছে, ম্যারাডোনার হ্যান্ড অব গড জার্সিটি ৫২ লাখ ডলারের বেশি দামে বিক্রি হবে। জার্সিটি নিয়ে যখন এমন আলোচনা চলছে, একটি বিতর্ক তৈরি করলেন ম্যারাডোনার বড় মেয়ে দালমা। তাঁর দাবি, যে জার্সি নিলামে তোলা হচ্ছে, সেটি ওই দুই গোলের সময় পরা জার্সি নয়।
সথবি অবশ্য দালমার দাবি উড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের কথা, এটাই সেই জার্সি কি না, তা বিভিন্ন পদ্ধতিতে যাচাই করে নেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এ-ও বলেছে, বেঁচে থাকা অবস্থায় ম্যারাডোনাও বলে গেছেন যে তিনি ওই ম্যাচে হজের সঙ্গে জার্সি বদল করেছেন। দালমার দাবি, তাঁর বাবা দ্বিতীয়ার্ধে যে জার্সি পরে খেলেছেন, সেটি অন্য একজনের কাছে আছে। কিন্তু তিনি সেই মালিকের নাম প্রকাশ করেননি।
সাংবাদিকদের দালমা বলেছেন, ‘এটা সেই জার্সি নয়। আমি বলতে চাইছি না যে সেই জার্সি কার কাছে আছে। কারণ, বিষয়টা একটু পাগলাটে। তিনি (ম্যারাডোনা) এটা বলে গেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি তাকে কীভাবে আমার জীবনের সেরা জার্সিটা দিতে পারি?” সাবেক ওই খেলোয়াড় (হজ) হয়তো ভাবছেন, তিনি আমার বাবার দ্বিতীয়ার্ধে পরা জার্সিটা পেয়েছেন। কিন্তু পুরো বিষয়টি গুলিয়ে গেছে। তিনি বাবার প্রথমার্ধে পরা জার্সিটা পেয়েছেন।’ দালমা এরপর চ্যানেল ১৩ টেলিভিশনে বলেছেন, ‘আমরা বিষয়টি পরিষ্কার করতে চেয়েছি। কারণ, যারা জার্সিটা কিনতে চায়, তাদের সত্যটা জানা থাকা উচিত।’
দালমার এমন দাবির প্রেক্ষাপটে সথবির এক মুখপাত্র সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘এটা ঠিক যে ম্যারাডোনা প্রথমার্ধে ভিন্ন আরেকটি জার্সি পরেছিল। কিন্তু তিনি গোলের সময় যে জার্সি পরেছিলেন, সেটির সঙ্গে প্রথমার্ধের জার্সির পরিষ্কার পার্থক্য আছে।’ এরপর তিনি যোগ করেন, ‘জার্সিটি বিক্রির জন্য নিলামে তোলার আগে আমরা এটাই সেই জার্সি কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য বৈজ্ঞানিক গবেষণা করেছি।’ এ ছাড়া বাইরের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যে জার্সিটির ফটো ম্যাচিংও করানো হয়েছে বলে দাবি করেছে সথবি।
সথবি কর্তৃপক্ষ সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছে, ‘টাচড বাই গড’ বইয়ে ম্যারাডোনা তাঁর সেই জার্সি হজকে দিয়ে যাওয়া কথা বলেছেন। আর ২০১৬ সালে ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয়ের স্মৃতিচারণায় ম্যারাডোনা লিখেছিলেন, ‘লকার রুমে যাওয়ার সময় ইংল্যান্ড দলের একজন আমার সঙ্গে জার্সি বদল করতে চেয়েছিল। সে কে, সেই সময় আমি নিশ্চিত হতে পারিনি। হয়তো হজই হবে। আমি তার সঙ্গে জার্সি বদল করতে রাজি হয়েছিলাম।’
২০১০ সালে হজ তাঁর আত্মজীবনী ‘দ্য ম্যান উইথ ম্যারাডোনাস শার্ট’ বইয়েও একই কথা লিখেছেন, ‘ম্যারাডোনা তার দুজন সতীর্থের সঙ্গে হেঁটে যাচ্ছিল। আমি তার চোখে চোখ রাখি। আমার জার্সিটা খুলতে খুলতে বলেছিলাম, “বিনিময় করা যায়?” সে এগিয়ে এল, প্রার্থনার মতো কিছু একটা করল এবং জার্সিটা আমার সঙ্গে বিনিময় করল।’
এমন বিতর্ক ২০১৮ সালে একবার উঠেছিল জিনেদিন জিদানের জার্সি নিয়ে। ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জেতা ফ্রান্স দলের সদস্য জিদানের ফাইনালের জার্সিটি নিলামে তোলা হয়েছিল। কিন্তু সেটি সত্যিই সেই জার্সি কি না, এমন বিতর্ক ওঠার পর নিলাম বন্ধ করে দেওয়া হয়। ম্যারাডোনার হ্যান্ড অব গড জার্সি নিয়ে সবকিছু ঠিক থাকলে এপ্রিলের ২০ তারিখে তোলা হবে নিলামে। ৪ মে পর্যন্ত চলবে সেই অনলাইন নিলাম।